নিজস্ব সংবাদদাতা, পূর্ব বর্ধমানঃরূপকথায় শোনা যায় সাপে কাটা ব্যক্তি মারা গেলে, বেদের সর্দার বা বেদের মেয়ে বীণ বাজায়। আর সেই বীণার অপরূপ সুরে বিষধর সাপটি খাল-বিল-নালা-জঙ্গল ভেদ করে তীরের বেগে ছুটে আসে ।যে লোকটিকে সে কামড়েছিল,তার কামড়ের স্থানে মুখ দিয়ে বিষ চুষে নেয় ।
বিষ চোষা হয়ে গেলে ধীরে ধীরে চোখ মেলে লোকটি, ফিরে পায় তাঁর নতুন জীবন। এমন কুসংস্কার আষ্টেপৃষ্ঠে ধরেছিল পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনার একটি পরিবারকে। তাই সাপে কামড়ানো তরুণীর দেহ দাহ না করে ওঝার কাছে নিয়ে যায় তাঁর পরিবারের লোকজন। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে কালনা থানার অকালপৌষ গ্রামে। এখনো কুসংস্কারে আচ্ছন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের এক শ্রেণীর মানুষ, সাপের কামড়ে ছাত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করে,মৃত এই ছাত্রীকে নিয়ে চলে দেড় দিন টানা হ্যাচড়া।মৃত ছাত্রীকে বাঁচিয়ে তুলতে কখনোও ওঝা বাড়িতে ঝাড়ফুঁক,আবার কখনো মৃত ছাত্রীর বুকে বাইবেল রেখে যীশুর কাছে প্রাণভিক্ষার প্রার্থনা,তবে কাজে আসেনি ওঝার মন্ত্র। সারারাত ওঝার কাছে থাকার পর মরা মেয়ে নিয়েই বাড়ি ফিরতে হয় পরিবারের লোকেদের। জানা গেছে, তরুণীর দেহ নিয়ে ঝাড়ফুঁক শুরু করেন ওঝা। বেশ কয়েকঘণ্টা চলে মন্ত্রপাঠ। কাজে আসেনি মন্ত্র। সারারাত ধরে মন্ত্রপাঠের পরও প্রাণ ফেরেনি তরুণীর।
সারারাত থাকার পর ওঝার ক্ষমতা বুঝতে পারে পরিবারের লোকেরা। এইভাবে দেড় দিন পর মৃতদেহ ফুলে পচে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করলে কুসংস্কারে গ্রাস করা মানুষগুলোর বিশ্বাস জাগে কালনার অকালপৌষ গ্রামের ছোট্ট কবিতা আর নেই, পচা গলা মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কালনা মহকুমা হাসপাতাল মর্গে নিয়ে আসে । গত মাসের ২৯ তারিখে রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় বাম পায়ে বিষধর সাপের ছোবল মারলে অসহ্য জ্বালাপোড়া করলে কালনা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসে কালনার অকালপৌষ অরবিন্দ প্রকাশ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী কবিতা মুরমুক।
ওই সময় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে,তাতেও বিশ্বাস জাগেনি কবিতার আত্মীয়-পরিজনদের।মৃত দেহের প্রাণ ফিরে ফিরে পেতে কবিতাকে নিয়ে ছুটে ওঝা বাড়িতে।চলে ঝাড়ফুঁকের নানা কেরামতি,তাতেও মৃতদেহে প্রাণ ফিরে না আসায় হাল ছাড়ে ওঝা। কিছু গ্রামবাসী ও আত্মীয় পরিজনরা সময় নষ্ট না করে দ্বারস্থ হয় প্রভু যীশুর কাছে,প্রভু যীশুর কাছে গ্রামের মেয়ের প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে মৃতদেহের বুকে বাইবেল রেখে ঘন্টার পর ঘন্টা চলে প্রার্থনা।, এইভাবে দেড় দিন কেটে গেলেও নিথর দেহে জাগেনি প্রাণ, ঘটে তার উল্টো অনেক সময় অতিক্রান্ত হওয়ায় কবিতার মৃতদেহে ধরতে শুরু করে পচন,সেই দেহ আগলে রাখে গোটা গ্রাম ,ফুলে-ফেঁপে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করে গোটা গ্রামে কুসংস্কারে গ্রাস করা মানুষগুলোর তখন বিশ্বাস জাগে কবিতা আর তাদের মধ্যে নেই,মৃত দেহের প্রাণ ফিরে পেতে দের দিন ধরে চলে নানা কুসংস্কার কলা কৌশল।,কেন প্রশাসনের কাছে পৌছালো না খবর তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে মানুষের মধ্য ।
ওই মৃত ছাত্রীর বাবা যোগেশ মুর্মু বলেন,” মেয়েকে বাঁচাতে আমি কোনও খামতি রাখিনি। যে যা করতে বলেছে করেছি।বাড়িতে আনার পর ওর বুকে বাইবেল রেখে সকলে মিলে বাইবেল পাঠ করেছি কিন্তু বাঁচাতে পারিনি”। তাঁদের মতে, শুনেছি মরার পরেও সাপে কাটা রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়। তাই সকলের বিশ্বাসে সেই চেষ্টাই করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত বারবার কুসংস্কারের প্রচ্ছন্ন ছায়া দেখা যাচ্ছে কালনায়। সাপের কামড়ে ওঝার বাড়ি, ভূতের ভয়, নিশির ডাকের গুঁজবে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল। কিন্তু সমস্ত কিছু ঘটনাকে ছাপিয়ে গেল এই ঘটনা। কালনা বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্য শিক্ষক তাপস কার্ফা বলেন,” বারবার কুসংস্কারের ঘটনা ঘটছে। প্রসাসনকে এগিয়ে এসে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। না হলে হবে না। কালনা মহকুমা শাসক নীতিশ ঢালি বলেন,” বিষয়টি জানা নেই খোঁজ নিয়ে দেখছি। এরকম ঘটনায় আমরা ওই এলাকায় প্রচার করব”। সেই সঙ্গে হাসপাতাল থেকে কীভাবে মৃত দেহ নিয়ে চলে গেল তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। কালনা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণ চন্দ্র বরাই বলেন,” কীভাবে মৃত দেহ নিয়ে গেল তা দেখা হচ্ছে।
অন্যদিকে মানুষকে সচেতন হতে হবে। কালনায় এই ঘটনা আগেও ঘটেছে। প্রসাসনকেও এগিয়ে আসতে হবে”।