বাংলা হান্ট ডেস্কঃ একদিকে যখন করোনার সংক্রমণে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে দেশ, তখনই অন্যদিকে মৃতদেহ সৎকারকে কেন্দ্র করে দেখা দিয়েছে এক নতুন সমস্যা। রোজই খবর আসছে গঙ্গা এবং যমুনার জলে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে প্রচুর মৃতদেহ। যাদের মধ্যে অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে কোভিডের সংক্রমণে। কিছুদিন আগেই খবর এসেছিল, যমুনায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রায় ১২টি মৃতদেহ। এমনকি তারা কোভিডে মারা গিয়েছেন কিনা এর সঠিক খবর ছিল না প্রশাসনের কাছেও। এদিন ফের একবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠলো গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া এই মৃতদেহ। পূর্বাঞ্চলের অনেক এলাকাতেই জলপ্রবাহ নামের এক কুসংস্কার এখনো বর্তমান। এই প্রথা অনুযায়ী, মৃত্যুর পর মৃতদেহ জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। তবে এরইমধ্যে এখন আবার যুক্ত হয়েছে বাড়তে থাকা কাঠের দাম। কোভিড কালে সংক্রমণের কারণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন কাতারে কাতারে মানুষ যার ফলে সকলের ক্ষেত্রে সম্ভব হচ্ছে না সঠিকভাবে সৎকার্য করাও। এমনকি শ্মশানে স্থান না পাওয়ায় মাঠের মধ্যে অনেক মৃতদেহ পোড়ানোর খবর মিলেছে এর আগেই। এবার জ্বালানি কাঠের দাম হয়ে উঠল মহার্ঘ। আর সেই কারণেই জলে ভাসিয়ে দেওয়ার রীতিকে আঁকড়ে ধরছেন অনেক মানুষ।
6বালিয়া জেলার টুটুবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা রাম মুরারী রায় জানান, দীর্ঘদিন ধরেই গ্রামাঞ্চলে এ ধরনের প্রথা চলে আসছে। তবে বর্তমানে কাঠের দাম বাড়ার কারণে এবং করোনায় অগুনতি মৃত্যুর কারণে এই প্রথাকেই আরো বেশি আঁকড়ে ধরেছে মানুষ। মুশকিল হয়ে উঠেছে সৎকার্যের লোক পাওয়াও। অনেক ক্ষেত্রেই কাঠের দাম হয়ে উঠেছে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। যার ফলে রীতিমতো অসুবিধায় পড়ছেন গ্রামের সাধারণ মানুষ। একথা ঠিক যে সরকার তরফে অন্তিম সংস্কার করার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধ্যমে ৫০০০ টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু গ্রামবাসীদের মতে টাকা পৌঁছানোর ব্যবস্থা যথেষ্ট জটিল। তাই অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনের সময় পাওয়া যায় না সরকারি অর্থসাহায্য। এছাড়া অন্য আরেকটি বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে করোনা পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে। অনেক ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটছে করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হলেও পরিবারের কাছে নেই কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট। আর সেই কারণে সরকারি অর্থসাহায্য থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। অনেকক্ষেত্রে আবার রোগীর মারা যাবার অনেক পরে এসে পৌঁছাচ্ছে রিপোর্ট।
স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হয়েছে এক বিশ্রী পরিস্থিতি। অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও। মৃত্যুর সংখ্যা অত্যন্ত বেশি হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে কোনো পরিষ্কার রিপোর্ট নেই। সেক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে গ্রামবাসীদের। যদিও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মৃতদেহের সংখ্যা নিয়ে অডিট করে রিপোর্ট তৈরি করা হবে। তবে যেভাবে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা তাতে যে রীতিমতো আতঙ্কিত গ্রামবাসী এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। আমলা সংসদীয় এলাকার নাগরিয়া সদন গ্রামের প্রধান গুড়ি দেবী জানান, গত ১০ দিনে তাদের গ্রামে প্রায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এভাবেই বেড়ে চলেছে মৃত্যু মিছিল। অন্তিম সংস্কার করাও বড় দায় হয়ে উঠছে গ্রামবাসীদের জন্য। আগে শুধুমাত্র বৃদ্ধদের ইচ্ছা অনুসারে অথবা সর্পদংশন কিংবা আত্মহত্যা ক্ষেত্রে জলে মৃতদেহ ভাসিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু এখন জল প্রবাহের আশ্রয় নিতে হচ্ছে বেশিরভাগ পরিবারকেই। পুরনো দিনের কলেরা কিংবা অন্যান্য মহামারীর ছবি ফের একবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে সিনেমার মতো।
হাসপাতালের বেড নেই, নেই চিকিৎসার পর্যাপ্ত সরঞ্জাম, এমনকি বেশ কিছু ক্ষেত্রে ঘাটতি তৈরি হয়েছে অক্সিজেনেরও। এমতাবস্থায় যেন আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে গোটা একটা দেশ। সান্তাল টাউন এলাকায় গত ১৫ দিনে প্রায় ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। নবাবগঞ্জে গত ১৫ দিনের মধ্যে মারা গিয়েছেন প্রায় ৪০ জন মানুষ। সঠিকভাবে পরীক্ষা না হওয়ার কারণে গ্রামগুলিতে রোজই প্রায় আক্রান্ত হচ্ছেন ৫০০ থেকে ৭০০ মানুষ। পরিস্থিতি যে ক্রমাগত আরো অনেক বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে তা বলাই বাহুল্য। অবস্থা খুব ভাল নয় আমাদের রাজ্যের গ্রাম গুলিতেও। স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পরীক্ষার অভাব, মানুষের অসচেতনতা সমস্ত মিলিয়ে তৈরি হয়েছে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি।