বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কলকাতা হাইকোর্ট আগেই ২০১৬ সালের এসএসসির (SSC Recruitment Scam) সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করেছিল। সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) দ্বারস্থ হয়েও কোনও লাভ হয়নি। উচ্চ আদালতের রায়ই বহাল রেখেছে শীর্ষ আদালত। কলমের খোঁচায় বাতিল হয়েছে প্রায় ২৬০০০ চাকরি। সোমবার সেই চাকরিহারাদের সঙ্গে দেখা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এদিন নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে প্রথমে চাকরিহারাদের প্রতিনিধিদের দাবি শোনেন মমতা। এরপর বক্তব্য রাখতে শুরু করেন তিনি।
‘রঙ’ না দেখেই চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা মমতার (Mamata Banerjee)!
মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তাঁর হৃদয় পাথর হয়ে গিয়েছে। কোনও ‘রঙ’ না দেখেই চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেন তিনি। মমতা বলেন, ‘লাল, নীল, গেরুয়া কোনও রঙ দেখব না। আমায় জেলে ভরলে ভরুক। যোগ্য ব্যক্তির চাকরি যাতে না যায়, সেটা আমরা সবসময় চাই’।
চাকরিহারাদের সামনে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, রাজ্য অনেক চেষ্টা করেছিল। তাঁর কথায়, ‘চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা নেই। চাকরি কাড়ার ক্ষমতা রয়েছে। তাঁদের ধিক্কার জানাই। যাত্রাপালার মাধ্যমে আপনাদের ভুল বোঝাচ্ছে। রাজ্য সরকার অনেক চেষ্টা করেছিল। ২০২২ সাল থেকে নোংরা খেলা শুরু করেছে’। নেতাজি ইনডোর থেকে এদিন সিপিএমকেও একহাত নেন মমতা (Mamata Banerjee)।
আরও পড়ুনঃ এক বছর পরেই নষ্ট OMR শিট! নিয়ম কী বলছে? ২৬০০০ চাকরি বাতিলের পর সামনে চাঞ্চল্যকর তথ্য
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি অনেক কথা জানা সত্ত্বেও সিপিএমের কারোর কোনও চাকরি খাননি। এরপর সরাসরি প্রবীণ আইনজীবী তথা বাম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের (Bikash Ranjan Bhattacharya) নাম নিয়ে বলেন, ‘বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য কেন মামলা করলেন? জবাব দিতে হবে। সিপিএমকে এর উত্তর দিতে হবে’।
যোগ্যদের চাকরি বাতিল হতে দেবেন না বলেও জানান মমতা (Mamata Banerjee)। চাকরিহারাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমি বেঁচে থাকতে যোগ্যদের চাকরি কেড়ে নিতে দেব না। এটা আমার চ্যালেঞ্জ। শিক্ষাব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে’। একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যের হয়ে যোগ্য চাকরিহারাদের জন্য লড়াই করবেন একাধিক দাপুটে আইনজীবী। এদিন তাঁদের নামও ঘোষণা করেন মমতা। কপিল সিব্বল, অভিষেক মনু সিংভি, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রশান্ত ভূষণ, রাকেশ দ্বিবেদী রাজ্যের হয়ে যোগ্য প্রার্থীদের সমর্থনে আইনি লড়াই করবেন বলে জানান তিনি।
মমতা এদিন আদালতের থেকে ব্যাখ্যা চাওয়ার কথাও বলেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘আদালতের থেকে আমরা ব্যাখ্যা চাইব। নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার আগে আমাদের জানতে হবে, যারা বিদ্যালয়ে পড়াতেন, তাঁদের জন্য আদালতের কী ব্যাখ্যা? বিদ্যালয় কে চালাবেন? বাকি কাজ কে করবেন? কাউকে না খাইয়ে মারার অধিকার তো কারোর নেই। চাকরি দিতে পারবেন না, আমার অনুরোধ, তাঁরা যেন চাকরি কেড়ে না নেন। শিক্ষা দফতর যা করার করবে’।
মমতা (Mamata Banerjee) স্পষ্ট জানান, যোগ্যদের চাকরি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। একইসঙ্গে বলেন, ‘পথের মধ্যেই পথ খুঁজে নিতে হবে’। চাকরিহারাদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘আপনারা কি এখনও বরখাস্তের নোটিশ পেয়েছেন? চাকরি করুন না। স্বেচ্ছায় সবাই কাজ করতে পারেন’।
আরও পড়ুনঃ কে যোগ্য, কে অযোগ্য? মমতার সঙ্গে বৈঠকের আগে হাতাহাতিতে জড়ালেন শিক্ষকরা! তোলপাড় কাণ্ড
দু’মাসের মধ্যে বিকল্প ব্যবস্থার আশ্বাসও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যোগ্যদের কারোর চাকরি যাবে না বলে জানান মমতা। একইসঙ্গে বলেন, ‘মানবিকতার খাতিরে সুপ্রিম কোর্ট আমাদের যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা দিক। ব্যাখ্যা দিক। শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার অধিকার কারোর নেই’।
যোগ্যদের পাশাপাশি ‘অযোগ্য’দের বিষয়টাও দেখা হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘আগে যোগ্যদের বিষয়টা মিটে যাক, তারপর যাদের ‘অযোগ্য’ বলা হচ্ছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কী কী তথ্য রয়েছে আমি দেখব। আবার আপনাদের ডাকব। সত্যি যদি তাঁরা ‘অযোগ্য’ প্রমাণিত হন, তখন কিছু করার থাকবে না’। তবে কাকে কেন ‘অযোগ্য’ বলা হয়েছে, তদন্ত কে করেছে, সেটা আলাদা করে দেখতে হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। এটা আলাদা করে দেখার আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি যোগ্য-অযোগ্যদের মধ্যে গণ্ডগোল না করার বার্তা দেন তিনি। একইসঙ্গে বলেন, ‘নিশ্চিতভাবে আপনারা শিক্ষা দিন, শিক্ষিত করুন’।
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে ২০১৬ সালের এসএসসির সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিলের ঘোষণার পরেই চাকরিহারাদের সঙ্গে দেখা করার ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সেই অনুযায়ী এদিন নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে তাঁদের সঙ্গে দেখা করলেন। চাকরিহারাদের উদ্দেশে একাধিক বার্তা দিলেন তিনি।