বাংলা হান্ট ডেস্ক,পশ্চিম মেদিনীপুর:- মল্লিক বাড়ির জমিদার ঈশান মল্লিকের হাত ধরেই মল্লিক বাড়িতে দুর্গা পূজোর সূত্রপাত । শোনা যায় , তিনি নাকি স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন মায়ের । মা দুর্গা স্বয়ং ঈশান মল্লিক কে তাঁকে কন্যা রূপে পূজো করার নির্দেশ দেন স্বপ্নে । একই সঙ্গে বাবা মহাদেব পূজিত হন জামাই রূপে ।
গোয়ালতোড়ের পিংবনীর মল্লিক বাড়ি । যাদের আদি বাড়ি হুগলী জেলার ফুলুই শ্যামবাজার এলাকায় ছিল । সেখানকার জমিদার ছিলেন ঈশান মল্লিক । পরে ব্যাবসায়িক সূত্রে মল্লিক পরিবারের লোকেরা পিংবনী আসেন এবং এখানেই পাকাপাকি ভাবে রয়ে যান । হয়ে উঠেন স্থায়ী বাসিন্দা । পরে ধীরে ধীরে শুরু হয় মল্লিক বাড়িতে দুর্গা পূজো ।
মল্লিক জমিদারদের নেই জমিদারিত্ব । কমেছে পূজোর জাঁক জমক । তবে আন্তরিকতার কোনো খামতি নেই । পূর্বপুরুষ দের রীতিনীতি মেনে উত্তরসূরীরা আজও যথাসম্ভব নিয়মরক্ষায় বদ্ধ পরিকর ।
মল্লিক বাড়ির এই দুর্গা পূজা আদতে মিলন মেলা পরিবারের কাছে । জ্ঞাতি , আত্মীয় স্বজন , কুটুম্ব দূরদূরান্তে যেখানেই থাকুক না কেন পূজোর কটা দিন গ্রামের এই বাড়িতে আসবেন । ফলে রং চটা টিনের ছাউনি মাটির দালান মন্দির ও বাড়িতে পড়ে নতুন করে রঙ্গের পোচ । আর তলানিতে পড়ে যাওয়া সম্পর্ক গুলি আবার নতুন করে মাত্রা পায় । মল্লিক বাড়ির দুর্গাপূজোর বিশেষত্ব হলো অষ্টমীতে সন্ধী পূজোতে পায়েস বলি । রান্না করা পায়েস পদ্মের ডাঁটা দিয়ে ভাগ করে দেওয়া হয় । সপ্তমীতে স্থাপন করা হয় জোড়া ঘট । পূজো হয় বৈষ্ণব মতে ।
এই সব নিয়মের জন্যই মল্লিক বাড়ির পূজো আর পাঁচটা পারিবারিক পূজো থেকে একটু ভিন্ন। নবীনদের সঙ্গে প্রবীনরাও সমান তালে মেতে উঠেন পূজোর আনন্দে ।হাতে হাতে ভাগ করে নেই পূজোর দায়িত্ব সকলেই । এই পরিবারের সদস্য অশোক কুমার মল্লিক, আশিষ মল্লিক, তাপস মল্লিকরা বলেন ,”আমাদের পারিবারিক এই দুর্গাপূজো ৩০৫ বছর অতিক্রান্ত। এখনো পরিবারের সকলের কাছেই এই পূজোর আগ্রহ এখনো বিদ্যমান । পরিবারের সদস্যরা যে যেখানেই থাকুক,পূজো উপলক্ষ্যে সকলেই গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন বছরের এই সময়ে । মল্লিক বাড়ির সদস্য ছাড়াও গ্রামের সকল মানুষেও এই পূজোতে হইহুল্লোড় করে । কারন গ্রামের মানুষ এই দেবীকে খুব জাগ্রত বলে মনে করেন ও মানেন ।
৯০ ছুঁই ছুঁই ঊর্মিলা মল্লিক ,কল্যাণী মল্লিকরা বয়সের ভারে কাবু। কিন্তু পূজোর এই কটা দিন যেন আলাদা শক্তি ফিরে পান। পঞ্চমী থেকে একাদশী পর্যন্ত এদের অংশ গ্রহণ থাকে নজরকাড়া । যা দেখে বর্তমান প্রজন্মের নতুনরা পান আলাদা উৎসাহ ।এমনই এক নতুন প্রজন্মের গৃহবধু পম্পা মল্লিক বলেন , “ইনারাই আমাদের উৎসাহ দেন। এরা না থাকলে হয়তো পূজোটায় হয়ে উঠতো না “।