২০০৬ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে জিদানের ব্রাজিলকে চূর্ণ করার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছেন মদ্রিচ

বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: গতকাল ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে পেনাল্টি শ‍্যুট আউটে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গিয়েছে। নির্ধারিত সময় এবং অতিরিক্ত সময়ের খেলা মিলিয়ে নিজেদের পরিকল্পনা সঠিকভাবে সাজিয়ে সফল করে তুলেছে। এছাড়া ব্রাজিলিয়ান কোচের একাধিক ভুল সিদ্ধান্তের কারণেও ব্রাজিলকে গতকাল ভুগতে হয়েছে।

ভিনিসিয়াস, রিচার্লিসনের মতো দুই আক্রমণাত্মক ফুটবলারকে একসাথে তুলে নেওয়া, মাঝমাঠে ক্যাসেমিরো একা পরে যাচ্ছেন মদ্রিচ, কোভাসিচের সামনে দেখেও ফ্যাবিনহোর মতো ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে না নামানো, রাইট ব্যাক পজিশনে মিলিটাওকে তুলে অ্যালেক্স স্যান্দ্রোকে নামিয়ে সেইদিকে দিয়ে তৈরি হওয়া আক্রমণেই গোল খাওয়া, প্রথম পেনাল্টি মারতে রদ্রিগোর মতো তরুণ ফুটবলারকে পাঠানো ইত্যাদি একাধিক কারণ রয়েছে।

তাছাড়াও আরো একটি বড় কারণ হলো বিপক্ষ দলে লুকা মদ্রিচের মতো একজন মিডফিল্ডারের উপস্থিতি। ব্রাজিলের মাঝমাঠকে কার্যত কাল অকেজো করে দিয়েছিলো ক্রোয়েশিয়া। কোভাসিচ ও ব্রজোভিচকে সঙ্গী করে মদ্রিচ কাল মিডফিল্ডে রীতিমতো রাজত্ব করেছেন। আক্রমণ এবং ডিফেন্সের মধ্যে এক অসাধারণ যোগাযোগ বজায় রাখছিলেন তিনি।

modric vs brazil

মদ্রিচ কাল যে পারফরম্যান্সটা করেছেন সেটা ২০০৬ সালে ব্রাজিল বনাম ফ্রান্স ম্যাচ জেতার পারফরম্যান্সের সঙ্গে তুলনীয়। একসময় রিয়াল মাদ্রিদে জিদানের কোচিংয়েও খেলেছেন মদ্রিচ। তার কাছেই সর্বোচ্চ পর্যায়ে সাফল্য পাওয়ার মন্ত্র শিখেছেন ক্রোয়েশিয়ান অধিনায়ক। ক্রোয়েশিয়ার মতো দলকে দুবার বিশ্বকাপের সেমিতে তুলে এনেছেন তিনি। যদিও এই ক্রোয়েশিয়ার সাথে, ২০০৬ সালের ফ্রান্সের তুলনা হয় না। সেবার ফ্রান্সের কাছে একটি অসাধারণ দল ছিল এবং তারা শুধুমাত্র জিদান নির্ভর ছিলেন না। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার কাছে এই বছর আক্রমণে ভালো কোনও বিকল্প নেই। মাঞ্জুকিচের মতো একজন তারকা স্ট্রাইকারের অভাব এখনও পূরণ করতে পারেননি তারা। পেরিসিচ গোল না পেলে অনেকটাই অসহায় হয়ে যায় দেশটি। তাই ক্রোয়েশিয়ান কোচ জলিটকো ডালিচ নিজের ডিফেন্স এবং মিডফিল্ডকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছেন।

তার মধ্যে যদি লুকা মদ্রিচের মতো একজন কিংবদন্তি থাকেন, যিনি ৩৭ বছর বয়সে পৌঁছেও প্রাণশক্তিতে ভরপুর, গোটা ১২০ মিনিট দৌড়ে যাচ্ছেন অক্লান্তভাবে, দলের প্রয়োজনে বিপক্ষ পরোয়াড়দের পা থেকে বল তুলে নিচ্ছেন, আবার কখনো কখনো নিখুঁত থ্রু বল বাড়িয়ে যাচ্ছেন, তাহলে কোচের গাছটাও অনেকটাই সোজা হয়ে যায়। কিন্তু আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধেও ক্রোয়েশিয়ার এই নিজেদের রক্ষণকে সুদৃঢ় করে গোল না খেয়ে ম্যাচ অতিরিক্ত সময় অবধি টেনে নিয়ে গিয়ে জয় তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা কি কার্যকর হবে? ল অফ এভারেজ বলছে সেটা সম্ভব না। তাছাড়া পরপর দুটি ম্যাচে পেনাল্টি শুট আউট অবধি যাওয়া মানে ফুটবলারদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে মারাত্মক ক্লান্ত হয়ে পড়া। তাও তারা মাঠে নামবেন অসম্ভবকে সম্ভব করার মরিয়া চেষ্টায়, কারণ তাদের অধিনায়ক লুকা মদ্রিচ বহু আগেই বলে রেখেছেন, “হাল ছেড়ে দেওয়াটা কখনও বিকল্প হতে পারে না।”


Reetabrata Deb

সম্পর্কিত খবর