বাংলা হান্ট ডেস্ক: একটি দুর্ঘটনায় হাত ভেঙেছে বাবার! ধার দেনা করে করা হয়েছে অপারেশনও। চিকিৎসকরা বলেছেন এই অবস্থায় তিন মাস করা যাবেনা কোনো কাজ। তাই, সংসারের হাল ধরতে ফুচকা বিক্রি শুরু করল নবম শ্রেণির ছাত্রী কবিতা কুমারী।
কবিতার এই সাহসিকতাকে স্বভাবতই কুর্নিশ জানিয়েছেন সকলে। বিশ্বভারতী চত্বরের সকলেরই পরিচিত ফুচকা বিক্রেতা ছিলেন কপিল দেব শাহ। লকডাউনে দীর্ঘদিন ব্যবসা করতে পারেননি তিনি। সংসার চালাতে দুধের ব্যবসা শুরু করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দুধ দিলেও মিটছিল না অভাব।
এমতাবস্থায়, লকডাউন উঠে গেলে ফের নিজের ফুচকার ব্যবসা শুরু করেন কপিল। পাশাপাশি, খুলে যায় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ও। পরিস্থিতি একটু একটু করে স্বাভাবিক হতে শুরু করতেই ঘটল বিরাট ছন্দপতন। মাস দেড়েক আগেই বোলপুরের চৌরাস্তা এলাকায় একটি টোটোর সঙ্গে ধাক্কা লাগে কপিলের সাইকেলের।
গুরুতর ওই দুর্ঘটনায় হাতের হাড় ভেঙে কয়েক টুকরো হয়ে যায় তাঁর। করতে হয় অপারেশনও। প্রায় ৫০ হাজার টাকারও বেশি খরচ করে প্লেট বসাতে হয় হাতে। ধারদেনা করে সেই টাকা জোগাড় করে চিকিৎসা করানোয় পরিবারকে পড়তে হয় প্রবল আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে।
পাশাপাশি, চিকিৎসক কপিলকে তিন মাস কোনো কাজ করতেও নিষেধ করেন। ফলে পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তির হঠাৎ বসে যাওয়াতে চিন্তায় পড়েন বাকি সদস্যরা। এমতবস্থায়, সংসারের হাল ধরতে নিজেই ফুচকা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় কবিতা।
ছোট থেকে বাড়িতে ফুচকা তৈরি হতে ও বাবাকে তা বিক্রি করতে দেখায় অভিজ্ঞতা তার কাছে ছিলই। তাই, খুব সহজেই পুরো বিষয়টি রপ্ত করে নিয়মিত ফুচকা বিক্রি করতে শুরু করে সে। বর্তমানে প্রতিদিন বিকেলে বোলপুরের বাঁধগোরার সবুজপল্লি থেকে ফুচকার গাড়ি ঠেলে নিয়ে শান্তিনিকেতনের ফাস্ট গেটের সামনে ফুচকা বিক্রি করতে যায় কবিতা।
এই প্রসঙ্গে কবিতা জানিয়েছে যে, “করোনার কারণে এখন অনলাইনে পড়াশোনা চলছে। তাই আমিও অনলাইনে পড়াশোনা করছি। মাঝেমধ্যে টিউশনেও যাই। আগামী বছর আমার মাধ্যমিক পরীক্ষা রয়েছে। সেই কারণেই ফুচকা বিক্রির পাশাপাশি আমি যতটা পারছি পড়াশোনাতেও সময় দিচ্ছি।”
পরিবারের মোট পাঁচজন সদস্যের দায়িত্ব এখন কবিতারই কাঁধে। গত দেড় মাস ধরে ফুচকা বিক্রি করছে সে। কবিতার বাবা কপিল দেব শাহ জানিয়েছেন, “মেয়েকে ফুচকা বিক্রি করতে হবে ভাবতে পারিনি। কিন্তু পরিবারের যা আর্থিক অবস্থা মেয়ে ফুচকা বিক্রি না করলে সংসারা চলবে না। তার উপর আমার চিকিৎসার খরচও রয়েছে।” এদিকে, কবিতা পড়াশোনার পাশাপাশি যেভাবে এত কম বয়সে সংসারের খরচ চালাতে ফুচকা বিক্রি করছে তা দেখে সকলেই প্রশংসা করেছেন। কবিতার এই লড়াইকে স্যালুটও জানিয়েছেন সবাই।