বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে চাকরির আকাল পরিলক্ষিত হয়েছে সর্বত্র। পাশাপাশি, করোনার মত ভয়াবহ মহামারীর পরে যেন বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে সবকিছু। যার জেরে আরও বেড়ে গিয়েছে চাকরির শূন্যতা। যে কারণে সংসার চালাতে অনেকেই পেশাগত ভাবে বেছে নিচ্ছেন বিভিন্ন পথ। তবে, এবার এমন একটি ঘটনা সামনে এসেছে যা নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণা জোগাবে সবাইকে।
উচ্চশিক্ষিতা হয়েও চাকরি পাননি তিনি। তবে, চাকরি না পেয়ে থেমেও থাকেননি তালডাংরার সাবড়াকোণের বৃষ্টি। বরং দিন গুজরান করতে লোকাল ট্রেনের মহিলা কামরায় পোশাক বিক্রি করার কাজই মাথা উঁচু করে শুরু করেন তিনি। পরিবারের হাল ধরতে বৃষ্টির এই কঠিন লড়াইকে সকলেই কুর্ণিশ জানিয়েছেন।
শুধু তাই নয়, বৃষ্টির শিক্ষাগত যোগ্যতা শুনেও অবাক হয়ে গিয়েছেন সবাই। ভূগোলে এমএ, বি.এড করা বৃষ্টি যেখানে হতে পারতেন স্কুলের শিক্ষিকা সেখানে ভাগ্যের পরিহাসে আজ তিনি ট্রেনের যাত্রীদের কাছে পোশাক বিক্রি করছেন।
জানা গিয়েছে যে, বৃষ্টির আসল নাম সুপ্রিয়া পাল। তবে তিনি “বৃষ্টি” নামেই সমধিক পরিচিত যাত্রীদের কাছে। বছর বত্রিশের বৃষ্টির বাড়িতে স্বামী ও শাশুড়ি ছাড়াও সাড়ে সাত বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। এমতাবস্থায়, সংসারের হাল ধরতে লোকাল ট্রেনে পোশাক বিক্রি করতে শুরু করেন তিনি। সকালে বাড়ির কাজ শেষ করে সাবড়াকোণ থেকে বাসে করে পিয়ারডোবা স্টেশনে পৌঁছে তিনি কখনও চলে যান বাঁকুড়া আবার কোনোদিন বৃষ্টির গন্তব্য থাকে মেদিনীপুর। আর সেই কারণেই বাঁকুড়া থেকে মেদিনীপুর শাখার অধিকাংশ লোকাল ট্রেনের নিত্যযাত্রীরা বৃষ্টিকে এক ডাকেই চেনেন।
লোকাল ট্রেনের মহিলা কামরায় বৃষ্টি মূলত শাড়ি, চুড়িদার, পাটিয়ালা, টপ, প্লাজো ছাড়াও শিশুদের বিভিন্ন পোশাক বিক্রি করতে থাকেন। তবে, বৃষ্টির এই লড়াকু মানসিকতা কিন্তু জীবনের প্রথম থেকেই দেখা গিয়েছে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার আগে তাঁর বাবার ক্যান্সার ধরা পড়ায় তখন থেকেই আশেপাশের গ্রামে ঘুরে মেয়েদের পোশাক বিক্রি করতেন বৃষ্টি। এভাবেই নিজের কলেজের খরচও সামলে নেন তিনি। ২০১১ সালে তাঁর বিয়ে হয়ে গেলেও পড়াশোনা বন্ধ করেননি তিনি। বরং, বিয়ের পরই ভূগোলে এম.এ এবং পরে বি.এড করেন বৃষ্টি।
এই প্রসঙ্গে বৃষ্টি জানিয়েছেন যে, একদিন এমন সময়ও গিয়েছে যে, চাল ধার করে এনে ভাত ফোটাতে হয়েছে। মেয়েটাকেও ভালো খাবার কিনে দিতে পারিনি। তবে, আজ সেই পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। আসলে, হকারির কাজকে কোনো মাপকাটিতে বিচার করিনি বলেই স্বাবলম্বী হতে পেরেছি। পরিবারের জন্য সৎ পথে রোজগার করতে হবে। এটাই সবচেয়ে বড় কথা।