গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগেও বিরাট অঙ্কের দুর্নীতি, অভিযুক্ত আবারও পার্থ চট্টোপাধ্যায়

বাংলাহান্ট ডেস্ক : আবারও নতুন দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এলো প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) নামে। এবার উঠে এলো গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে (Gour Banga University) শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিপুল পরিমাণ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ। কখনও চিঠি জেলা প্রশাসনের, কখনও আবার চিঠি দেয় খোদ উচ্চ শিক্ষা দফতর। তার পরেও বেনিয়ম ভাবে শিক্ষক পদে নিয়োগ হয়েছে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এমনকি মালদহের প্রশাসনিক বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে বেনিয়ম নিয়ে উপাচার্যকেও একসময় প্রশ্ন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। এমনকি, কেউ একজন ‘নিয়োগ করাচ্ছে’ বলে বৈঠকে উপাচার্যকে জানিয়েছিলেন তিনি। কেউ একজনটা কে, এই প্রশ্নেই সরগরম ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরমহল। মুখ্যমন্ত্রী সর্ষের মধ্যেই ভূতের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। আজ গোটা দেখলো কে এভাবে বেআইনি ভাবে নিয়োগ করছিলো এত দিন!

দুর্নীতির অভিযোগে এর আগে একাধিকবার খবরের শিরোনামে এসেছে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৮ সালের পরে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে শিক্ষক পদে নিয়োগ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি করে, এই নিয়োগ স্থগিত রাখার জন্য দু’বার চিঠিও দেয় উচ্চ শিক্ষা দফতর। এমনকি, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও চিঠি দিয়ে আপাতত নিয়োগ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। তার পরেও ফিজিওলজি, অঙ্ক, সাংবাদিকতা, ফুড ও নিউট্রেশন, ভূগোল, অর্থনীতি বিভাগে নিয়োগ হয়, দাবি কর্তৃপক্ষের। তাঁদের দাবি, মোট ১১ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। এর মধ্যে ত্রিপুরা এবং মুর্শিদাবাদের এক শিক্ষক ডামাডোল পরিস্থিতি দেখেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যান। বাকি ন’জনের মধ্যে তিন জন রয়েছেন অভ্যন্তরীণ শিক্ষক হিসাবে।

কেন নিয়োগ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় উচ্চ শিক্ষা দফতর? কর্তৃপক্ষের একাংশ জানিয়েছেন, আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনের দু’দিন পর থেকেই শুরু হয়ে যায় ইন্টারভিউ। অভিযোগ, তফসিলিদের জন্য আসন সংরক্ষিত থাকলেও নিয়োগ করা হয় সাধারণ ক্যাটাগরির শিক্ষককে। বিষয়টি সামনে আসতেই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় উচ্চ শিক্ষা দফতর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলের মালদহের পর্যবেক্ষক থাকার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় ছিলেন মেদিনীপুরের কিছু শিক্ষক। এ বারের নিয়োগের সময়ও শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ কিছু শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের পদে ছিলেন। এ ছাড়া বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষক।” মুখ্যমন্ত্রী কি সেই দিকেই ইঙ্গিত করেছেন, চর্চা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরেই। বিজেপির জেলা সভাপতি গোবিন্দচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় যে দুর্নীতির আখড়া, আমরা আগেও বলেছি। মুখ্যমন্ত্রী নিরপেক্ষ তদন্ত করালে প্রকৃত ঘটনা সামনে আসবে।” উপাচার্য শান্তি ছেত্রী বলেন, “নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় উচ্চ শিক্ষা দফতরে পাঠানো হবে।”

প্রাথমিক ভাবে শুভেন্দুর অধিকারির নাম এই দুর্নীতিতে উঠে এলেও অবশেষে দেখা যায় আসল নাটের গুরু অন্য কেউ। জানা যাচ্ছে, প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার দুর্নীতি হয়েছে ওই ১১ জনকে নিয়োগের ক্ষেত্রে। ইডির হাতে উঠে এসেছে বেশ কিছু নথি, যা থেকে বোঝা যাচ্ছে এই নিয়োগ দুর্নীতিতেও প্রতক্ষ ভাবে জড়িত ছিলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।


Sudipto

সম্পর্কিত খবর