দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কনকনে ঠান্ডাতেও দেশের রাজধানী সরগরম। একদিকে মূলত নাগরিকত্ব আইনের সুফল ও অন্যদিকে এই আইনকে কেন্দ্র করে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে শাহীনবাগ আন্দোলনে বারবার উঠে আসা দেশবিরোধী স্লোগান ও কট্টর ইসলামিক বক্তব্য কে সামনে রেখে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের প্রচার এখন তুঙ্গে। দিল্লির তৃতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার বাঙালি অঞ্চলগুলোতে 2020 দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের বিজেপির হয়ে প্রচারে নেমেছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। গতকাল দিল্লির পালাম বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী বিজয় পন্ডিত-এর সমর্থনে মহাবীর এনক্লেভ, কালিবাড়ি কেন্দ্রিক বাঙালি কলোনিতে প্রচারে ঝড় তুললেন দিলীপ ঘোষ। তিনি এই অঞ্চলে বসবাসকারী বাঙালি ও অবাঙালি ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, দিল্লির আমআদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল এখন সমর্থক হয়েছেন জিন্নার।
তিনি আরো বলেন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুরু করে, দিল্লির বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষত জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ও শাহীনবাগ অঞ্চলের যে আন্দোলন চলছে, তা মূলত বিরোধী রাজনৈতিক দলের।এই বিভ্রান্তিমূলক প্রচারে প্রভাবিত হয়ে এই আন্দোলনের পথে পা বাড়িয়েছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশ। যদিও তিনি ভোটারদের সতর্ক করে বলেন যে এই আন্দোলন থেকে দেশ বিরোধী স্লোগান উঠছে, এই আন্দোলনের মঞ্চ থেকে দেশ ভাগ করার কথা উঠছে, এমনকি এই আন্দোলনের ছোট ছোট বাচ্চাদের অংশগ্রহণ করিয়ে তাদের মধ্যে বিদ্বেষ ও বিভেদের বীজ বপন করছে এক অংশের মানুষ।
যা ভবিষ্যতের জন্য খুবই দুশ্চিন্তার কারণ। আর এই দেশ বিরোধী স্লোগান দেওয়া আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে দিল্লির আম আদমি পার্টির কেজরিওয়ালের দল ও কংগ্রেস। শাহীনবাগ আন্দোলনের ফলে দীর্ঘদিন যাবৎ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে, জাতীয় সড়ক বন্ধ করে এই আন্দোলন যারা করছেন তারা সাধারণ মানুষ ও সেখানকার ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতির মুখে দাঁড় করিয়েছে। যখন দিল্লির আম আদমি পার্টি উন্নয়নকে সামনে রেখে প্রচার করছেন,তখন ঠিক সেই উন্নয়নকে কটাক্ষ করে দীলিপবাবু বলেন পশ্চিমবঙ্গের রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি খুবই খারাপ, কিন্তু তার থেকেও বেশি খারাপ দিল্লির। তিনি বলেন দিল্লি দেশের রাজধানী সেই রাজধানীর মানুষকে ফ্রি তে পাইয়ে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে কেজরিওয়াল সরকার তা দিল্লির পরিকাঠামোগত উন্নয়ন কে স্থগিত করে দিয়েছে।
দেশের অন্যান্য গরিব রাজ্যে ফ্রি প্রথা চালু নেই, কিন্তু এই সরকার দিল্লি কে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছেন , মানুষকে পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ফের ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখছে তারা। মানুষ জানে যে কোন সরকার কিছু ফ্রী দিতে পারেনা, তাই সাধারণ মানুষের দেওয়া করের পয়সাতেই এই ছাড় দিচ্ছে কেজরিওয়াল সরকার। উপস্থিত ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন কেন্দ্রে বিজেপি সরকার রয়েছে, যদি দিল্লিতে বিজেপি সরকার হয় তাহলে কেন্দ্র-রাজ্য যৌথভাবে উন্নয়নের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাবে ।এবং দেশের রাজধানী দিল্লি কে একটি আন্তর্জাতিক মানের শহরে পরিণত করবে বলে বিজেপি বদ্ধপরিকর। তিনি আরো বলেন যে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে যেখানে বিজেপি ক্ষমতায় আছে সেখানে যে গতিতে উন্নয়ন হচ্ছে তার থেকেও আরও বেশি করে উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে দিল্লির জন্য বিজেপির।
দিলীপ ঘোষ কেজরিওয়ালকে কটাক্ষ করে বলেন যে দেশের সেনাবাহিনী পুলওয়ামাতে যখন সন্ত্রাসী হামলায় শহীদ হয় তখন সারাদেশে শুধু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আর দিল্লির কেজরিওয়াল এই দুজনে পাকিস্তানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে প্রশ্ন তোলেন সরকারের দিকে।এমনকি দেশের সেনাবাহিনীর প্রতিও আঙ্গুল তুলতে দ্বিধাবোধ করে না মমতা ব্যানার্জি ও অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তাই এবার দিল্লির সাধারণ মানুষকে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিজেপিকে দিল্লির ক্ষমতায় নিয়ে আসতে হবে এবং দিল্লি কে আন্তর্জাতিক মানের শহর গড়ার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে হবে। বাঙ্গালীদের মধ্যে দিলীপ ঘোষের বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দিল্লির বাঙালি অঞ্চলগুলোতে দিলীপ ঘোষকেই প্রধানত প্রচারের মুখ হিসেবে ব্যবহার করছে বলেই মনে করছেন দিল্লির রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল।