বাংলাহান্ট ডেস্ক : জীবনের শেষ লগ্নে এসে যখন আর পাঁচটা মানুষ ঘরে শুয়ে-বসে দিন কাটাচ্ছেন, তখন এই বৃদ্ধ প্রতিদিন সকাল হলেই বেরিয়ে পড়ছেন পাঁপড়, ভুজিয়া, ধূপকাঠির ব্যাগ হাতে নিয়ে। এইসব জিনিস বিক্রি করে দিনে যা টাকা লাভ হচ্ছে তা বিলিয়ে দিচ্ছেন গরিবদের। ৭১ বছর বয়সী মাঙ্গিলাল এভাবেই নিঃস্বার্থভাবে সেবা করে চলেছেন গত ১১ বছর ধরে।
কোচবিহার শহরের এনএন পার্ক সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা তিনি। কোচবিহারবাসী বেশ ভালো করে পরিচিত মাঙ্গিলালের কাজের সাথে। তাই এই মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কারোর কাছে গেলে খুব একটা আশাহত হতে হয় না তাকে। চা-বিস্কুট খেয়ে প্রতিদিন সকাল ন’টায় বাড়ি থেকে বের হন মাঙ্গিলাল। সারাদিন ফেরি করার পর বাড়ি ফিরে আসেন দুপুর সাড়ে তিনটা নাগাদ।
আরোও পড়ুন : প্রেমে ‘না’ রাজের! পায়েলের বিয়ে হচ্ছে না বাবার জন্য! দাদাগিরিতে এসে অভিনেত্রীর স্বীকারোক্তি
সামান্য কিছু মুখে দিয়ে ফের বেরিয়ে যান তিনি। তারপর বাড়ি ঢোকেন রাত সাড়ে দশটা নাগাদ। একটি সংবাদমাধ্যমে তিনি জানান, ‘বছর দশেক আগে আমার মা মারা গিয়েছেন। আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় মায়ের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সেভাবে কিনতে পারিনি। মায়ের ওষুধ, পথ্য কেনার জন্য অনেকের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। কিন্তু কারও কাছ থেকে সেভাবে সাহায্য পাইনি।
আরোও পড়ুন : পাকা খবর, এই দিন বেরোবে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল! দিনক্ষণ হল চূড়ান্ত
তারপর থেকেই গরিবদের সেবা করাটা নিজের পণ করেন তিনি। মাঙ্গিলাল জানান, ‘প্রতিদিন যে টাকা রোজগার করি তার একটি পয়সাও বাড়ি নিয়ে যাই না। প্রতি রাতে আমি হাসপাতালে যাই। যাঁরা অর্থাভাবে ওষুধ কিনতে পারছেন না, তাঁদের কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে যতটা পারি ওষুধপত্র কিনে দিই। রাস্তায় কেউ খাবার খেতে চাইলে তাকে হোটেলে নিরামিষ ভাত খাওয়াই। গরিব পরিবারের ৩৮টি মেয়ের বিয়ের জন্য সমস্ত পোশাক কিনে দিয়েছি।’
রোজগারের সব অর্থ বিলিয়ে দিলে সংসার চলে কী? এই প্রশ্নের জবাবে ৭১ বছর বয়সী মাঙ্গিলাল জানান, ‘স্ত্রী, এক ছেলে, পুত্রবধূ, দুই নাতি–নাতনি নিয়ে আমার সংসার। ছেলে একটি বেসরকারি সংস্থায় বছর দশেক ধরে কাজ করে। সংসারের সমস্ত খরচ ওই চালায়। এমনকি হাতখরচ হিসেবে আমাকে ও প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা করে দেয়। যতদিন বাঁচব, সবার জন্য এভাবেই কাজ করে যাব।’