‘বাংলা’ হল ‘বাঙালি’! নির্দেশিকা জারি করল নবান্ন

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ জীবনের নানান সুখ-দুঃখ থেকে ওঠা-পড়া সবেতেই আজও বাঙালির একমাত্র ভরসার স্থল বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর গানের মধ্যেই অপার শান্তি পান সকলে। তাই কবিগুরুর মৃত্যুর এত বছর পরেও রবীন্দ্র সংগীতের সাথে আজও একাত্ম অনুভব করেন প্রত্যেক বাঙালি। প্রসঙ্গত বাঙালির ভাবাবেগকে উজ্জীবিত করে তোলে এমনই একটি জনপ্রিয় রবীন্দ্র সংগীত হল, ‘বাংলার মাটি বাংলার গান।’ এই গানটিকে নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে বিতর্ক চলছিল। এবার এই বিষয়ে বড় পদক্ষেপ নিল নবান্ন (Nabanna)।

রাজ্য সংগীতের শব্দ বদল করে বড় সিদ্ধান্ত নিল নবান্ন (Nabanna)

ঘটনার সূত্রপাত হয়, বছর দুয়েক আগে। প্রসঙ্গত ২০২৩ সালে বিধানসভায় জোড়া প্রস্তাব পাস করিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। যার মধ্যে একটি ছিল পয়লা বৈশাখের দিনটিকে রাজ্য দিবস হিসেবে পালন করা হবে এবং দ্বিতীয়ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা, ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ গানটি হবে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সংগীত। কিন্তু ওই বছরের ডিসেম্বর মাসেই এই রাজ্য সংগীতের কথা বদল নিয়ে তৈরি হয় বিতর্ক।

রবীন্দ্রনাথ মানে এমনিতেই প্রত্যেক বাঙালির কাছে আবেগের আরেক নাম। আচমকা তাঁর গানের কথা বদল করে দেওয়ায় শুরু হয় তুমুল সমালোচনা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব থেকে সূত্রপাত হয় ওই বিতর্কের। ওই উৎসবে রাজ্য সংগীত হিসেবে বাজানো হয়েছিল এই রবীন্দ্র সংগীতটি। কিন্তু সেখানে মূল গানের কথার সাথে ওই গানের কথায় অমিল ছিল। রবীন্দ্রনাথের লেখা মূল গানের শব্দ ছিল, ‘বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন, বাঙালির ঘরে যত ভাই বোন…।’ কিন্তু সেবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বেজেছিল,‘বাংলার প্রাণ বাংলার মন, বাংলার ঘরে যত ভাই বোন…’।

স্বয়ং রবি ঠাকুরের লিখিত গানের কথা বদল করে দেওয়ায় তা নিয়ে বিস্তর সমালোচনা শুরু হয় বিভিন্ন মহলে। তাঁদের বক্তব্য ছিল বাংলায় বাঙালিরা বাদেও আরও অনেকে থাকেন। তাঁরা বাঙালি না হলেও বাংলার মানুষ। সেই কারণেই ওই বদল করা হয়েছিল। তবে রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘বিকৃত’ করা যায় কিনা সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁরা।

অবশেষে সোমবার এই বিতর্কের অবসান ঘটিয়েছেন রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ। নবান্ন থেকে (Nabanna) একটি নির্দেশিকা জারি করে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্য সঙ্গীত হিসাবে রবীন্দ্রনাথের লেখা, ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ গানটির কোন স্তবক, কত সময়ের জন্য গাওয়া হবে। একইসাথে বলা হয়েছে রাজ্য সংগীত চলাকালীন, ‘উঠে দাঁড়ালে ভালো’।

নির্দেশিকা মুখ্য সচিব জানিয়েছেন এই রাজ্য সংগীত সম্পন্ন করার জন্য এক মিনিট সময় দেওয়া হবে। ওই নির্দেশিকা উল্লেখ করা হয়েছে রাজ্য সংগীত হিসেবে গাওয়া হবে, ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল- পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান।। বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন, বাঙালির ঘরে যত ভাই বোন— এক হউক, এক হউক, এক হউক হে ভগবান’। অর্থাৎ বাংলা আবার ফিরলো বাঙালিতে। ঠিক যেমনটা লেখা রয়েছে রবীন্দ্রনাথের লেখা মূল গানের শব্দে।

আরও পড়ুন: অভয়ার আবেগকে কাজে লাগিয়ে টাকা তুলেছিল JDF? প্রশ্ন উঠতেই উধাও ওয়েবসাইট

ব্রিটিশ শাসনকালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় এই গানটি লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর বর্তমানে বাংলাদেশে নানা কারণে তৈরি হয়েছে ব্যাপক অস্থিরতা। ইদানিং হামেশাই ওপার বাংলা থেকে অভিযোগ আসছে মৌলবাদীরা রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে জীবনানন্দ দাসের বিভিন্ন স্থাপত্য নষ্ট করে দিতে চাইছে। এই পরিস্থিতিতে এপার বাংলার রাজ্য সংগীতে রবীন্দ্রনাথের পুরনো শব্দ ফিরিয়ে আনায় বিষয়টিকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Government of West Bengal Chief Secretary Manoj Pant

প্রসঙ্গত সরকারি নির্দেশিকায় মুখ্য সচিব ‘বাধ্যতামূলকভাবে’ কিছু উল্লেখ না করলেও জানিয়েছেন রাজ্য সংগীত বা জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হওয়ার সময় সবাই মিলে উঠে দাঁড়ালে তা উৎসাহব্যঞ্জক হয়। প্রসঙ্গত আইনত সংবিধানের ৩  নম্বর ধারায় বলা হয়েছে জাতীয় সংগীতের অবমাননা করা যাবে না। কিন্তু জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হওয়ার সময় উঠে না দাঁড়ানো অবমাননা কিনা সেই প্রসঙ্গে আইনে কিছু বলা নেই।

Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর