বাংলা হান্ট ডেস্ক: চিনের (China) অর্থনীতি গত পাঁচটি ত্রৈমাসিকে অত্যন্ত খারাপ ফলাফল প্রদর্শন করেছে। ঠিক এই আবহেই ফের একটি “দুঃসংবাদ” সামনে এসেছে। এই প্রসঙ্গে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, অর্থনৈতিক মন্দার সঙ্গে লড়াই করা দেশটি এই মাসে সবচেয়ে কম গ্রোথ রেট পরিলক্ষিত করেছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ হল, উপভোক্তা ব্যয়কে বাড়ানোর প্রচেষ্টার ব্যর্থতা। এদিকে, চলতি সপ্তাহে চিনের (China) এক দশকের ২ বার হতে চলা নীতি বৈঠকের আগে এই পরিসংখ্যানগুলি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের (Xi Jinping) ওপর চাপ বাড়িয়েছে। এক বছর আগের তুলনায় দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে GDP ৪.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি অর্থনীতিবিদদের গড় অনুমান ৫.১ শতাংশের থেকে অনেকটা কম। এদিকে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে খুচরো বিক্রয় সবচেয়ে ধীর গতিতে বেড়েছে। যেটি থেকে প্রমাণ হয় যে চিনে উপভোক্তাদের আকৃষ্ট করার জন্য সরকারি প্রচেষ্টার ওপর আরও দৃষ্টিনিক্ষেপ করা প্রয়োজন।
বিরাট ধাক্কা খেল চিন (China):
এদিকে, সামগ্রিক বিষয়টির পরিপ্রেক্ষিতে হংকং-এর ক্রেডিট এগ্রিকোল CIB-এর অর্থনীতিবিদ শিয়াওঝিয়া ঝি জানিয়েছেন যে, “একটি হতাশাজনক দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের পর, সরকারকে তার বার্ষিক বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৫ শতাংশ অর্জন করতে নীতি পরিবর্তন করতে হবে।” তিনি বলেন, “ট্রাম্প ২.০-এর ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনার মানে হল যে চিনকে এমন সময়ে তার অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত নীতি প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে যখন বাহ্যিক চাহিদা হ্রাসের ঝুঁকি দেখা দেবে।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, চিনে (China) রাষ্ট্রপতি শি সহ ২৪ জন সিনিয়র দলীয় আধিকারিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে এই মাসের শেষের দিকে একটি ব্যুরো সভায় যোগ দেবেন।
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, চিনের (China) প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং করোনার মতো ভয়াবহ মহামারীর পর থেকে চিনের বিকাশ বৃদ্ধির জন্য ম্যানুফ্যাকচারিং এবং হাই-টেক সেক্টরে বাজি ধরেছেন। এদিকে, আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হলে চিনের ওপর তিনি আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছেন। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের তথ্য থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিকে ট্র্যাকে রাখতে সরকারকে দেশীয় ব্যয় বাড়ানোর দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। এই হতাশাজনক পরিসংখ্যানের মুখে, হংকংয়ে চিনা শেয়ারে পতন অব্যাহত রয়েছে। পিপলস ব্যাঙ্ক অফ চায়না ক্যাপিটাল ফ্লাইট, ব্যাঙ্কের মুনাফার ওপর চাপ ইউয়ানের সংরক্ষণের উদ্বেগের মধ্যে সোমবার তার বেঞ্চমার্ক রেট স্থিতিশীল রেখেছে।
আরও পড়ুন: কলকাতায় আর হবে না শুটআউট! গ্যাংস্টারদের “ঠান্ডা” করতে বিরাট পদক্ষেপ লালবাজারের
গ্রোথ রেটে পতনের কারণ: ন্যাশনাল ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিকস তথ্য সহ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলেছে যে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে গ্রোথ মন্থর হয়েছে অত্যধিক বৃষ্টি ও বন্যার কারণে। NBS বলেছে যে চিনের (China) অর্থনীতি বৃহত্তর অসুবিধা এবং চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে ও অপর্যাপ্ত অভ্যন্তরীণ চাহিদার সমস্যাগুলি রয়ে গেছে। পাশাপাশি, নোমুরা হোল্ডিংস ইনকর্পোরেটেডের চিফ চায়না ইকোনমিস্ট লু টিং বলেছেন, “গ্রোথের মন্দার মূল কারণ হল প্রোপার্টি সেক্টর যেটি অর্থনীতির একটি অপরিহার্য অংশ। এখন সেটি দ্রুত সঙ্কুচিত হচ্ছে এবং বাড়ির দাম কমছে।”
আরও পড়ুন: কবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেবেন রোহিত? রাখঢাক না রেখে এবার জানিয়ে দিলেন হিটম্যান
এদিকে, ব্লুমবার্গ ইকোনমিক্সের মতে, চিনের (China) দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের জিডিপি বৃদ্ধির হার প্রত্যাশার চেয়ে কম ছিল। যেটি স্পষ্ট করে যে অর্থনীতি ধীর রিকভারি বজায় রাখার জন্যও লড়াই করছে। শিল্প উৎপাদন কিছুটা ভালো থাকলেও সেটিও ঐতিহাসিকভাবে সর্বনিম্ন। যেটি নির্দেশ করে যে একা শিল্প উৎপাদন উন্নতি করতে পারে না। চিনের প্রধান শহরগুলিতে নতুন বাড়ির দাম জুনে টানা ১৩ তম মাসে কমেছে। রিয়েল এস্টেটের মন্দা উপভোক্তাদের আস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এদিকে, খুচরো বিক্রয় ২০২২ সাল থেকে সবচেয়ে ধীর গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেটি থেকে প্রমাণিত হয় পুরোনো যানবাহণ এবং হোম অ্যাপ্লায়েন্সগুলিতে ভর্তুকি দেওয়ার জন্য সরকারি পরিকল্পনা থাকা সত্বেও সাধারণ মানুষ ব্যয় করতে নারাজ।