বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: নাটকীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হার ভারতের। এই ফলাফলের ভারত তো চাপে রইলোই, সেইসঙ্গে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেল পাকিস্তানের। সূর্যকুমার যাদব, অর্শদীপদের মরিয়া চেষ্টা সত্ত্বেও মিলার এবং মার্করমের বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিংয়ে ভর করে ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতে ভারতের কাছ থেকে গ্রুপের শীর্ষস্থান ছিনিয়ে নিল দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্রুপের ভবিষ্যৎ এবার নির্ভর করবে বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ বনাম ভারত ম্যাচের ওপর।
আজ রোহিত শর্মা দলে অক্ষর প্যাটেল এর জায়গায় দীপক হুডাকে এনেছিলেন একজন অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান খেলানোর জন্য। টসে যেতে তিনি প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু প্রথমে ব্যাট করতে নেমে আজ আরো একবারও ব্যর্থ হন ভারতীয় ওপেনাররা। লোকেশ রাহুল নেদারল্যান্ডস ম্যাচের মতো আজকেও মাত্র ৯ রান করে আউট হন। রোহিত শর্মা গত ম্যাচে ভাগ্যের সাহায্য পেয়ে বল রান করেছিলেন। এই ম্যাচে ভাগ্য তার সঙ্গ দিলো না। লুঙ্গি এনগেডির শিকার হয়ে মাত্র ১৫ রান করে প্যাভেলিয়ানে ফেলেন তিনি। গত দুই ম্যাচ ভারতের হয়ে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা বিরাট কোহলিও আজ লুঙ্গির শিকার। দক্ষিণ আফ্রিকার এই পেসারের দাপটে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ভারতের টপ অর্ডার।
ঠিক এই সময় ভারতীয় ব্যাটিং অর্ডারে সূর্যোদয় ঘটে। ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপকে রক্ষা করতে রুখে দাঁড়ান সূর্যকুমার যাদব। চলতি বছরে দেশে বিদেশে দুই জায়গাতেই আয়োজিত দ্বিপাক্ষিক সিরিজ গুলিতে প্রচুর রান করছিলেন তিনি। কিন্তু বড় টুর্নামেন্ট গুলিতে নামি দলগুলির বিরুদ্ধে বার বার ব্যর্থ হছিলেন স্কাই। আজ সমর্থকদের সেই আফসোস মিটিয়ে নিজের চিরপরিচিত ঢঙে ব্যাটিং করে ৪০ বলে ৬টি চার এবং ৩টি ছক্কা সহ ৬৮ রানের একটি ঝকঝকে ইনিংস খেলেন তিনি। কিন্তু অপর প্রান্তে একজন সতীর্থও তাকে সাহায্য করতে পারেননি। ফলে কুড়ি ওভার শেষে ভারত কেবলমাত্র ১৩৩ রানই স্কোরবোর্ডে তুলতে পেরেছিল। ৪ ওভারে ২৯ রান দিয়ে ৪টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়েছিলেন প্রোটিয়া বোলার লুঙ্গি এনগিডি। কৃপণ বোলিং করে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন অভিজ্ঞ দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার ওয়েন পার্নেল।
রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বাধাপ্রাপ্ত হয় দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটিং লাইন আপ। নিজের প্রথম ওভারেই প্রটিয়া ব্যাটিং লাইন আপের ২ খিলান উপড়ে ফেলেন অর্শদীপ সিং। গত দুই ম্যাচে দুরন্ত ফর্মে থাকা কুইন্টন ডি ককের সাথে সাথে ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজের শেষ ম্যাচে এবং বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে শতরান করা রিলি রসৌকে ফিরিয়ে দেন তিনি। কৃপণ বোলিং করতে করতে চূড়ান্ত অফ ফর্মে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক তেম্বা বাভুমাকে ফেরত পাঠান শামি।
কিন্তু এই সময় তুই অভিজ্ঞ প্রোটিয়া ব্যাটার এইডেন মার্করম ও ডেভিড মিলারের ঠান্ডা মাথার ব্যাটিংয়ে ম্যাচে ফেরে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রাথমিক বিপর্যয়কে সামাল দিয়ে অত্যন্ত ধীরগতিতে ব্যাটিং করতে শুরু করেন দুজনে। সেট হওয়ার পর আস্তে আস্তে দুজনেই রানের গতি বাড়ান। তাদের মধ্যে ৭৬ রানের একটি অসাধারণ পার্টনারশিপ হয়। এর মধ্যে একবার মার্করমের ক্যাচ ফেলেন বিরাট। বাগে পেয়েও তাকে রান আউট করতে ব্যর্থ হয় অধিনায়ক রোহিত। তখন মনে হচ্ছিল ভারত ম্যাচ থেকে পুরোপুরি ছিটকে গিয়েছে ঠিক তখনই অর্ধশতরান করা মার্করমকে (৫২) ড্রেসিংরুমে ফিরিয়ে ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন হার্দিক পান্ডিয়া। কিন্তু ক্রিজে তখনও উপস্থিত ছিলেন ডেভিড মিলার। অশ্বিনের ওভারে পরপর দুটি ছক্কা মেরে তিনি ম্যাচ পুরোপুরি দক্ষিণ আফ্রিকার নাগালে এনে দেন। কিন্ত সেই ওভারে স্টাবসের উইকেট তুলে ভারতকে লড়াইয়ে টিকিয়ে রাখেন তারকা অফস্পিনার। তার ঠিক পরের অর্থাৎ ১৯ তম ওভারে শামির প্রথম বলে চার মেরে অর্ধশতরান পূরণ করেন মিলার। প্রথম বলে বাউন্ডারি খেলেও শামি সেই ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে খেলাটি শেষ ওভার অবধি নিয়ে যেতে সক্ষম হন। কিন্তু ভুবনেশ্বর কুমারের পক্ষে মিলারের মতো ব্যাটসম্যান সামনে থাকা অবস্থায় সেই স্কোর ডিফেন্ড করা কার্যত অসম্ভবের শামিল ছিল। তাও প্রথম দুটি বলক যে তিনি আটকে রেখেছিলেন। কিন্তু ওভারের তৃতীয় বলে চার মেরে স্কোর সমান করে দেন মিলার। শেষ পর্যন্ত দুই বল বাকি থাকতেই জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।