বাংলাহান্ট ডেস্ক : অ্যাডভেঞ্চার কার না পছন্দ! সেই অ্যাডভেঞ্চারের ই স্বাদ নিতে আগ্রহী পর্যটকেরা পুজোর মধ্যেই দলে দলে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন দীঘা শংকরপুর মেরিন ড্রাইভে। এক মাসও বের হয়নি, এই মেরিন ড্রাইভ দিয়ে উদ্বোধন করেছেন বাংলার মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাহলে এত জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও কেন বন্ধ করতে হলো দীঘা শংকরপুর মেরিন ড্রাইভ?
এই দীঘা শংকরপুর মেরিন ড্রাইভ দিয়ে গাড়ি চালিয়ে পর্যটকরে ভেবেছিলেন সমুদ্র উপভোগ করতে করতেই পৌঁছে যাবেন দিঘায়। কিন্তু তাদের সেই আশার গুড়ে বালি দিয়ে উৎসবের মরশুমেই এই মেরিন ড্রাইভ বন্ধ করে দেওয়ার নোটিশ জারি করা হয়েছে। আর তার সাথে সাথেই মুহূর্তে ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে পর্যটকদের মেরিন ড্রাইভের নীল স্বপ্ন।
সেচ দপ্তরের তরফ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মেরিন ড্রাইভের একাংশ। রাস্তার ধারে রীতিমতো বোর্ড ঝুলিয়ে পর্যটক এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সেই রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সেচ দপ্তর। বলা বাহুল্য, ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সুদীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ টি নিমেষের মধ্যে সহজ করে দিয়েছিল মন্দারমনি থেকে দীঘায় আসা যাওয়া। দীঘা শংকরপুর তাজপুর এবং মন্দারমনি যেন গাঁথা হয়ে গিয়েছিল এক সুতোয়। কিন্তু কি এমন হলো যে ১৭৩ কোটি টাকা ব্যয় করে তৈরি করাই মেরিন ড্রাইভ মাত্র এক মাসের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হল?
জানা গেছে, পুজোর মরশুমে ঝাঁকে ঝাঁকে আসা পর্যটকের অনেকেই এই মেরিন ড্রাইভের মধ্যে দিয়ে ঘুরতে যাওয়ার সময় বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন। ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থাকতে হয়েছে তাদের। স্থানীয়দের সাহায্যে পর্যটকেরা বিপদ কাটিয়ে ফিরে আসতে পেরেছেন। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনের তরফ থেকে বিন্দুমাত্র সাহায্য তারা পায়নি। আর লাগাতার লিখিতভাবে এই অভিযোগ আসতেই থাকে পূর্ব মেদনীপুর জেলার জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝির কাছে। এবং কোন সমাধান না পেয়ে শেষ পর্যন্ত দীঘা যাওয়ার পথে শংকরপুর থেকে তাজপুর পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভের একাংশ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শংকরপুর থেকে তাজপুরের মাঝে মেরিন ড্রাইভের এই অংশের রাস্তা যাতায়াতের জন্য একেবারেই অযোগ্য বলে দাবি করেছেন পর্যটকেরা। তাদের অভিযোগ, সেই রাস্তার আগে কোনও সতর্কতামূলক বার্তা দেওয়া নোটিশ লাগানো নেই কিন্তু ওই অঞ্চলে রাস্তায় প্রায় তিন ফুট নতুন গভীর একাধিক গর্ত রয়েছে। যেই গর্তে একবার ফেঁসে গেলে, গাড়িকে পুনরায় টেনে তোলা খুব মুশকিল এর কাজ। প্রশাসনের তরফ থেকে কোনও সাহায্য কখনই পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে পর্যটকদের তরফ থেকে। তারা এটাও জানিয়েছেন যে স্থানীয় বাসিন্দারা না থাকলে কোনভাবেই এই বিপদ থেকে মুক্তি পাবার নেই কোনও রাস্তা। এমনকি গর্তগুলি কতটা গভীর তা দূর থেকে বোঝারও কোন উপায় নেই কারণ সেই গর্তগুলি সব সময় ভর্তি থাকে কাদা এবং জলে। হলে গভীরতা না আজ করতে পেরেই গাড়ির চাকা ঢুকে যায় গর্তে।
সেচ দপ্তরের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ২০২০ সালের আমফান এবং ইয়াসের কারণে যে তীব্র জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল তাতেই শংকরপুর থেকে তাজপুরের মধ্যবর্তী মেরিন ড্রাইভের এই রাস্তা একেবারেই যাতায়াতের জন্য অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ওই রাস্তার উপর কংক্রিট দিয়ে তৈরি সমুদ্রবাদ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হলেও ক্রমাগত নিম্নচাপের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের জন্য শেষ দপ্তর সেই কাজ শুরু করতে পারেনি । ফলে ওই অঞ্চলের রাস্তা হয়ে গেছে এক্কেবারেই চলাচলের অনুপযুক্ত। তাই এই কাজ শুরু করার লক্ষ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এই অঞ্চলের মেরিন ড্রাইভের রাস্তা।
কিন্তু শেষ দপ্তরের তরফ থেকে জানানো এই উত্তরেও রয়েছে গলদ। রাস্তা যদি অনুপযোগী ছিল চলাচলের জন্য তাহলে কেন এত তাড়াহুড়ো করে রাস্তা উদ্বোধন করা হলো? প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি জানিয়েছেন, বর্তমানে মেরিন ড্রাইভার ওই অংশে মেরামতির কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে খুব তাড়াতাড়ি আবার খুলে দেওয়া হবে রাস্তা।