‘আপনাদের থেকে সার্টিফিকেট নিতে হবে আমি কতটা হিন্দু?’ BJP-কে আক্রমণ মমতার

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ধর্মের নামে সংকীর্ণ রাজনীতির অভিযোগে উত্তাল বাংলা। মঙ্গলবার বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের (Trinamool Congress) সংখ্যালঘু বিধায়কদের চ্যাংদোলা করে রাস্তায় ফেলার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। বুধবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এসব নিয়ে সরব হন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় সম্প্রদায় সম্পর্কে যে কথা বলা হয়েছে সেটা কোনও ভাবেই কাম্য নয়, ধিক্কার জানাই। যিনি একথা বলেছেন, তাঁকে একদিন পস্তাতে হবে। বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

বিধানসভায় গর্জে উঠলেন মমতা (Mamata Banerjee)!

ধর্মের নামে সংকীর্ণ রাজনীতির অভিযোগে গতকাল তেতে উঠেছিল বিধানসভা। এদিনও তার পুনরাবৃত্তি ঘটে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তব্য রাখার সময় প্রতিবাদে সরব হন বিজেপি বিধায়করা। তুমুল হইহট্টগোল শুরু করেন বলে অভিযোগ। হিন্দুরা আক্রান্ত হচ্ছেন বলে দাবি করতে থাকেন তাঁরা। বিধানসভার অধ্যক্ষ বিজেপি বিধায়কদের শান্ত হতে বলেন।

মমতা (Mamata Banerjee) তখন বলেন, ‘আমাদের দলেরও ৪২ জন সাংসদ লোকসভা, রাজ্যসভায় রয়েছেন। তাঁরাও বিএ কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থাকেন। আমি তাঁদের বারবার বলি, তোমরা সব আলোচনায় অংশ নেবে। হাউস চালাতে সাহায্য করো। আমাদের দেশ সৌজন্যের দেশ’।

আরও পড়ুনঃ সরকারি কর্মীদের পোয়া বারো! আজই হতে পারে DA বৃদ্ধির ঘোষণা! কবে থেকে অ্যাকাউন্টে ঢুকবে?

এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের মাঝেই প্রতিবাদ শুরু করেন বিজেপি (BJP) বিধায়করা। মমতা তখন বলেন, আপনারা আগে বলে নিন। তবে আমি বলার সময় আশা করব আপনারা বেরিয়ে যাবেন না। বিজেপির মুখ্য সচেতক শঙ্কর ঘোষ তখন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আপনি বলেছেন সত্যের জন্য কোনও কিছু ত্যাগ করা যায় না। তাহলে আমি নিশ্চয়‌ই আশা করব আপনি স্বীকার করবেন এই বিধানসভার সদস্য না হয়েও আপনি বিধানসভা ভাঙার কাজে যুক্ত ছিলেন। একথা বলার পরেই ফের চেঁচামেচি শুরু হয়।

মমতাকে (Mamata Banerjee) উদ্দেশ্য করে শঙ্কর আরও বলেন, আপনার দলের এক বিধায়ক বলেন, আমরা ৭০ আপনারা ৩০। আপনাদের (হিন্দু) কেটে ভাগীরথীর জলে ভাসিয়ে দেব। আপনি তখন কী করেছেন ? আপনার মেয়র, এই বিধানসভার এক মন্ত্রী বলেছিলেন ধর্মান্তকরণের কথা। তখন আপনি চেয়ারের মর্ম রেখেছেন? আপনি চেয়ারের মর্যাদা রাখলে আমরাও আপনার চেয়ারের মর্যাদা রাখবো। যদি আপনি সেটা না রাখেন তাহলে আমরাও রাখতে পারবো না।

Mamata Banerjee

শঙ্করের প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেন, ফিরহাদ হাকিমকে আমি নিজে বলেছি এই ধরনের কথা বলা যাবে না। মদন মিত্র বা হুমায়ুন কবীর যে কথা বলেছেন প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আমরা পদক্ষেপ করেছি। এটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এখানে বলা যায় না, তা সত্ত্বেও বললাম। আমাদের দল অনেক শৃঙ্খলাপরায়ণ।

এরপরেই বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণের ধার বাড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের কাছ থেকে কি আমায় সার্টিফিকেট নিতে হবে যে আমি কতটা হিন্দু? জালিয়াতি করবেন না। যারা মানুষের কথা বলেন না, তাঁদের জন্য আমার ধিক্কার ছাড়া কিছুই নেই’। বিধানসভায় (West Bengal Assembly) দাঁড়িয়ে এদিন মমতা বলেন, মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় হল মানবিকতা।

আরও পড়ুনঃ মুসলিম বিধায়কদের কাছে ক্ষমা না চাইলে…! শুভেন্দুকে চরম হুঁশিয়ারি হুমায়ুনের! তোলপাড় বাংলা

এখানেই না থেমে মমতা প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা মুসলিমদের কেন টিকিট দেন না? আমি তো হিন্দুদের ৭৯% টিকিট দিই, তখন তো আপনারা কিছু বলেন না। সব ধর্মকে রক্ষা করা এই চেয়ারের কর্তব্য। সেটা আমি করবই’।

এদিন শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্যেরও তীব্র নিন্দা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ধিক্কার জানানোর পাশাপাশি একাধিকবার দলবদল নিয়েও খোঁচা দেন তিনি। মমতা (Mamata Banerjee) বলেন, একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় সম্প্রদায় সম্পর্কে যে কথা বলা হয়েছে সেটা কোনও মতেই কাম্য নয়।‌ সেটাকে ধিক্কার জানাই। যিনি এই কথা বলেছেন তাকে একদিন পস্তাতে হবে। তিনি তিনবার দল বদলেছেন। আগে কংগ্রেস করতেন, তারপর তৃণমূলে এসেছিলেন দলটাকে ঘেঁটে দেওয়ার জন্য। এখন বিজেপিতে গিয়েছেন।‌ আগামী দিনে দেখবেন আবার কোনও দলে যাওয়ার জন্য আবেদন আসবে। তুমি এখন শুধু জামাটা বদলেছ। এই জামাটা আবার যেন লাল জামায় না পরিণত হয়।

Sneha Paul
Sneha Paul

স্নেহা পাল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পড়াকালীন সাংবাদিকতা শুরু। বিগত ২ বছর ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত। রাজনীতি থেকে বিনোদন, ভাইরাল থেকে ভ্রমণ, সব ধরণের লেখাতেই সমান সাবলীল।

সম্পর্কিত খবর