বাংলা হান্ট ডেস্ক: জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে গেলে প্রয়োজন অদম্য লড়াইর। পরিস্থিতির বিচারে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেই লড়াই হয়ে ওঠে অত্যন্ত কঠিন। তবে প্রতিবন্ধকতার কাছে হার না মেনে সমস্ত বাধা উপক্রম করে যখন কেউ সেই লড়াইতে অবতীর্ণ হন তখন তিনিই হয়ে ওঠেন প্রকৃত যোদ্ধা।
বর্তমান প্রতিবেদনে ঠিক এইরকমই এক যোদ্ধার কথা আপনারা জানতে পারবেন, যিনি স্বামীর মৃত্যুর পর সংসার ও সন্তানের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে করছেন কুলির কাজ। শুধু তাই নয়, এই কাজ করেই তিনি অফিসার বানাতে চান তাঁর সন্তানদের!
মধ্যপ্রদেশের কাটনি রেলওয়ে স্টেশনে প্রতিদিন কুলির কাজ করেন সন্ধ্যা মারাভি। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাস থেকে তিনি এই কাজটি করছেন। বর্তমানে তিনি তাঁর নামে একটি রেলওয়ে পোর্টারের লাইসেন্সও পেয়েছেন এবং প্রথম থেকেই এই কাজটি সম্পূর্ণ অধ্যাবসায় এবং সাহসের সাথে করে আসছেন সন্ধ্যা।তিনি যখন যাত্রীদের জিনিসপত্র নিয়ে রেলের প্ল্যাটফর্মে হাঁটেন, তখন সবাই তাঁকে দেখে অবাক হয়ে যান। পাশাপাশি, তাঁর এই কাজের প্রশংসাও করেন সকলে।
যদিও, এর আগে অন্যান্য বিবাহিত মহিলাদের মত সংসার এবং সন্তানদের সামলাতেন সন্ধ্যা। কিন্তু, হঠাৎই তাঁর স্বামী ভোলারাম অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমনকি, দীর্ঘ অসুস্থতার পর ২০১৬ সালের ২২ অক্টোবর মারা যান ভোলারাম। এদিকে, স্বামীর অসুস্থতার সময়ে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য শ্রমিকের কাজ করতেন সন্ধ্যা। পরে স্বামীর মৃত্যুর পর, সংসারের পুরো দায়িত্ব চলে আসে তাঁর কাঁধে।
তাই তিনি বৃদ্ধা শ্বাশুড়ি এবং সন্তানদের মুখে খাওয়ার তুলে দিতে খুঁজতে থাকেন একটি চাকরি। ঠিক সেই সময়ে তিনি জানতে পারেন যে, কাটনি রেলস্টেশনে একজন কুলির দরকার। তাই তিনি দ্রুত এই চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন। বর্তমানে ওই রেলস্টেশনে ৪৫ জন পুরুষ কুলির কাজ করেন যেখানে, সন্ধ্যা একমাত্র মহিলা যিনি এই কাজটি করছেন। গত বছর তিনি কুলির ৩৬ নম্বর ব্যাজ পান।
স্বাভাবিকভাবেই, তাঁর এই কাজের জন্য সন্ধ্যাকে ভীষন পরিশ্রম করতে হয়। শুধু তাই নয়, কুন্দম থেকে প্রতিদিন ৯০ কিমি (৪৫ কিমি করে যাওয়া আসা) যাত্রা করে তাঁকে কাটনি রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছতে হয়। কাজ শেষে, তিনি জব্বলপুর হয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন। এই সময় তাঁর তিন সন্তানকে দেখাশোনা করেন সন্ধ্যার শ্বাশুড়ি।
সন্ধ্যার তিনটি সন্তানের মধ্যে বড় ছেলেটির বয়স ৮ বছর। তার নাম শাহিল। তারপরের ছেলেটির নাম হর্ষিত। তার বয়স ৬ বছর এবং সবার ছোট মেয়ে পায়েল, তার বয়স ৪। এদের লালন-পালন ও সুশিক্ষার জন্যই কঠোর পরিশ্রম করছেন সন্ধ্যা। পাশাপাশি তিনি চান, তাঁর সন্তানরা বড় হয়ে সেনাবাহিনীতে অফিসার হয়ে দেশের সেবা করুক।
নিজের কাজের প্রতি অত্যন্ত সৎ থেকে সন্ধ্যা জানিয়েছেন যে, “আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলেও, আমার আত্মা এখনও বেঁচে আছে। জীবন আমার কাছ থেকে আমার সঙ্গী কেড়ে নিয়েছে, কিন্তু এখন আমি সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে সেনাবাহিনীতে অফিসার করতে চাই। এই জন্য কারো সামনে হাত বাড়াবো না। আমি ৩৬ নম্বর কুলি এবং এই কাজ করেই সম্মানের সাথে আমি খাই।” একজন নারী এবং মায়ের এরূপ লড়াকু মানসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সকলেই।