বাংলা হান্ট ডেস্কঃ একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বড় ব্যাবধানে জিতে ইতিমধ্যেই রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরেছে তৃনমুল কংগ্রেস। কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই সরকারের প্রথম জানালেও এবার ভোটারদের দেওয়া বাকি প্রতিশ্রুতিও একে একে পালন করার দিকে আরো এক ধাপ অগ্রসর হলো তৃণমূল সরকার। নির্বাচনী প্রচারে বাংলার মানুষের উদ্দেশ্যে সবচেয়ে বড় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তা হল দুয়ারে রেশন। সরকারি সুবিধা পেতে কোন রকম অসুবিধা যাতে না হয়, সেই কারণেই নির্বাচনের আগে দুয়ারে সরকার প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন মমতা। সেই প্রকল্পের অনুকরণে নির্বাচনী প্রচারে বিনামূল্যে দুয়ারে রেশনের কথাও ঘোষণা করেন তিনি। অর্থাৎ এবার থেকে রেশনের জন্য আর লাইন দিতে হবে না সাধারণ মানুষকে। দোকানের কর্মীরাই বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেবেন বিনামূল্যে রেশন। মুখ্যমন্ত্রীর এই স্বপ্নের প্রোজেক্ট করোনার কারণে যাতে পিছিয়ে না পারে এবার সেই লক্ষ্যেই এগলো সরকার।
খাদ্য ভবনে ডিলারদের সঙ্গে বৈঠকঃ
এই পাইলট প্রোজেক্টকে রূপায়ণ করতে মঙ্গলবার রেশন ডিলারদের সঙ্গে খাদ্য ভবনে বৈঠকে করেন খাদ্য প্রতিমন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডি ও খাদ্যসচিব পারভেজ সিদ্দিকি। যদিও শারীরিক অসুস্থতার কারণে উপস্থিত হতে পারেননি নতুন খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ। তবে এই বৈঠকে জানানো হয় শুক্রবার থেকে পাইলট প্রোজেক্ট হিসেবে শুরু হবে জেলায় জেলায় খাদ্য বন্টন। কতটা সাফল্য মিলল, তা নিয়ে আলোচনা হবে সোমবার। এরপরই মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঠিক করা হবে কিভাবে আরো বড় মাত্রায় এই প্রজেক্ট রূপায়ণ করা যায়। আপাতত জেলায় জেলায় বেছে নেওয়া হয়েছে মোট ২৮ টি দোকানকে। যার মধ্যে ২২ টি জেলায় রয়েছে ২২ টি দোকান। এছাড়া শহরে রয়েছে মোট ছটি। প্রকল্পের রূপায়নে এখন কতটা সাফল্য মেলে, সেদিকেই তাকিয়ে থাকবে সকলে।
বিরোধীদের কটাক্ষঃ
দুয়ারে সরকারের মতো দুয়ারে রেশন নিয়েও একাধিকবার কটাক্ষের বান হেনেছিলেন বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য ছিল, এই প্রকল্পের বাস্তব ভিত্তি নেই। যদিও নির্বাচনের প্রচার সভা থেকেই তীব্র জবাব দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে ছিলেন, দুয়ারে সরকার করেছি দুয়ারে রেশনও করব। এবার সে কথা মাথায় রেখেই আরেক ধাপ অগ্রসর হল রাজ্য সরকার।
রেশন ডিলারদের বক্তব্যঃ
আজ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপস ডিলার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসুও। বৈঠক শেষে তিনি জানান, আমাদের তরফেও বেশকিছু বক্তব্য রয়েছে তা আমরা চিঠিতে জানিয়েছি। এই প্রকল্প চালানোর জন্য প্রতি কুইন্টালে ২০০ টাকা করে রেশন ডিলারদের কমিশন দিতে হবে৷ তাছাড়া বাড়ি বাড়ি রেশন পৌঁছে দেওয়াটা খুবই বড় কাজ। তাই নতুন ধরনের এই কাজটিও বুঝে নিতে হবে। তাদের আরও বক্তব্য, মাসের প্রথম ১৫ দিন উপভোগ তারা দোকানে এসে সামগ্রী সংগ্রহ করে করুক, এবং পরের ১৫ দিনের সামগ্রী আমরা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেব। এতে দু’পক্ষের ক্ষেত্রেই সমন্বয় বজায় থাকবে।
এখনই পাহাড়ে শুরু হচ্ছে না দুয়ারে রেশনঃ
ভৌগলিক অবস্থানের কারণেই এই মুহূর্তে পাহাড়ে শুরু হচ্ছে না দুয়ারে রেশন জানিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে পরবর্তী ক্ষেত্রে পাহাড়েও যাতে এই ব্যবস্থা করা যায় তা নিয়ে পরিকল্পনা করছে রাজ্য। ইতিমধ্যেই ডিলারদের জানানো হয়েছে, রেশন পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করা হতে পারে বেশ কিছু ছোট ছোট গাড়ির। শুধু তাই নয় প্যাকেজিংয়ের জন্যেও ডিলারদের আলাদা পয়সা দেওয়ার কথা ভাবছে রাজ্য। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া প্রকল্প আগামী দিনে কেমন প্রভাব ফেলে সেটাই এখন দেখার।