বাংলা হান্ট ডেস্ক : গাড়ি জগতের রাজা বলা হয় টাটা গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজকে (TATA Group Of Industries)। খ্যাতনামা এই কোম্পানির মালিক রতন টাটার (Ratan Tata) বাবা জামসেদজি টাটা হলেন প্রথম ভারতীয় যিনি নিজের গাড়ি কিনেছিলেন। দেশের মাটিতে তৈরি হওয়া এই গাড়িটির নাম ছিল ‘টাটা ইন্ডিকা’। গাড়িটি তৈরি করেছিল টাটা গ্রুপ অফ ইন্ডাট্রিজ। পাশাপাশি কম বাজেটের ন্যানো থেকে শুরু করে ‘জাগুয়ার’-র মতো বিলাসবহুল গাড়ি সবই তৈরি করেছে এই কোম্পানি।
অনেকেই হয়ত জানেননা যে, বহু বছর আগে ‘টাটা মোটরস’ ‘টাটা সুমো’ নামে একটি গাড়ি লঞ্চ করেছিল। তৎকালীন সময়ে দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল গাড়িটি। তবে গাড়ির নাম ‘সুমো’ কেন রাখা হয়েছিল জানেন? টাটা সুমো নাম শুনলে অনেকেই মনে করেন, শব্দের উৎপত্তি বোধহয় জাপানি হেভিওয়েট কুস্তিগীরদের থেকে। কিন্তু ব্যাপারটি আসলে অন্যরকম। কী ভাবে এই SUV গাড়িটির এমন নামকরণ হল চলুন জেনে নিই আজকের প্রতিবেদনে।
জানিয়ে রাখি, টাটা গ্রুপের প্রথম মাল্টি-ইউটিলিটি গাড়ি TATA Sumo-র সঙ্গে জাপানি হেভিওয়েট কুস্তিগীরদের কোনও সম্পর্ক ছিল না ৷ আসলে টাটা মোটরসের অন্যতম স্থপতি সুমন্ত মুলগাওকারের অবদানের কথা মাথায় রেখে এমন নামকরণ করা হয়েছিল গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে। মুলগাওকার ছিলেন টাটা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড লোকোমোটিভ কোম্পানির ( টেলকোর) সিইও , টাটা স্টিলের ভাইস-চেয়ারম্যান। পাশাপাশি তিনি মারুতি সুজুকিতে নন-এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান হিসেবেও কাজ করেছেন।
এই নামকরণের পেছনেও রয়েছে এক মজাদার কাহিনী। টাটা গ্রুপ তখন সবে নিজেদের ব্যবসা ছড়াচ্ছে, সেই সময় হঠাৎ কর্মচারীরা লক্ষ্য করে যে, সুমন্ত রোজ লাঞ্চের সময় আলাদা করে কোথাও বেরিয়ে যান এবং দীর্ঘক্ষণ পর অফিসে ফিরে আসেন। তার গতিবিধি অনেকের কাছেই সন্দেহজনক হয়ে উঠলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর তারা দেখতে পান যে, সুমন্ত হাইওয়ের পাশে একটি ধাবায় বসে ট্রাক ড্রাইভারদের সঙ্গে খোশগল্পে মেতেছেন।
তিনি সেখানে খাবার খেতে খেতে ট্রাক ড্রাইভারদের সঙ্গে গালগল্পে মেতে থাকতেন। তিনি জানতে চাইতেন, তাদের নির্মাণ করা গাড়ির দোষ ত্রুটি কী কী৷ চালকরা কী কী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন এটা জানাই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য। পাশাপাশি গাড়িতে কী কী পরিবর্তন করলে তাদের সুবিধা হবে সেটাও জানতে চাইতেন তিনি। এরপর ফিরে এসে সেইসব ত্রুটি শোধরানোর চেষ্টা করতেন।
টাটা মোটরসের প্রতি তার সবচেয়ে বড়ো অবদান। তার এই গবেষণা টাটার যানবাহন এবং পণ্যগুলি উদ্ভাবন, উন্নতি এবং উন্নত করতে ব্যাপক সাহায্য করে। অবশ্য টাটাও তাদের এই নিষ্ঠাবান মানুষটির অবদান ভোলেনি। সুমন্তের কাজকে সম্মান জানাতেই তার নামের প্রথম দুটি অক্ষর Su এবং পদবীর প্রথম দুটি অক্ষর mo নিয়ে তৈরি হয় ‘টাটা সুমো’। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পরবর্তীকালে ভারত সরকারও তৃতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান পদ্মভূষণে ভূষিত করেছিল তাকে।