বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বিগত কিছুমাস ধরে রাজ্যে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ। নিয়োগ দুর্নীতি, আবাস দুর্নীতি থেকে শুরু করে ভেসে এসেছিল মিড-ডে মিল দুর্নীতির কথাও। এবার ফের বিতর্কে সেই মিড-ডে মিল প্রকল্প (Mid Day Meal Scheme)। জানা গিয়েছে, মিড-ডে মিলের খাতে খরচের ক্ষেত্রে বড়সড় গরমিলের অভিযোগ উঠেছে।
সূত্রের খবর, কলকাতা পুরসভার (kolkata Municipal Corporation) অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্টে (Audit Report) পুর বিদ্যালয়গুলির মিড-ডে মিলের খরচে এই গরমিল ধরা পড়েছে। গত ৩০ মার্চ প্রকাশিত অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮-’১৯ ও ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষে মিড-ডে মিল পরিচালনার জন্য বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে বাড়তি ৯৩ লক্ষ ৬২ হাজার ৫৪৮ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তাতেই উঠছে প্রশ্ন।
জানা গিয়েছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে ‘হিসাব-বহির্ভূত’ ভাবে এই টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। মিড-ডে মিলের মতো প্রকল্প চালানোর ক্ষেত্রে রিপোর্টে গোটা বিষয়টিকে হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছেন সিনিয়র অডিট অফিসার। অডিট রিপোর্টে অনুযায়ী, ২০১৮-’১৯ সালে পুর বিদ্যালয়গুলিতে মিড-ডে মিল পরিচালনার জন্য খরচ হওয়ার কথা ৭৪ লক্ষ ৩৬ হাজার ২৩০ টাকা। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে খরচ দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৩১ লক্ষ ১৮ হাজার ৬৮ টাকা।
ঠিক এই একই জিনিস ঘটেছে ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষের ক্ষেত্রেও। সেখানে পুর বিদ্যালয়গুলিতে মিড-ডে মিলের খরচ যেখানে ৭৬ লক্ষ ৭৫ হাজার ৩৬৩ টাকা হওয়ার কথা ছিল। তার বদলে সেখানে দেখানো হয়েছে ১ কোটি ১৩ লক্ষ ৫৬ হাজার ৭৩ টাকা। প্রসঙ্গত, হিসেব অনুযায়ী ২০১৯ সালে কলকাতা পুরসভা পরিচালিত ২৫৩টি পুর প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ ৮১টি শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের মিড-ডে মিল পরিচালনার দায়িত্ব পুরসভার শিক্ষা দফতরকে দেওয়া হয়েছিল।
তবে হিসেব মতো মিড-ডে মিলের রান্না করা ও বিদ্যালয় গুলিতে খাবার বিতরণের দায়িত্ব পুরসভা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দিয়ে থাকে। এবার বাড়তি ওই টাকা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে কেন বা কিসের ভিত্তিতে দেওয়া হল অডিট রিপোর্টে তার ব্যাখ্যা চেয়ে পুরসভার শিক্ষা দফতরের কাছে। পাশাপাশি রিপোর্ট অনুযায়ী, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে বিপুল পরিমান টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়েছে। যার পরিমাণ প্রায় ৪০ লক্ষ ২৩ হাজার ১৫৭ টাকা। ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে এত পরিমান টাকা অগ্রিম দিলেও বছর শেষে তার হিসাব নেই বলেই অডিট রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর, করোনাকালে থালা, গ্লাস, বাটি, স্যানিটাইজ়ার কেনার জন্য মোট ১৬ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ঠিক কোথায় কোথায় এত টাকা খরচ হয়েছে তার প্রামাণ্য নথি দ্রুত অডিট অফিসে পেশ করতে বলা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে যেই অগ্রিম সেই টাকা দেওয়া হয়েছিল তার খরচের হিসাবও শিক্ষা দফতরকে যত দ্রুত সম্ভব জমা দিতে বলা হয়েছে।
বিপুল পরিমান এই গরমিল প্রসঙ্গে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় যিনি ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের সময়কালে মেয়র পারিষদের (শিক্ষা) দায়িত্বে ছিলেন তিনি বলেন, ‘‘মিড-ডে মিলের হিসাব সম্পর্কে কিছু জানতাম না। তদানীন্তন এডুকেশন অফিসার বলতে পারবেন।’’ তবে এডুকেশন অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।