বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমানে আমাদের দেশের কৃষকরা পরিবর্তনশীল সময়ের সাথে সাথে কৃষিকাজের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন বৈচিত্র্য নিয়ে আসছেন। প্রথাগত কৃষিকার্যের পরিবর্তে তাঁরা এমন চাষ শুরু করেছেন যাতে ভালো অঙ্কের লাভের সুযোগ থাকে। পাশাপাশি, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদিত এসব ফসল অল্প সময়ের মধ্যে শুধুমাত্র ভালো ফলনই দেয় না, বরং তা বিক্রি করে কয়েক মাসেই বিপুল মুনাফাও অর্জন করা সম্ভব।
ঠিক সেই ধরণেরই এক চাষের প্রসঙ্গ এই প্রতিবেদনে উপস্থাপিত করা হল। বর্তমানে পুদিনা চাষ এমন একটি উল্লেখযোগ্য চাষ, যার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি, পুদিনার একাধিক উপকারিতার জন্য বাজারে এর চাহিদাও আকাশছোঁয়া। এছাড়াও, পুদিনার ফলন হতেও বেশি সময় লাগেনা। যার ফলে কম সময়ের মধ্যেই অর্থ উপার্জনের সুযোগ থাকে কৃষকদের কাছে।
সাধারণত জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যবর্তী সময়টা এই চাষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে করা হয়। পাশাপাশি, পুদিনা চাষের ক্ষেত্রে বুল্লাই দোয়াশ বা মাটিয়ারী দোয়াশ নামক মাটি দিয়ে জমি প্ৰস্তুত করে চাষের উপযোগী করে তোলা হয়।
এরপরে, ২০ থেকে ২৫ টন গোবর সার যোগ করে, জমিটির মাটি ভালভাবে আর্দ্র এবং উর্বর করে নিতে হয়। গাছগুলি প্রস্তুত করে মাটিতে রোপণের সময়ে জমিতে সেচের ব্যবস্থা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে, জমিতে জল যাতে কোনোমতেই জমতে না পারে। পাশাপাশি, পাহাড়ি বা ঠান্ডা জায়গায় এই চাষ খুব একটা ভালো ভাবে করা যায়না।
এছাড়াও, গাছগুলি রোপণের সময়ে একটি গাছ থেকে অন্য গাছের দূরত্ব ৪৫ সেন্টিমিটার হওয়া উচিত। পাশাপাশি, একেকটি সারির দূরত্ব হতে হবে ন্যূনতম ৬০ সেমি। যাতে গাছগুলি বাধাহীন ভাবে বেড়ে উঠতে পারে। উল্লেখ্য যে, এই ফসল মাত্র ৪০ থেকে ৫০ দিনের মধ্যেই প্রস্তুত হয়ে যায়। যদিও, ১০০ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলে এই গাছের প্রথম ফসল পাওয়া যায়।
অন্যদিকে, তার ৬০ থেকে ৭০ দিন পরই পুদিনা গাছের দ্বিতীয় ফসলও পাওয়া যায়। পুদিনা চাষ করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এই গাছের তেলের চাহিদা বাজারে অত্যধিক বেশি। আপনি যদি ১ বিঘা জমিতে পুদিনা চাষ করেন তবে এর গাছ থেকে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লিটার বা তারও বেশি তেল বের হতে পারে।
ভারতীয় বাজারে, এক লিটার পুদিনার তেলের দাম প্রায় ২,০০০ থেকে ৩,০০০ টাকা। অর্থাৎ, কৃষকরা ২০ থেকে ২৫ লিটার তেল বিক্রি করে ভাল লাভ করতে পারেন। ব্যথা উপশমকারী হিসাবে এই তেলের অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। পাশাপাশি, এই তেলে মেন্থোন, মেনথল এবং মিথাইলের মতো অ্যাসিটেট পাওয়া যায়, যা মাথা ব্যথা, হাঁটুর ব্যথা সহ কোমর ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট দূর করতে সহায়ক।
এছাড়াও বিভিন্ন কসমেটিকসের পণ্য তৈরিতেও এই তেল ব্যবহার করা হয়, যা থেকে অনেক ধরনের ক্রিম এবং সাবান ইত্যাদি তৈরি করা যায়। পুদিনার তেলের একটি মনোরম সুগন্ধ রয়েছে, তাই এটি পানীয়, পারফিউম এবং মসলা তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও, যদি কোনো ব্যক্তি দাঁতের ব্যথায় ভুগতে থাকেন, তাহলে দাঁতের গোড়ায় এই তেল লাগালে ব্যথা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও, এই তেলের সুগন্ধ স্ট্রেস এবং টেনশন কমাতে সহায়ক বলে প্রমাণিত হয়েছে।