বাংলা হান্ট ডেস্ক: NRC নিয়ে নিয়ে রীতিমতো বেড়েই চলেছে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ। এ বিষয়টিতে আরো একবার নুন ছড়ালেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি মন্তব্য করেন, ‘ভোটে টান পড়েছে, তাই NRC নিয়ে রাস্তায় নেমেছে তৃণমূল। তবে তৃণমূল কেন, খোদ মমতা ব্যানার্জি রাস্তায় নামলেও NRC আটকাতে পারবেন না।’ এদিন এরই সাথে সাথে দিলীপ জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানান যাতে মালদা জেলার বানভাসি মানুষজনকে পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
উত্তরবঙ্গ সফর শেষে আজ মালদা থেকে কলকাতা ফিরছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। অন্যদিকে তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেল NRC নিয়ে গতকালই মালদা কলেজ অডিটরিয়ামে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করেছিল। সংবাদমাধ্যমের সামনে পড়তেই দিলীপ বাবুকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, “TMC-র এখন ভোটে টান পড়েছে । তাই রাস্তায় নেমে ভয় দেখানো শুরু করেছে তারা। এতদিন মুসলমানদের ভয় দেখাচ্ছিল, এখন হিন্দুদের ভয় দেখাচ্ছে। কিন্তু বিজেপি নিজের বক্তব্য থেকে সরবে না আগেও আমরা যা বলেছি এখনও তাই বলব। কোনও হিন্দু উদ্বাস্তুকে ভারত থেকে কেউ তাড়াতে পারবে না। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের এখানে থাকতে দেওয়া হবে না।”
এদিন দিলীপ আরও বলেন, “যদি মমতা ব্যানার্জি নিজে রাস্তায় নামেন, তাও তিনি এটা আটকাতে পারবেন না। যেভাবে তিনি নোটবাতিল, GST, তিন তালাক বিল, 370 আটকাতে পারেননি, সেভাবেই NRC হলেও আটকাতে পারবেন না। এখন কয়েকটি আত্মহত্যার ঘটনায় দু’লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সেই টাকা পাওয়ার জন্য যে’ই মরছে, বলে দিচ্ছে NRC । বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া করে আত্মঘাতী হলেও বলে দেওয়া হচ্ছে NRC। পাগল কুয়োয় লাফ দিলেও হয়ে যাচ্ছে NRC।”
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নির্দেশ দিয়ে দলের রাজ্যসভার সদস্য সুখেন্দুশেখর রায় ও প্রাক্তন সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী কে মঙ্গলবার গুয়াহাটিতে পাঠিয়েছিলে। তারা সেখানে গিয়ে অসমের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়া সাধারণ মানুষের অভিযোগ শুনলেন।
অসমের তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা বাংলার নেতাদের কাছে জানিয়েছেন যে নাগরিকপঞ্জি তে ১৯ লক্ষ মানুষের নাম বাতিল করা হয়েছে। এই সমস্ত মানুষদের অনেকেরই বৈধ কাগজপত্র ছিল। কিন্তু বর্তমানে মূল সমস্যা হল তালিকা থেকে বাদ পড়ার ১২০ দিনের মধ্যে আদালতে আবেদন করতে হবে। এরপরেই শুরু হবে শুনানি।
অসম নেতারা অভিযোগ জানিয়েছেন, আবেদন নেওয়া হচ্ছে এক জেলায়, তার শুনানি নেওয়া হচ্ছে অন্য জেলায়। যার জেরে অনেকেই শুনানিতে হাজির হতে পারছেন না। এমনকি যে যায়গায় শুনানি হবে, সে জায়গাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যার ফলে নাম বাদ চলে যাচ্ছে তালিকা থেকে। অসমের তৃণমূল নেতারা মনে করছেন এই ঘটনার পেছনে কোনো রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে।
অসমের অসহায় মানুষরা আইনি সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন বাংলার দুই নেতার কাছে। সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘দলের নেত্রীর কাছে একটি রিপোর্ট দেব। এ ব্যাপারে তিনি যেমন নির্দেশ দেবেন, সেই অনুযায়ী কাজ হবে।’ সুখেন্দু আরও বলেন, ‘প্রয়োজন হলে আবার গুয়াহাটি যাব। আমরা বলেছি, মমতা ব্যানার্জি আপনাদের পাশে আছেন। তিনি নাগরিকপঞ্জি নিয়ে প্রতিবাদ করছেন। আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যান।’ এদিনই দুই নেতা গুয়াহাটি থেকে ফিরে আসেন।