বাংলা হান্ট ডেস্ক: মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল দেশের স্বনামধন্য শিল্পপতি সাইরাস পালোনজি মিস্ত্রি (Cyrus Pallonji Mistry)-র। মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) পালঘর হাইওয়েতে রবিবার এই দুর্ঘটনা ঘটে। পালঘরের পুলিশ সুপার সূত্রে জানা গিয়েছে, আহমেদাবাদ থেকে মুম্বই ফেরার পথে দুপুর ৩ টে ১৫ থেকে সাড়ে তিনটে নাগাদ পালঘরের চারোটিতে সূর্য নদীর উপর এই দুর্ঘটনা ঘটে। একটি ডিভাইডারে গিয়ে ধাক্কা মারে সাইরাসের ধূসর রঙের মার্সিডিস। সেখানেই মারা যান টাটা সন্সের প্রাক্তন চেয়ারম্যান। পাশাপাশি, মৃত্যু হয়েছে গাড়ির চালকেরও।
এদিকে, এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে সর্বত্র। টুইটের মাধ্যমে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। উল্লেখ্য যে, সাইরাস ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রথমসারির শিল্প সংগঠন টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি, একটা সময় ছিল যখন রতন টাটা নিজে অবসর নেওয়ার ঘোষণা করে সাইরাসের হাতে টাটা গ্রুপের দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা জানিয়েছিলেন। যদিও, মাত্র চার বছর পরে, সাইরাসের কিছু সিদ্ধান্তের জেরে রতন টাটা ফের ওই গ্রূপের নেতৃত্ব দেন। এমনকি, পরে দু’জনের মধ্যে বিবাদ এতটাই বেড়ে যায় যে, বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
প্রথম জেনে নিন টাটা ও মিস্ত্রি পরিবারের সম্পর্কটি ঠিক কি: টাটা এবং মিস্ত্রি উভয়েরই পার্সি পরিবারের মধ্যে একটি পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। বলা হয় যে, তাঁদের দু’জনেরই পূর্বপুরুষ পারস্য (বর্তমানে ইরান) থেকে ভারতের গুজরাটে এসেছিলেন। ১৯৩০-এর দশকে টাটা যখন এফই দিনশা অ্যান্ড কোম্পানিকে কিনেছিল তখন শাপুরজি-প্যালোনজি গ্রুপ টাটা সন্সের শেয়ার অধিগ্রহণ করেছিল বলে মনে করা হয়। যদিও, টাটা কোম্পানি পরে জানায় যে মিস্ত্রি পরিবার ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত টাটার কোনো শেয়ার ধারণ করেনি। পরে জেআরডি টাটার ভাইদের কাছ থেকে এই শেয়ারগুলি কেনা হয়। জানিয়ে রাখি যে, মিস্ত্রি গ্রুপ এখনও টাটা গ্রুপের শেয়ারহোল্ডার রয়েছে। বর্তমানে, টাটা পরিবারের চ্যারিটেবল ট্রাস্টে গ্রুপের ৬৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
এছাড়াও, টাটা-মিস্ত্রি পরিবারের মধ্যে সম্পর্কও খুব ভালো। রতন টাটার সৎ ভাই নোয়েল টাটা আলু মিস্ত্রির সাথে বিয়ে করেছিলেন। যিনি সম্পর্কে পালোনজি মিস্ত্রির মেয়ে এবং সাইরাস মিস্ত্রির বোন। এদিকে, পালোনজি মিস্ত্রি নিজে টাটা সন্সের একজন নির্দেশক ছিলেন। এছাড়াও, পালোনজি মিস্ত্রি বম্বে হাউসের (টাটা গ্রুপের সদর দপ্তর) জনপ্রিয় মুখ হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। টাটা সাম্রাজ্যেও তাঁর প্রভাব ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমতাবস্থায়, সাইরাস মিস্ত্রি ২০০৬ সালে একই পদে আসীন হন।
সাইরাস টাটার নয়নের মণি হয়ে আছেন: ২০১১ সালে যখন সাইরাসকে টাটা গ্রুপের ডেপুটি চেয়ারম্যান করা হয়েছিল তখন রতন টাটা তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। তিনি বলেন, সাইরাসের নিয়োগ একটি ভালো ও দূরদর্শী নির্বাচন। এছাড়াও, টাটা জানান, “তিনি (সাইরাস) ২০০৬-এর আগস্ট থেকে টাটা সন্সের বোর্ডে রয়েছেন এবং আমি তাঁর গুণ, দক্ষ বোঝাপড়া এবং নম্রতা দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছি। তিনি দায়িত্বপালনের জন্য একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি। আমি আগামী কয়েক বছরে তাঁর সাথে কাজ করার জন্য উন্মুখ হয়ে রয়েছি। এটা তাঁকে আমার অবসরের পর সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে সাহায্য করবে।”
বিতর্কের শুরু হয় এভাবে: প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, রতন টাটার অবসর নেওয়ার পরে, সাইরাস ২০১২ সালে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। তবে তিনি টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে চার বছরেরও কম সময় দায়িত্ব পালন করেন। কিছু বিতর্কের কারণে ২০১৬ সালের অক্টোবরে তাঁকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারণ করা হয়। এদিকে, এই ঘটনায় অবাক হয়ে যায় সমগ্ৰ কর্পোরেট জগৎ। যা পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছয়।