বাংলা হান্ট ডেস্কঃ আমাদের মত সাধারণ মানুষের কাছে চিকিৎসকরা আসলেই দ্বিতীয় ভগবান। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জেরেই নতুন করে প্রাণ ফিরে পান বহু মুমূর্ষু রোগীরা। করোনা কালে সাদা অ্যাপ্রোন ধারী এই সমস্ত মানুষদের লড়াই দেখেছে গোটা বিশ্ব। দিনের পর দিন রাতের পর রাত কিভাবে পরিশ্রম করে তারা একের পর এক রোগীকে ফিরিয়ে এনেছেন মৃত্যুর মুখ থেকে। তাদেরও ব্যক্তিগত জীবন রয়েছে, রয়েছে সখ আহ্লাদ। আর একজন মানুষের কাছে তার জীবনের অন্যতম প্রিয় মুহূর্ত নিজের বিবাহের মুহূর্তটি।
সাধারণ মানুষের আবেগ দিয়ে জীবনকে দেখলে চিকিৎসকদের চলে না, এটাই যেন আরেকবার প্রমান করে দিলেন প্রিয়াঙ্কা সাহা। দিনটা ছিল চতুর্থীর সকাল, মা দুর্গার আবাহন পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে মণ্ডপে মণ্ডপে, এই দিনেই বিবাহ বন্ধনে বাঁধা পড়ার কথা ছিল চিকিৎসক প্রিয়াঙ্কার। কিন্তু হঠাৎই গাড়ি ছুটলো অন্য পথে, কারণ খবর এসেছে হাসপাতলে রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক। আর তাই বিউটি পার্লারের পথ ছেড়ে মেহেন্দির বদলে হাতে উঠে এলো ছুরি, কাঁচি, ফরসেপ। নতুন দাম্পত্য জীবন শুরু করার আগে আরেকটি মানুষকে নতুন জীবন দিলেন সার্জেন প্রিয়াঙ্কা সাহা।
পেটে কার্যত এক ফুটবল সাইজের টিউমার নিয়ে কয়েকদিন যাবত রানিকুঠি লায়ন্স হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন যন্ত্রশিল্পী অর্ণব মুখোপাধ্যায়। আজ ছিল তারই সার্জারির দিন। প্রিয়াঙ্কার বাবা, ডঃ মাখনলাল সাহার উপরেই ছিল এই অস্ত্রপচারের ভার। শুরু থেকেই বাবার সাথে থাকতে চেয়েছিলেন কন্যা প্রিয়াঙ্কা। কিন্তু মেয়ে নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছে, সে সময় এই জটিলতার মধ্যে তাকে আর জড়াতে চাননি বাবা। কিন্তু প্রিয়াঙ্কা নাছোড়, কার্যত বিবাহের মন্ডপে যাওয়ার আগে তিনি চলে আসেন হাসপাতালে। বাবা এবং মেয়ের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় সফল হয় অপারেশন।
প্রিয়াঙ্কার বাবা ডাঃ মাখন লাল দাস জানান, ‘‘মেয়ে যে ভাবে এক জন চিকিৎসকের ধর্ম পালন করল, তা আজকাল তরুণ চিকিৎসকদের মধ্যে দেখা যায় না। বাবা হিসেবে নয়, এক জন চিকিৎসক হিসেবে এ কথা বলতে চাই আমি। শনিবার বিয়ের কয়েক ঘণ্টা আগেও ওই রোগীকে দেখে এসেছে ও। আজ রবিবারও আবার যাবে। গিয়ে দেখে আসবে। রোগীও এখন বিপদমুক্ত। ভাল আছেন।’’ সব নারীর মধ্যেই রয়েছেন একজন মা, যিনি সেবাব্রতী। এক মা যখন আসছেন মণ্ডপে মণ্ডপে, তখন আরেক মা নতুন প্রাণ দিলেন মুমূর্ষু রোগীকে। এভাবেই তো প্রকাশ হয় দেবী দুর্গার, দুটো হাতেই যারা রোজ দশটা কাজ সামলান।