বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo) বর্তমানে নিজের কেরিয়ারে এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছেন যে তিনি যে কোনও ম্যাচে কোনও গোল করলেই থাকছে নতুন কোনও রেকর্ড তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা। ভাবতে অবাক লাগে একজন ফুটবলার যিনি নিজের কেরিয়ারটা শুরু করেছিলেন একজন শো-বোটার হিসাবে, গোল করার থেকে পায়ের কাছে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের নাস্তানাবুদ করাটাই তার শখ ছিল। নিজের কেরিয়ারের প্রথম চার বছরে গোল করা দিয়ে খুব একটা মাথাই ঘামাতেন না পর্তুগিজ তারকা। কিন্তু ২০০৬/০৭ মরশুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড জার্সিতে যখন কেরিয়ারে প্রথমবার ১ মরশুমে ২০ গোলের গণ্ডি পেরিয়ে গেলেন, তখন থেকে চিত্রটা গেল সম্পূর্ণ বদলে।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে নিজের কেরিয়ারের প্রথম সাত বছরের মধ্যে ছয় বছর খেলেছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। রেড ডেভিলসদের হয়ে সেই প্রথম তিন বছরের রোনাল্ডোর গোল সংখ্যা ছিল মাত্র ২৭। কিন্তু ওই লাল জার্সিতেই পরের তিন বছরে ৯১ গোল করেন সিআরসেভেন। এরপর ওল্ড ট্র্যাফোর্ড ছেড়ে সান্তিয়াগো বার্নাব্যু-তে পৌঁছে রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি গায়ে তোলার পর বাকিটা ইতিহাস। রয়াল হোয়াইট জার্সিতে তিনি ৪৩৮ ম্যাচ খেলে ৪৫০ গোল করেন। আর কোনও ফুটবলার কোনও ক্লাবের হয়ে এমনটা করতে পারবেন বলে আশা করেন না কেউই।
এরপর তিনি জুভেন্টাসের মতো রক্ষণাত্মক ফুটবলে বিশ্বাসী ক্লাবে যুক্ত হন এমন একটা সময়ে যখন যে ডিফেন্ডারদের কারণে বায়ানকোনেরি-দের ডিফেন্স ইউরোপের ক্লাবগুলির কাছে ত্রাস ছিল, সেই ডিফেন্ডারদের কেউ অবসর নিচ্ছেন কেউ ক্যারিয়ারের সেরা সময় পেরিয়ে এসছেন কেউ চোটের কারণে গোটা মরশুমের খুব অল্প সময়েই মাঠে নামতে পারছেন। তার মধ্যেও সাদা কালো জার্সিতে তিন বছরে তিনজন ভিন্ন কোচের দায়িত্বে মাঠে নেমেও ১৩৪ ম্যাচে ১০১ গোল করেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।
পর্তুগালের জার্সিতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর নিজের প্রথম ৫০ গোল করতে সময় নিয়েছিলেন ১১৪ ম্যাচ। এর কারণ ছিল প্রধানত দুটি। প্রথমত পর্তুগালের জার্সিতে তিনি শুরু থেকে একজন ফরোয়ার্ড ছিলেন না। দ্বিতীয়ত তিনি ফরোয়ার্ডে পরিণত হওয়ার পরেও দীর্ঘদিন অত্যন্ত সাধারণ মানের ফুটবলারদের সঙ্গী করে মাঠে নামতে হয়েছিল তাকে যারা ফুটবলীয় দক্ষতায় রোনাল্ডোর চেয়ে কয়েকশো গুণ পিছিয়ে থাকবেন।
জাতীয় দলের জার্সিতে ৫০ গোল সম্পূর্ণ করার পর আরও ৭২ টি গোল করেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। এই বাকি ৭২ গোল করতে তার সময় লেগেছে মাত্র ৮৪ ম্যাচ। কারণ এই সময়টা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো একজন সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবেই বেশি খেলেছেন। সেই সঙ্গে পর্তুগালের দলের গুনগত মানের অনেক উন্নতি ঘটেছে। গতকাল ইউরো কাপের যোগ্যতাঅর্জন পর্বের ম্যাচে লাক্সেমবার্গের বিরুদ্ধে মাত্র ৬৪ মিনিট খেলেই নিজের আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের ১২২ তম গোলটি করেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। এই বিশেষ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এগারো ম্যাচে ১১ গোল করেছেন রোনালদো যা তার আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের কোন নির্দিষ্ট প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ। কিন্তু সুইডেন, হাঙ্গেরি, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়ামের মতো দলের বিরুদ্ধে একাধিক গোল করা তারকা যে ফিফা ক্রমতালিকায় অত্যন্ত পিছিয়ে থাকা এই দেশের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত গোল করবেন তা আর আশ্চর্যের কি।
তফাৎ এখনো একটাই। নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত পর্তুগাল এই দলগুলির বিরুদ্ধেও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে ছাড়া জিততে পারতো না। এন্ডোরার মতো র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকা দেশের বিরুদ্ধেও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে একসময় বেঞ্চে রাখলে প্রথমার্ধ থাকতো গোল শূন্য। মাঠে নেমে গোল এবং অ্যাসিস্ট করে রোনাল্ডোকে জয় এনে দিতে হতো। আর্মেনিয়ার মতো ফিফা ক্রমতালিকায় ১০০ নম্বরের কাছাকাছি থাকা দেশের বিরুদ্ধে রোনাল্ডো হ্যাটট্রিক করলে তবেই ৩-২ ফলে জয় পেতো পর্তুগাল। কিন্তু এখন সেই দেশের ফুটবল দলের পরিস্থিতি অতটাও খারাপ নয়।
গতকাল নিজের অপেক্ষাকৃত দুর্বল বাঁ পায়ে ১৫০ গোলের মাইলফলক পেরিয়ে গেলেন সিআরসেভেন। তিনি মূলত একজন ডান পায়ের ফুটবলের যদিও তার দুই পা-ই প্রায় সমানতালে চলে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে আর কোনও এমন ফুটবলার নেই যিনি নিজের অপেক্ষাকৃত দুর্বল পায়ে ১০০-এর বেশি গোল করেছেন। এই তালিকায় বাকি দিচ্ছে কয়েক যোজন এগিয়ে আছেন ক্রিশ্চিয়ানো।