বাংলাহান্ট ডেস্ক : চলছে মাধ্যমিক পরীক্ষা (Madhyamik Pariksha)। প্রত্যেকদিনই টোটো করে স্কুলে আসছে দেবশ্রী। আপনার শুনে মনে হতেই পারে এতে খুব স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু না, এই ঘটনা আর পাঁচটা ঘটনা থেকে একেবারেই অন্যরকম। কারণ দেবশ্রী স্কুলে টোটো তে চেপে আসছে না, আসছে নিজে টোটো চালিয়ে। আসলে, কথায় বলে, যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। কোলাঘাট গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী দেবশ্রী খাঁড়া যেন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
প্রত্যেক দিনই যাত্রীর আসনে মা বসিয়ে, আবার কখনও কখনও বাবাকে নিয়ে রোজ জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক দিতে স্কুলে যাচ্ছে দেবশ্রী। কোলা গ্রামের বাসিন্দা দেবশ্রীর কেটিপিপি হাইস্কুলে মাধ্যমিকের সিট পড়েছে। মঙ্গলবার জীবন বিজ্ঞান পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় স্কুল ড্রেস পরে জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে টোটো চালাতে দেখে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন।
যে বয়স শুধুই লেখাপড়ার, সেই বয়সেই দেবশ্রীকে তুলে নিতে হয়েছে সংসারের গুরুদায়িত্ব। শুধু তাই নয়, টোটো চালিয়ে সংসারের হাল ধরতেও হয়েছে। কিন্তু, প্রশ্ন হল ঠিক কী কারণে দেবশ্রীকে টোটো চালকের আসনে বসতে হল? দেবশ্রী বলেন, “বছর খানেক আগে একটি অ্যাক্সিডেন্টে বাবার পায়ে গুরুতর আঘাত লাগে। অপারেশন করে বসাতে হয় প্লেট। তারপর থেকেই বাবা শারীরিক দিক থেকে অক্ষম হয়ে পড়েন সংসার চালাতে।”
জানা গিয়েছে, সেই সময়ই বাস্তবের কাছে মাথা নত না করে, টোটোর চাবি হাতে তুলে নেয় দেবশ্রী, সাথে নিজের পড়াশুনার দায়িত্বও। তবে তাকে হার মানাতে পারেনি সংসারের কঠিন পরিস্থিতি। রাতে পড়াশুনো আর দিনে সংসারে অর্থ জোগান দেওয়া, দুই-ই চালিয়ে যাচ্ছেন এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কোলাঘাটের দেবশ্রী খাঁড়া। ভবিষ্যতে পড়াশোনার পাশাপাশি টোটো চালিয়েই সংসার চালাতে চায় দেবশ্রী।
বাবা সনাতন বাবু বলেন, ‘আমি অন্য একটা জায়গায় ছোটখাট কাজ করি। অভাবের সংসারে বসে থাকা সম্ভব নয়। সব পরীক্ষায় আসতে পারিনা। আজ কাজ নেই তাই এসেছি। মেয়ে আমাকে টোটো চালাতে দেয়নি। আমাকে ও ওর মাকে টোটোতে বসিয়ে নিজে চালিয়ে এসেছে।’ তার এই কঠোর পরিশ্রমকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পরিবারের বাবা-মা থেকে শিক্ষকেরাও। দেবশ্রীর কঠোর পরিশ্রমের এই জীবন গ্রামগঞ্জে থাকা অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদেরও অনুপ্রেরণা দেবে বলেই মনে করছেন অনেকে।