বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্কঃ তিনি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার এবং সেই সঙ্গে খেলার মাঠের অত্যন্ত বিতর্কিত একটা চরিত্র। বেশকিছু মানুষ তাকে ঘৃণা করেন এবং তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হন। একটা কথা যেটা সকলেই মানতে বাধ্য হবেন, সেটা হলো এই যে আপনি তাকে ঘৃণা করুন অথবা ভালোবাসুন কিন্তু আপনি তাকে কোনওভাবেই অগ্রাহ্য করতে পারবেন না।
ক্রিশ্চিয়ানো সেই সমস্ত ক্রীড়াবিদদের মধ্যে পড়েন না যারা নিজেদের সম্পর্কে অত্যন্ত বিনয়ী হন। তিনি পড়েন কিংবদন্তি স্প্রিন্টার উসিয়েন বোল্ট কিংবা সর্বকালের সেরা বক্সার মহম্মদ আলীর দলে, যারা সদম্ভে সকলের সামনে এটা ঘোষণা করতে পারেন যে তারাই বিশ্বের সেরা। আর শুধু মুখে বলা নয় নিজেদের পারফরম্যান্সের মধ্যে দিয়েও সেটা করে দেখান তারা। রোনাল্ডোও ঠিক তেমনই। বোল্ট বা মহম্মদ আলীর ক্ষেত্রে লোকের তাদের সেরা মানতে অসুবিধা হয়নি কারণ সেই সময় তাদের সমান উচ্চতার কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী তাদের সামনে ছিল না।
কিন্তু ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো তাদের মতো ভাগ্যবান নন। তার সমসাময়িক হিসেবে খেলেছেন ফুটবল বিশ্বের সম্ভবত সবচেয়ে প্রতিভাবান খেলোয়াড় লিওনেল মেসি। ফলে প্রতি পদক্ষেপে দুজনের মধ্যে তুলনা হয়েছে। দুজন দুই রকম ফুটবলার। ফুটবলারদের মধ্যে যদি শিল্পী স্বত্তা খোঁজা হয়, তাহলে মেসির চেয়ে এগিয়ে হয়তো কেউই থাকবেন না। নিজের বাঁ-পা দিয়ে যেন কবিতা লেখেন তিনি। অপরদিকে রোনাল্ডো হলেন খেটে নিজের প্রতিভার ঘাটতি পূরণ করে নিজেকে আকাশের উচ্চতায় তুলে নিয়ে আসা ফুটবলার। প্রতিভার ঘাটতি রোনাল্ডো পুসিয়ে দেন পরিশ্রমের মাধ্যমে। কেরিয়ারের শুরুতে রোনাল্ডো ছিলেন একজন ফ্ল্যাশী উইঙ্গার, যিনি মাঠের মধ্যে নানান রকম ট্রিক প্রদর্শন করে বিপক্ষ ডিফেন্সকে নাস্তানাবুদ করার পাশাপাশি দর্শকদের মনোরঞ্জন করতেন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের তিন বছর খেলার পর রোনাল্ডো অনেকটা পরিণত হন এবং নিজেকে ধীরে ধীরে একজন মর্ডান উইঙ্গারে পরিণত করেন যিনি দলের প্রয়োজনে এসিস্ট এবং গোল দুটোই করবেন। এরপর ২০১৪ সালে পায়ে চোট পাওয়ার পর তিনি নিজের খেলার ধরণ বদলান এবং গোল করাটাই তার খেলার মুখ্য বিষয় হয়ে ওঠে।
৩৭ বছর বয়সেও রোনাল্ডো সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিজের দলকে একাধিক ম্যাচ জিতিয়েছেন। কিন্তু চলতি মরশুমে কেরিয়ারে প্রথমবার রোনাল্ডো ভালো ছন্দে নেই। তাতেই একজন ফুটবলার হিসাবে তার যোগ্যতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু রোনাল্ডো নিজে মানেন এই বয়সে এসে কারোর কাছে কিছু প্রমাণ করার নেই তার। আজ বিশ্বকাপের আগে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে সেটাই বলেছেন রোনাল্ডো।
কিছুদিন আগে নিজের বর্তমান ক্লাবম্যানচেস্টার ইউনাইটেড মালিকপক্ষ ও কোচের সমালোচনা করে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন তিনি। সেই নিয়ে পর্তুগালের বাকি ফুটবলারদের অনেক প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল। আজ সাংবাদিক সম্মেলনে এসে রোনাল্ডো বলেন, “যা সমালোচনা করার, প্রশ্ন করার, আমায় করুন, আমি বুলেটপ্রুফ, আমি লোহার বর্ম পরে থাকি, সমালোচনা আমার গায়ে লাগে না। কিন্তু আমার সতীর্থদের আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে প্রশ্ন করে তাদের বিব্রত করবেন না। আমরা বিশ্বকাপে ভালো ফল করার লক্ষ্য নিয়ে এসেছি। সেদিকেই সকলে লক্ষ্য স্থির।”