বাংলাহান্ট ডেস্ক: সম্প্রতি ওড়িশায় অগ্নি ৫ মিসাইলের সফল পরীক্ষা করেছে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন। গত শুক্রবার আরও একটি ভয়ঙ্কর ক্ষেপনাস্ত্রের পরীক্ষা করেছে ডিআরডিও। ওড়িশায় হাইপারসনিক টেকনোলজি ডেমনস্ট্রেটর ভেহিকল বা HSTDV পরীক্ষা করেছে DRDO। তবে পরীক্ষার ফলাফল এখনও প্রকাশ করা হয়নি। কী এই হাইপারসনিক ক্ষেপনাস্ত্র? এর বিশেষত্বই বা কী?
বিগত কয়েক বছর ধরে হাইপারসনিক ক্ষেপনাস্ত্রের উপর কাজ করছে ভারত। ইতিমধ্যেই পরীক্ষাও চালানো হয়েছে। ২০২০ সালে একটি পাইলট বিহীন হাইপারসনিক জেট বিমানের সফল পরীক্ষা করেছিল DRDO। যে বিমান ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬ হাজার ১২৬ থেকে ১২ হাজার ২৫১ কিলোমিটার গতিবেগে উড়তে পারে, তাকেই হাইপারসনিক বিমান বলা হয়। গত বার HSTDV ২০ সেকেন্ডেরও কম সময়ের জন্য পরীক্ষা করা হয়েছিল। যদিও, এই সময়ে এটির গতিবেগ ছিল ৭৫০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।
আগামী দিনে এটির গতিবেগ বাড়ানো বা কমানো হতে পারে হলে জানিয়েছে DRDO। এর মাধ্যমে পারমাণবিক ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করা হলে মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই হামলা চালানো যাবে পাকিস্তানের উপর। এটি এমন একটি বিমান যেটির থেকে বোমা নিক্ষেপ করা যাবে। এছাড়াও এটিকেই বোমা হিসেবে শত্রুর ঘাঁটিতে নিক্ষেপ করা যাবে। এত উচ্চ গতির ফলে এটি অত্যন্ত ভয়ানক হয়ে দাঁড়াবে শত্রুর জন্য।
হাইপারসনিক অস্ত্রের উপর আরও কাজ করছে ভারত। ইতিমধ্যেই ব্রাহ্মোস ২ হাইপারসনিক মিসাইল তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিন বসানো হবে। ফলে ৮ হাজার ৫৭৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার গতিতে এটি হামলা চালাতে পারবে। এ বার প্রশ্ন হচ্ছে, হাইপারসনিক অস্ত্রের অর্থ কী? শব্দের গতির তুলনায় ৫ গুন বেশি গতিতে যে সমস্ত অস্ত্র নিক্ষিপ্ত হতে পারে, সেগুলিকেই হাইপারসনিক অস্ত্র বলা হয়।
গত ২৭ জানুয়ারি পরীক্ষা হওয়া অস্ত্রটি সেদিনই ৭৫০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার গতিবেগে উড়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী দিনে ১২ হাজার কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার গতিবেগে উড়তে পারবে এটি। এত উচ্চ গতির ফলে এগুলিকে ট্র্যাক করাও সম্ভব নয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেনের উপর এমনই এক হাইপারসনিক মিসাইল দিয়ে হামলা চালিয়েছিল রাশিয়া। ইতিমধ্যেই আমেরিকাও এমন এক অস্ত্র বানাচ্ছে। এটি একটি বলিস্টিক মিসাইলের মতোই নিক্ষিপ্ত হবে কিন্তু লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার সময় শব্দের চেয়ে ৮ গুন দ্রুত গতি পেয়ে যাবে।
যে কোনও ক্রুজ বা বলিস্টিক মিসাইলের গতিই খুব বেশি হয়। কিন্তু এগুলির গতি ও দিশা ট্র্যাক করা সহজ। তাই সহজেই এগুলিকে ধ্বংস করে দেওয়া যায়। কিন্তু এগুলির গতি যদি ৬১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বা তার বেশি হয়ে যায়, তখন ধ্বংস করা সম্ভব হয় না। মূলত দু’ধরণের হাইপারসনিক মিসাইল হয়। প্রথমটি হল গ্লাইড ভেহিকল। অন্যটি হল ক্রুজ মিসাইল। এই মুহূর্তে ভারত-সহ বেশিরভাগ দেশই হাইপারসনিক গ্লাইড মিসাইলের উপর জোর দিচ্ছে।
এই যানগুলি একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে পৌঁছনোর পর মিসাইল আলাদা হয়ে যায়। গ্লাইড ভেহিকলগুলি নিজে থেকেই লক্ষ্যবস্তুর দিকে চলে যায়। এই অস্ত্রগুলিতে স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিন থাকে। বাতাসের অক্সিজেন ব্যবহার করে উচ্চ গতি ধারণ করে এগুলি। এই মুহূর্তে আমেরিকা, রাশিয়া ও চিনের কাছে হাইপারসনিক মিসাইল আছে। কানাঘুষো শোনা যায়, উত্তর কোরিয়ার কাছেও এই মিসাইল রয়েছে কিন্তু অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ বার ভারও তেমন অস্ত্র বানাতে শুরু করেছে। প্রসঙ্গত, রাশিয়ার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ হাইপারসনিক ক্ষেপনাস্ত্র রয়েছে। এটি হল আভগার্ড মিসাইল। এটি একটি ICBM। এটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২৪,৬৯৬ কিলোমিটার।