পদ্মা সেতুর কারণে ব্যবসা বন্ধ হওয়ার জোগাড় বিমান সংস্থাগুলির, বাতিল হচ্ছে একের পর এক উড়ান

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ওপার বাংলায় তৈরী হওয়া পদ্মা সেতু (Padma Multipurpose Bridge) সে দেশের সকল মানুষের মনে যে আনন্দের ধারা বইয়ে দিয়েছে তা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে। সেতুর বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক উন্নয়নের নতুন স্বপ্ন দেখছে দেশের মানুষ। দেশকে চিহ্নিত করার ঝকঝকে মুদ্রার সামনের পিঠে ঝলমলে কৃতিত্বের উজ্জ্বলতম প্রতীক রূপে পদ্মা সেতুর নাম জ্বলজ্বল করছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

বাংলাদেশে (Bangladesh) ইতিমধ্যেই চালু হয়ে গিয়েছে পদ্মা সেতু, মিলছে প্রারম্ভিক সাফল্য। তবে সেতুর সাফল্যে জোর ধাক্কা খাচ্ছে বাংলাদেশ বিমান সংস্থাগুলি। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত পাঁচ মাসে উড়ান পথে প্রায় ৪০ শতাংশ যাত্রী কমেছে। অন্যদিকে যাত্রীর অভাবে ইতিমধ্যে ঢাকা-যশোহর রুটে এক ধাক্কায় বিমানের সংখ্যাও নেমে এসেছে অর্ধেকে। শুধু তাই নয়, যাত্রীর অভাবে যশোহর-চট্টগ্রাম রুটের বিমান পরিষেবা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে সূত্রের খবর।

প্রসঙ্গত, চলতি বছর গত ২৫ জুন সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল পদ্মা সেতু। ১৯৯৬ সালে আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় আসার পর পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ শুরু হয়। ২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়া পয়েন্টে আনুষ্ঠানিক ভাবে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতু প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছিল ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। জানা গিয়েছে, কিছু সংশোধনের পর ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩২ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা।

সেই প্রথম থেকেই পদ্মা সেতু ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ-উন্মাদনা দেখা গিয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে। আর তাই যেন এখনো হাতে-নাতে ফলস্বরূপ পাওয়া যাচ্ছে। সূত্রের খবর, সেতুতে রেকর্ড হারে টোলও আদায় হচ্ছে। জানা গিয়েছে, টোল বাবদ রোজ গড়ে ২ কোটি টাকা আয় হচ্ছে পদ্মা সেতুতে। আর এতে যথেষ্ট খুশি বাংলাদেশের প্রশাসন। বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্র অনুযায়ী , সেতু খোলার পর প্রথম ২০ দিনে পদ্মা সেতুতে টোল আদায় হয়েছে ৫২ কোটি ৫৫ লক্ষ ৩৫ হাজার ৬৫০ টাকা। সেতু চালুর পর মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানিতেও গতি দেখা দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, পূর্বে যশোহর-খুলনা থেকে ঢাকা পৌঁছতে সময় লাগত ৬ থেকে ১২ ঘণ্টা। এর ফলে দ্রুত যাতায়াতের ক্ষেত্রে ঢাকা-যশোহর বিমান পরিষেবার উপরেই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন সাধারণ মানুষ। তবে সেই চিত্র বদলে গেছে একেবারেই। বর্তমানে মাত্র তিন থেকে চার ঘণ্টায় যশোহর-খুলনা থেকে রাজধানী ঢাকা পৌঁছনো যাচ্ছে। ফলে অধিকাংশ যাত্রীই বিমান ছেড়ে সড়কপথে যাতায়াত করছেন বলে জানা যাচ্ছে। সেতুর চালু হওয়ার প্রারম্ভিক সাফল্যের পর পদ্মা সেতু থেকে শরীয়তপুর হয়ে মেঘনা সেতু পর্যন্ত ফোরলেনের কাজ দ্রুত শেষ করার পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ সরকার। অধিগ্রহণ-সহ সব কাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরকার তরফে। বাংলাদেশ সরকারের জলসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপির মন্তব্য, ‌‘‘এ ব্যাপারে কোনও রকম গাফিলতি ও অনিয়ম সহ্য করা যাবে না।’’

padma setu2

সূত্রের খবর, পদ্মা সেতু চালুর আগে যশোহর থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে বিভিন্ন সংস্থার ১৮টি বিমান চলত। তার মধ্যে ঢাকা ও যশোহরের মধ্যে চলত ১৫টি বিমান। বর্তমানে সেখানে চলছে মাত্র সাতটি বিমান। ফলে পদ্মা সেতুর সাফল্য যে নিশ্চিতভাবে ধাক্কা দিচ্ছে ওপার বাংলার উড়ান পরিবহণকে, তা বোঝার অপেক্ষা রাখে না।


Sharmi Dhar
Sharmi Dhar

শর্মি ধর, বাংলা হান্ট এর রাজনৈতিক কনটেন্ট রাইটার। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৩ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত ।

সম্পর্কিত খবর