বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভারত হল একটি কৃষিপ্রধান দেশ। দেশের মোট জনসংখ্যার একটা বিরাট অংশ নির্ভর করেন চাষাবাদের ওপরেই। কিন্তু, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কম বৃষ্টিপাত এবং অতি পুরনো প্রযুক্তির কারণে তেমন একটা লাভের মুখ দেখতে পান না কৃষকরা। অনেক সময়ে আবার লোকসানের মুখেও পড়তে হয়ে তাঁদের।
তবে, দিনের পর দিন ওই সমস্যায় জর্জরিত হয়ে এবার অভিনব এক পন্থা আবিষ্কার করে ফেলেছেন এক কৃষক। আর তাতে সুবিধেও হয়েছে অনেক। পরিত্যক্ত গ্লুকোজের বোতলকেও যে খুব ভালোভাবে কৃষিক্ষেত্রে সেচের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে তা হাতেনাতে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের ওই কৃষক।
ঝাবুয়া হল মধ্যপ্রদেশের একটি আদিবাসী অধ্যুষিত জেলা। যেখানে পাহাড়ি এলাকায় চাষাবাদ করা কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। মুখ্যত, মাটির উপরিভাগ এবং বৃষ্টির জলের উপর নির্ভর করে চাষাবাদের কারণে এখানে ফসলের পরিমানও সেই তুলনায় পাওয়া যেতনা। এই ঘটনায় রমেশ বড়িয়া নামের এক কৃষক হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। তবে, এই বাধাকে কার্যত চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েই তিনি এখন সেই মাটিতেই ভালোভাবে চাষ করে সবাইকে তাকে লাগিয়ে দিয়েছেন।
রমেশ ২০০৯ – ২০১০ সালে NAIP (ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল ইনোভেশন প্রজেক্ট) KVK বিজ্ঞানীদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং তাঁদের নির্দেশ মত শীত ও বর্ষাকালে অল্প জমিতে সবজি চাষ শুরু করেন। এই ধরনের জমির জন্য ওই সময়ে চাষই ঠিক ছিল। তাঁর জমিতে তিনি করলা এবং লাউয়ের চাষ শুরু করেন। শীঘ্রই তিনি একটি ছোট নার্সারিও স্থাপন করেন। তবে, প্রাথমিক পর্বে, দেরিতে বর্ষা আসার কারণে তীব্র জলের অভাব অনুভূত হয়েছিল।
এমতাবস্থায়, ফসল নষ্ট হতে পারে দেখে রমেশ আবার NAIP-র সাহায্য চান। সেখানে বিশেষজ্ঞরা পরিত্যক্ত গ্লুকোজের বোতলের সাহায্যে একটি সেচ কৌশল অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁকে। সেই মত রমেশ প্রতি কেজি ২০ টাকা দামের গ্লুকোজের প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করেন এবং সেচের জন্য একটি ইনলেট তৈরি করতে বোতলের উপরের অর্ধেকটি কেটে দেন এবং সেগুলি গাছের কাছে ঝুলিয়ে দেন।
প্রধানত, তিনি এই বোতলগুলি থেকে ফোঁটা ফোঁটা জলের একটি অবিচ্ছিন্ন স্রোত তৈরি করেছিলেন। তিনি তাঁর বাচ্চাদের সকালে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার আগে সমস্ত বোতল ভর্তি করে দিতেন। শুধু এই সহজ কৌশলের মাধ্যমেই, তিনি চাষের মরশুম শেষ হওয়ার পর ০.১ হেক্টর জমি থেকে ১৫,২০০ টাকা লাভ করতে সক্ষম হন। এই প্রযুক্তিটি কেবল তাঁর গাছগুলিকে খরা থেকে বাঁচায়নি, এছাড়াও, এটি জলের অপচয়ে কমানোর পাশাপাশি এই পদ্ধতিটি অনেক সাশ্রয়ীও ছিল।
রমেশ এভাবেই বর্জ্য গ্লুকোজ বোতলগুলিকে আবর্জনায় পরিণত না করে সেগুলিকে একটি ভালো কাজে ব্যবহার করেন। শীঘ্রই তাঁর গ্রামের অন্যান্য কৃষকরাও এই পদ্ধতি দ্রুত অনুসরণ করেন। এদিকে, কৃষিকার্যে রমেশের এহেন উদ্ভাবনী দক্ষতায় মধ্যপ্রদেশ সরকারের জেলা প্রশাসন ও কৃষিমন্ত্রীর কাছ থেকে তিনি সম্মানপত্রও গ্রহণ করেছেন।