বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বর্তমান রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গের দুই উপ নির্বাচন কেন্দ্রে জয়লাভ করা তৃণমূল দলের জন্য যে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা বলা বাহুল্য। একদিকে যেমন বারংবার লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি দলের জয়লাভ করা আসানসোলের চ্যালেঞ্জ ছিল, ঠিক তেমনি ভাবে সুব্রত মুখোপাধ্যায়-এর স্থানে মানুষ বালিগঞ্জ কেন্দ্রে নবাগত বাবুল সুপ্রিয়কে কতটা আপন করে নেয়, সেই দিকেও নজর ছিল শাসক দলের। আর অবশেষে এদিন দুই কেন্দ্রেই বিপুল ভোটে জয়লাভ করলো তৃণমূল কংগ্রেস। তবে সেই জয়কেও ছাপিয়ে যা বর্তমানে খবর শিরোনামে উঠে আসছে তা হলো, বিজেপিকে সরিয়ে সিপিএম দলের ক্রমশ উত্থান। বালিগঞ্জ উপনির্বাচনেও দেখা গেল একই দৃশ্য! তৃণমূলের পরে দ্বিতীয়স্থানে বিরোধীদলের জায়গা যখন দখল করলো বামেরা, ঠিক সেই মুহূর্তে কম ভোট পাওয়ার কারণে জামানত জব্দ হলো বিজেপি-কংগ্রেস দলের।
এদিন বিকেলের আগেই দুই উপনির্বাচন কেন্দ্রে ঘোষিত হয়ে যায় ফলাফল এবং প্রত্যাশা অনুযায়ী, দুই কেন্দ্র থেকেই জয়লাভ করে রাজ্যের শাসক দল। তবে পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যেখানে গতবার সুব্রত মুখোপাধ্যায় বালিগঞ্জ কেন্দ্র থেকে 75 হাজারেরও বেশি ভোটে জেতেন, সেখানে এবার বাবুল সুপ্রিয় জয়লাভ করলেও সেই অঙ্কের ধারে কাছে পৌঁছাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বিজেপি দল থেকে তৃণমূলে আসা বাবুল সুপ্রিয় 20228 ভোটে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করেন। তবে বাবুলের জয়লাভকে ছাপিয়ে এদিন খবরের শিরোনামে উঠে আসে সিপিএম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিমের নাম। এই কেন্দ্রে মূলত তৃণমূল এবং বিজেপি দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলেই আশা করেন সকলে। কিন্তু সকলকে ভুল প্রমাণিত করে এদিন ফলাফলে দেখা যায় বিজেপিকে সরিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসেন এই মহিলা বাম প্রার্থী। ফলে স্বভাবতই কম ভোট পাওয়ার কারণে জামানত জব্দ হয় বিজেপি প্রার্থী কেয়া ঘোষ এবং কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়ানো কামরুজ্জামান চৌধুরীর।
বালিগঞ্জ ভোটের ফলাফলে বিজেপির এই ভরাডুবির পেছনে কি কারণ রয়েছে, তার কারণ খুঁজতে গিয়ে সন্দিহান দলেরই একাংশ। সম্প্রতি, রাজ্যে বাগটুই-সহ একাধিক স্থানে গণহত্যা থেকে শুরু করে ধর্ষণের মত একাধিক বিতর্কে শাসকদলের মুখ পোড়ে আর এই কারনেই বালিগঞ্জ কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোট যে বিজেপির দিকে যেতে পারে, সেই আশাতেই বুক বেঁধেছিলেন দলের একাংশ। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেলো ঠিক এর উল্টো। ভোটে জয়লাভ করা তো দূরের কথা, মাত্র 13174 ভোট পেয়ে এদিন বিজেপি প্রার্থী কেয়া ঘোষের জামানত জব্দ হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এছাড়াও মাত্র পাঁচ হাজারের কিছু বেশি ভোট পাওয়া কংগ্রেস প্রার্থীরও এদিন জামানত জব্দ হয়।
বিজেপি ও কংগ্রেস দলের এই বেহাল দশার মধ্যেই বালিগঞ্জ কেন্দ্রে এদিন প্রধান বিরোধীর স্থানে উঠে এলেন বাম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম। গত বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় প্রায় 30 শতাংশ ভোট বাড়িয়ে বালিগঞ্জ কেন্দ্রে এবার বামেদের প্রাপ্ত ভোট 30818।
প্রসঙ্গত, এদিন বালিগঞ্জ কেন্দ্র থেকে জিতলেও বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে বাবুল সুপ্রিয়কে ঘিরে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই কেন্দ্রের অন্তর্গত দুই ওয়ার্ডে হেরে বসেছেন বাবুল। কিন্তু এই হারের পরেও এদিন উচ্ছ্বাস ধরা পড়ে বাবুলের গলায়। তিনি জানান, “সিপিএম এবং বিজেপি দুই দলই চেষ্টা করেছিল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে বদনাম করার। কিন্তু মানুষ তার যোগ্য জবাব দিয়েছে। আমাকে বলতেই হবে যে, মমতা ব্যানার্জি থেকে অভিষেক সকলেই আমাকে সমস্ত রকম সাহায্য করেছে। তবে আমরা যে ওয়ার্ডে পরাজিত হয়েছি, তা নিয়ে ভবিষ্যতে আত্মপর্যালোচনা করতে হবে।”