বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সময়ের সাথে সাথে একেবারে ভেঙে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) শিক্ষা পরিকাঠামো! শিক্ষকের অভাবে হাল বেহাল রাজ্যের অধিকাংশ সরকারি স্কুলগুলির! পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্কুলছুটদের (Dropout) সংখ্যাও। কোথাও আবার বন্ধের মুখে রাজ্যের একাধিক সরকারি স্কুল গুলিও। কেন্দ্রের রিপোর্টেও এবার বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে উঠে এল এক চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট। ওই রিপোর্টেই ধরা পড়েছে বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থার ‘হতশ্রী’ অবস্থা।
অবাক করবে রাজ্যের (West Bengal) স্কুল ছুটদের সংখ্যা
নবম থেকে দশম শ্রেণীতে এক লাফে রাজ্যের (West Bengal) ড্রপ আউটের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ শতাংশের বেশি। রিপোর্ট বলছে এই স্কুলছুটের হার বাংলার তুলনায় কম রয়েছে উত্তরপ্রদেশ এবং রাজস্থানে। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে মোট ৬ হাজারের বেশি স্কুল চলছে। মাত্র একজন শিক্ষকের ভরসায় চলছে গোটা একটা স্কুল। বন্ধের মুখে হাজার হাজার স্কুল। কোনও এনরোলমেন্ট-ও নেই স্কুলগুলিতে।
উদাহরণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যদি ১০০ জন পড়ুয়া নবম থেকে দশম শ্রেণীতে উঠছে তাহলে তাদের মধ্যে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে ৮৮ জন. আর ১২ জন পড়ুয়া পড়াশুনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন হল তারা যাচ্ছেন কোথায়? বিশেষজ্ঞদের দাবি বেশিরভাগ পড়ুয়া স্কুল ছাড়ছে কাজের তাগিদে। আবার কেউ কেউ ছুটছেন ভিন রাজ্যে। আর তার জন্য বিশেষজ্ঞরা দায়ি করছেন পাশ ফেল প্রথাকে। বলা হচ্ছে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত রাজ্য সরকারি স্কুলগুলিতে কোন পাশ ফেল প্রথা নেই। এছাড়া নবম শ্রেণী থেকে নেই মিড ডে মিল-ও দেওয়া হয় না। তাই অধিকাংশ পড়ুয়া অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে নবম শ্রেণী থেকে পড়াশোনা বন্ধ করে দিচ্ছে।
করোনার পর সরকারি স্কুল গুলিতে উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছিল স্কুল ছুটের সংখ্যা। যার প্রভাব পড়েছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ওপরেও। স্কুল ছুট কমাতে রাজ্যের (West Bengal) শিক্ষা দপ্তরের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল শিক্ষক সংগঠনের একাংশ। স্কুল গুলির দাবি সপ্তম শ্রেণীতে স্কুল ছুটের হার দুই থেকে তিন শতাংশ। যদিও নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীতে সেই সংখ্যাটা আরও বেড়ে চলেছে, যা কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন: এবার খাবারের মান যাচাই হবে ল্যাবরেটরিতে! বিজ্ঞপ্তি জারি করল পশ্চিমবঙ্গ সরকার
অভিযোগের সুরে প্রধান শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি চন্দন মাইতি প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে সারা পৃথিবীতে ২.৫ মিলিয়ন স্কুল ছুট রয়েছেন। আমাদের দেশের মধ্যপ্রদেশের অন্যান্য রাজ্যের স্কুল বন্ধ হচ্ছে। এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ ব্যতিক্রম ছিল। কিন্তু এখন এখানেও ঢুকে পড়েছে। এছাড়াও তিনি জানিয়েছেন কেন্দ্র যা রিপোর্ট দিয়েছে আসলে রাজ্যে তার থেকে বেশি ড্রপ আউট হয়।
মাধ্যমিক পরীক্ষার অ্যাডমিট নেওয়ার পরেও অনেকে পরীক্ষা দেয় না। তবে নবম দশম শ্রেণীতে মিড ডে মিল দেওয়া হয় না ঠিকই কিন্তু এই উঁচু ক্লাসে পড়ুয়াদের পড়াশোনার জন্য কিন্তু ট্যাবের টাকা দেওয়া হয়। সবুজসাথির সাইকেলও দেওয়া হয়। কিন্তু এতকিছু দেওয়ার পরেও এখনকার দিনে অধিকাংশ স্কুলগুলি শিক্ষক শূন্য। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন আগে যেমন প্রত্যেক বছর শিক্ষক নিয়োগ হত সেই ব্যবস্থাই ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রশ্ন উঠছে স্কুলে শিক্ষক না থাকলে পড়ুয়ারা কেন যাবে? সম্প্রতি সর্বশিক্ষা অভিযানের রিপোর্টে জানা গিয়েছে তফসিলি জাতি ও জনজাতির ক্ষেত্রে স্কুলছুটদের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। তার ওপর মাধ্যমিক স্তরেও রাজ্যের প্রায় সব স্কুলে কমবেশি একই ছবি।