বাংলাহান্ট ডেস্কঃ করোনা যখন সারা বিশ্বকে গ্রাস করেছিল। বিশ্বজুড়ে চলছিল যেন মৃত্যু মিছিল। তার কিছুদিন থেকেই শুরু হয়েছিল উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। কিন্তু এই সংক্রমণের জেরে তা মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তারপর দেশে জারি হল সরকারঘোষিত লকডাউন। আর লকডাউনের মধ্যেই তান্ডব দেখিয়ে গেল ঘূর্ণিঝড় আমফান (Amphan)। যা পুরো বাংলাকে তছনছ করে দিয়েছে। শত শত মানুষের ঠাঁই হয়েছে রাস্তায়। এমনই এক বেদনাদায়ক ঘটনা চোখে পড়ল, যা দেখে চোখের জল আটকানো কঠিন হয়ে গেল। ঘটনাটি ঘটেছে নিউটাউনের গা লাগোয়া বেওতা-১ পঞ্চায়েতের ঘাসখালি গ্রামে।
জানা গিয়েছে, বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আমফান কেড়েছে শেষ সম্বল মাথার চাল্টুকু। তাই বেঁচে থাকার তাগিদে আশ্রয় নিতে হল গাছতলায় আঠেরোর সোনালি ওঁরাও (Sonali Orao)। গ্রামের একটি তালগাছের নীচে সাড়ে ছয় বাই চার ফুটের একটা জীর্ণ তক্তপোষই এখন ‘পড়ার ঘর’ সোনালির। অবশ্য শুধু পড়ার ঘর নয়। এই তক্তপোষই এখন সোনালিদের বসার, শোওয়ার ঘর। রাতে ওই তক্তপোষেই পাঁচ জনের কোনও মতে শোওয়া। বৃষ্টি নামলে প্রতিবেশীর গোয়ালঘরই আশ্রয়। আমফানের পর থেকে এ ভাবেই দিন কাটছে সোনালিদের। তারই মাঝে ওই তক্তপোষে বসেই পরীক্ষার প্রস্তুতি সারছে সোনালি।
নিউ টাউনের বক্স ব্রিজ থেকে অ্যাকোয়াটিকা ওয়াটার পার্কের পাশ দিয়ে একটি খাল চলে গিয়েছে ভাঙড় হয়ে মিনাখাঁর বিদ্যাধরীতে। এই খালের পাশেই ঘাসখালি গ্রাম। যেখানে বাস বাবলু ওঁরাওয়ের। সোনালির বাবা বাবলু। বাবলু দিনমজুর। লকডাউনের পর থেকে কাজ হারিয়েছেন। বড় ছেলে ও মেয়ে অভাব-অনটনের মধ্যেও কলেজের চৌকাঠে পা রাখলেও পড়া শেষ করতে পারেনি। তাই ছোট মেয়ে সোনালিকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন বাবলুর। কয়েক কিলোমিটার দূরে হাটগাছা হরিদাস বিদ্যাপীঠে পড়তে যেত সোনালি। সেখান থেকেই এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক দিচ্ছে সে। শিক্ষাবিজ্ঞান ছাড়া বাকি সব পরীক্ষাই হয়ে গিয়েছে। মাটির দেওয়াল আর অ্যাজবেস্টসের চালের নীচে হ্যারিকেনের আলোয় তাই এ ক’দিন একটি বিষয়ই ঝালিয়ে নিচ্ছিল। কিন্তু ২০ মে সব ওলটপালট করে দিল। এক রাতের ঝড়েই আশ্রয়হীন হয়ে পড়ল গোটা পরিবার।
তবুও সোনালি বলে ও পরীক্ষা দেবেই। ‘এখন বেঁচে থাকাটাই আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু পরীক্ষা আমি দেবই। তাই প্রস্তুতিও রাখছি।’ বন্ধুদের থেকে বই-খাতা চেয়ে পড়াশোনা করছে সে।
আদিবাসীদের অভিযোগ, বেওতা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। বেওতা-১ পঞ্চায়েতের প্রধান আবু সুফিয়ান তরফদার বলেন, ‘সবাইকে ত্রিপল কিংবা ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব নয়। যাঁদের বেশি ক্ষতি হয়েছে তাঁদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেওয়া হচ্ছে।’ ভাঙড়- ব্লকের বিডিও কৌশিককুমার মাইতি বলেন, ‘আদিবাসীপাড়ার প্রতি আমাদের যথেষ্ট নজর আছে। লকডাউনের জন্য অনেক কাজ বন্ধ আছে, তা আবার শুরু হবে।’