দুর্গাপুজোর বিরুদ্ধে দায়ের হয় মামলা! পর্যবেক্ষণে আদালত যা বলল শুনে অবাক হয়ে যাবেন

বাংলা হান্ট ডেস্ক : দুর্গাপুজো (Durga Puja) সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাইকোর্টের। একটি মেলার মাঠে কলকাতার এক পুজো সংগঠন দুর্গাপুজো করার অনুমতি পাবে কিনা সেই মামলায় শুনানি চলাকালীন বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টচার্যের পর্যবেক্ষণ, ‘দুর্গাপুজো পুজো হলেও শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, আসলে সবথেকে ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব।’

আপত্তি ওঠে দুর্গাপুজো নিয়ে : নিউটাউনের মেলা গ্রাউন্ডে দুর্গাপুজো করার আর্জি নিয়ে একটি পক্ষ কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। যে মেলার মাঠে শুধুমাত্র মেলা আয়োজনই করা হয়। সেই জায়গা থেকে সেখানে পুজো করার ক্ষেত্রে সায় দেয়নি প্রশাসন। প্রশাসনের যুক্তি ছিল যে, এই মাঠে পুজো করলে কলকাতা পুলিসের ওপর নিরাপত্তার চাপ বাড়বে। সেই যুক্তিকে কার্যত নস্যাৎ করে দিয়েছে কোর্ট।

দুর্গাপুজো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠান নয় : কর্তৃপক্ষের তরফে আদালতে দাবি করা হয়, সংবিধানে ২৫ ধারা অনুযায়ী জনসাধারণের জন্য তৈরি পার্ক, রাস্তা এবং ফুটপাতে কোনও ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান করা যাবে না। এই দাবি সম্পূর্ণ খারিজ করে বিচারপতি ভট্টাচার্য পর্যবেক্ষণে জানান, ‘একথা সর্বজনবিদিত, যে দুর্গাপুজো শুধু ধর্মীয় পুজোর্চনা নয়, এটি আসলে নারী শক্তির উদযাপন। দুর্গাপুজো শুধু পুজো নয়, বিভিন্ন সংস্কৃতির মেলবন্ধন। পুজোর্চনার থেকেও সেখানে উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আনন্দের ভাগটা অনেকটা বেশি। পুজোর থেকেও উদযাপনটাই প্রত্যক্ষ। এই সমস্ত কিছুর কারণেই দুর্গাপুজোকে শুধুই একটা সম্প্রদায়ের ধর্মীয় আচরণ বা রীতিনীতি পালন হিসেবে দেখা ঠিক হবে না, এর প্রকৃতি আদতে ধর্মনিরপেক্ষ। অতএব একে শুধু এক সম্প্রদায়ের ধর্মীয় রীতিনীতি পালন বলে দাগিয়ে দেওয়া আসলে দুর্গাপুজোর মান হ্রাস করবে।’

durgapuja 2

কী দাবি পিটিশনারের? নিউ টাউন মেলা গ্রাউন্ডে পুজো করতে চাওয়া পিটিশনারদের দাবি ছিল, কর্তৃপক্ষ একাধিক বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে তাদের অনুমতি দিতে চায়নি। অন্যদিকে, পিটিশনাররা দাবি করেন সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী ওই মাঠে দুর্গাপুজো করার সমান অধিকার আছে। দুইপক্ষের সওয়াল ও দলিলে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে পিটিশনাররা কোনও রাস্তা বা ফুটপাত, এমনকী বাচ্চাদের খেলার মাঠে পুজোর অনুমতি চাইছেন না, তাদের পছন্দ করা জায়গায় আসলে বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মেলার আয়োজন করা হয়।

কী বলল আদালত? শুক্রবারের রায়ে কলকাতা হাইকোর্ট বলেছে, ‘সংবিধানের ১৯ অনুচ্ছেদ নিশ্চিত করে যে, সমস্ত নাগরিকের শান্তিপূর্ণভাবে এবং অস্ত্র ছাড়াই সমবেত হওয়ার এবং ভারতের ভূখণ্ড জুড়ে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অধিকার রয়েছে।’ আর সেই নিরিখেই এই পুজোর উদ্যোক্তাদের এই মাঠে পুজো করার ক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। মাঠ ব্যবহারের সম্পূর্ণ ভাড়া দিয়েই ওই মাঠ ব্যবহারের কথা বলেছে কোর্ট।

আরও পড়ুন : BJP-র মিছিলে রণক্ষেত্র যাদবপুর! ‘নকশালবাদ চলবে না! পাকিস্তানের দালালি চলবে না’, হুঁশিয়ারি শুভেন্দুর

কড়া পর্যবেক্ষণ : সমস্ত তথ্য ও সওয়াল শোনার পর আদালত নিজের পর্যবেক্ষণে জানায়, ‘দুর্গাপুজো আর মেলার মধ্যে যে পার্থক্য গড়ে কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানিয়েছে তা ভিত্তিহীন। মেলা হোক পুজো দুই ক্ষেত্রেই বিরাট ভিড় হবে, প্রচুর মানুষ আসবে, প্রচুর গাড়ির পার্কিংয়ের জায়গা প্রয়োজন এটাই তো স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে ওই স্থানে এই ব্যবস্থা আগে থেকেই রয়েছে।’

দুর্গাপুজো একটি ঘরানা : কলকাতা হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে আরও জানায়, ধর্মীয় উপাসনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, উৎসব ও জাঁকজমক, এই সবই এই দুর্গাপুজোর উপাদান। কোর্ট আরও বলেছে, ‘সেই প্রেক্ষাপট সামনে রেখে দুর্গাপুজো একটি জাতির ধর্মীয় কিছু আনুষ্ঠনিক দিকই নয়, সঙ্গে এটির ঘরানা অনেক বেশি ধর্মনিরপেক্ষ। ফলে একে শুধুমাত্র একটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উপাসনার দিক হিসাবে দেখলে হবে না।


Sudipto

সম্পর্কিত খবর