বাংলা হান্ট ডেস্ক: এবার দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ক্রমবর্ধমান ভর্তুকি বিল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে RBI (Reserve Bank Of India)। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ভর্তুকি বন্ধ করা না হলে দেশে উন্নয়নের চাকা থেমে যাবে। মূলত, RBI ডিসেম্বর ২০২২-এর Financial Stability Report-এ এই তথ্য জানিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, রাজ্যগুলির ভর্তুকি বিল যদি এভাবে বাড়তে থাকে সেক্ষেত্রে তাদের কাছে উন্নয়ন এবং মূলধন ব্যয়ের জন্য অর্থ অবশিষ্ট থাকবে না। শুধু তাই নয়, ভর্তুকিতে রাজ্যগুলির ব্যয় ২০২১-এর অর্থবর্ষে ১২.৯ শতাংশ এবং ২০২২ সালে ১১.২ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটেছে। যদিও, ২০২০-র অর্থবর্ষে এই পরিসংখ্যানে পতন দেখা গিয়েছিল। রিপোর্ট অনুসারে, রাজ্যগুলির মোট রেভিনিউ ব্যয়ে ভর্তুকির অংশ ছিল ২০১৯-২০ সালে ৭.৮ শতাংশ। যা ২০২১-২২ সালে বেড়ে ৮.২ শতাংশে পৌঁছেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, একাধিক রাজ্যে ভর্তুকি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এটাই হল চিন্তার বিষয়। এমনকি পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের রিপোর্টেও কিছু রাজ্যের রেভিনিউ ব্যয়ে ভর্তুকির ভাগ বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বর্তমানে অনেক রাজ্যে সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ ও জল দেওয়া হচ্ছে। একইভাবে, কিছু রাজ্যে নামমাত্র মূল্যে রেশনও বিতরণ করা হচ্ছে। আর তারই প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে এই পরিসংখ্যানে। চলতি বছর ইন্ডিয়া রেটিং-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঞ্জাব সহ পাঁচটি রাজ্য গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়তে পারে। এর কারণ হল, এই রাজ্যগুলির ভর্তুকির ভাগ অনেক বেড়েছে। পাঞ্জাব ছাড়াও ওই তালিকায় রয়েছে ছত্তিশগড়, রাজস্থান, কর্ণাটক এবং বিহার।
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে অনুমান করা হচ্ছে: এই প্রসঙ্গে সংস্থাটির প্রধান অর্থনীতিবিদ দেবেন্দ্র পান্ত জানিয়েছেন যে, প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতির কারণে রাজ্যগুলি মূলত নন-মেরিট ভর্তুকিতে বেশি খরচ করছে। শিক্ষা ব্যতীত বেশিরভাগ ভর্তুকি নন-মেরিট হিসেবে বিবেচিত হয়। দেশের রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচনে বিভিন্ন ভর্তুকির প্রতিশ্রুতি দেয় এবং ক্ষমতায় এলে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করে। এর ভার পড়ে সরকারি কোষাগারে। এই কারণে সরকারের কাছে উন্নয়নের অর্থ কমে আসে। ইতিমধ্যেই পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান এন কে সিং প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করেছেন।
রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, জানুয়ারি থেকে ধারাবাহিকভাবে সন্তোষজনক সীমার উপরে থাকার পরে দেশের খুচরো মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হয়েছে। পাশাপাশি, সেটিকে আরও নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। যদিও, কোর মুদ্রাস্ফীতির স্থায়িত্ব এবং এর বৃদ্ধি চাপ অব্যাহত রাখতে পারে। রিপোর্ট অনুযায়ী, “RBI মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। এটি মুদ্রাস্ফীতিকে সন্তোষজনক সীমার মধ্যে এবং লক্ষ্যের কাছাকাছি নিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির শঙ্কাও কাটবে।”
মুদ্রাস্ফীতি কেন বাড়ে: আর্থিক স্থিতিশীলতার প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতীয় অর্থনীতি বিশ্বজুড়ে চলা একাধিক প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। কিন্তু শক্তিশালী সামগ্রিক অর্থনৈতিক বিষয় এবং আর্থিক ও অ-আর্থিক উভয় ক্ষেত্রেই একটি সুস্থ ব্যালেন্স শীটের কারণে আর্থিক ব্যবস্থা ভালো অবস্থানে রয়েছে। যদিও মুদ্রাস্ফীতি উচ্চস্থানেই রয়ে গেছে। এমতাবস্থায়, এটি এখন দ্রুত মুদ্রানীতির ব্যবস্থা এবং সরবরাহের দিকে হস্তক্ষেপের কারণে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। RBI জানিয়েছে যে, শক্তিশালী মার্কিন ডলার মুদ্রাস্ফীতি বাড়ায়। কারণ সেক্ষেত্রে আমদানি ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। এই কারণে সেইসব পণ্যের দাম বেড়ে যায়, যেগুলি ডলারে আমদানি করা হয়।
এছাড়াও, রিপোর্টে জানানো হয়েছে, টাকার দর ক্রমশ কমে যাওয়ায় স্থানীয় মুদ্রায় পণ্যের দাম এখনও উচ্চস্থানে রয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, এর ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও সঙ্কটও তৈরি হয়। অভ্যন্তরীণ আর্থিক পরিস্থিতি সম্পর্কে, RBI জানিয়েছে যে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মুদ্রাস্ফীতি সন্তোষজনক সীমার মধ্যে আনতে মুদ্রানীতি কঠোর করা হয়েছে।
এনপিএ সম্পর্কে ভালো খবর: প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, RBI মুদ্রাস্ফীতি ২ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার দায়িত্ব নিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক প্রধানত দ্বি-মাসিক মুদ্রানীতি পর্যালোচনার সময় খুচরো মুদ্রাস্ফীতির দিকে নজর দেয়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সন্তোষজনক স্তরের উর্ধ্বসীমা অর্থাৎ ৬ শতাংশের উপরে থাকার পরে নভেম্বরে তা নেমে এসেছে ৫.৮৮ শতাংশে। এরই মধ্যে ব্যাঙ্কগুলির গ্রস এনপিএ সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পাঁচ শতাংশে নেমে এসেছে। এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা ভালো স্থানে থাকার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পুঁজিযুক্ত অবস্থাতেও রয়েছে।