বাংলা হান্ট ডেস্কঃ দুর্নীতি মামলায় প্রথমে দীর্ঘক্ষণ ধরে জিজ্ঞাসাবাদ, পরে আটক আর শেষ পর্যন্ত সোমবার গভীর রাতের দিকে ইডির (ED) হাতে গ্রেফতার হলেন শিবসেনা (Shiv Sena) সাংসদ সঞ্জয় রাউত (Sanjay Raut)। ইতিমধ্যেই এ ঘটনা মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) রাজনীতিতে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। মূলত তদন্তে অসহযোগিতা করার অভিযোগে শিবসেনা নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে খবর। এদিনই তাঁকে আদালতে তোলা হতে পারে।
পত্র চাউল সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় বিগত বেশ কয়েক সময় ধরে ইডির নজরে ছিলেন শিবসেনা সাংসদ। অতীতে বেশ কয়েকবার তাঁকে সমান পাঠানো হলেও ইডি অফিসে যাননি এই নেতা। অবশেষে গতকাল সকাল হতেই সঞ্জয় রাউতের বাড়িতে পৌঁছে যায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অফিসাররা। সূত্রের খবর, এই সময় তাঁর বাড়ি থেকে সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয় এবং বেশ কিছু নথিও মেলে। পরবর্তীতে তাঁকে আটক করা হয় এবং দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর অবশেষে সোমবার গভীর রাতের দিকে সঞ্জয় রাউতকে গ্রেফতার করে ইডি।
ইতিমধ্যে শিবসেনা কর্মীরা এ ঘটনাকে বিজেপির ‘ষড়যন্ত্র’ বলে কটাক্ষ করেছে। ফলে এক দিকে যখন বাংলায় এসএসসি দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তো অপরদিকে শিবসেনা নেতার সঞ্জয় রাউতের গ্রেফতারির ঘটনা গোটা দেশজুড়ে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
উল্লেখ্য, বেআইনি আর্থিক লেনদেন মামলায় ইডি দফতরে মাত্র একবার হাজিরা দিলেও পরবর্তীতে বেশ কয়েক ক্ষেত্রে সমন এড়ান শিবসেনা নেতা। তবে শেষ পর্যন্ত গতকাল অ্যাকশনে নামে ইডি। সম্প্রতি, মুম্বইয়ের অন্তর্গত পত্র চউল নামে এক আবাসন প্রকল্পে আর্থিক দুর্নীতির দিকটি প্রথম সামনে উঠে আসে আর এ মামলাতেই নাম জড়ায় সঞ্জয় রাউত ও তাঁর স্ত্রীয়ের। এক্ষেত্রে বড়সড় আর্থিক দুর্নীতির সন্দেহ প্রকাশ করে ইডি এবং গত জুলাই মাসের ১ তারিখ ইডি অফিসে ডেকে পাঠানো হয় শিবসেনা নেতাকে।
ইডি সূত্রে খবর, ১ লা জুলাই ইডি অফিসে হাজিরা দেন সঞ্জয় এবং এর পরে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে সব রকম সহায়তা করবেন বলে আশ্বাসও দেন তিনি। তবে পরবর্তী ক্ষেত্রে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবের রূপ দেখেনি এবং এই মামলায় পরপর দুবার তলব করা হলেও তা এড়িয়ে যান শিবসেনার এই ‘প্রভাবশালী’ নেতা। কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য তদন্তের মুখোমুখি হতে পারবেন না বলে জানিয়েও দেন তিনি। তবে গতকাল সকাল হতেই শিবসেনা নেতার বাড়িতে পৌঁছে যায় ইডি এবং দীর্ঘক্ষণ ধরে জিজ্ঞাসাবাদ চলার পর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে আটক হন সঞ্জয় রাউত।
প্রসঙ্গত, ৩১ শে জুলাই সকালে সঞ্জয়ের রাউতের বাড়ি পৌঁছে যায় ইডি। সেই সময় একে একে তাঁর বাড়ির বাইরে জড়ো হতে থাকে শিবসেনা কর্মীরা। তবে তাদের কোনো রকম বিরোধ শেষ পর্যন্ত কাজে আসেনি। গতকাল ইডি জেরার মাঝে তিনি একের পর এক টুইট করতে থাকেন। সঞ্জয় লেখেন, “বালাসাহেব ঠাকরের নামে শপথ নিয়ে আমি বলছি যে, কোন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই। আমি মরে গেলেও শিবসেনা ছাড়বো না।”
এরপর তিনি আরও একটি টুইট করে বলেন, “মিথ্যে তথ্য, মিথ্যে পদক্ষেপ। যদি মরে যাই, তা সত্ত্বেও আমি আত্মসমর্পণ করব না।” উল্লেখ্য, পত্র চাউল সংক্রান্ত আর্থিক দুর্নীতি মামলায় সঞ্জয় রাউতের স্ত্রী এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ সামনে আসে। এক্ষেত্রে ইডির তরফ থেকে প্রায় ১২ কোটি টাকার কাছাকাছি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত পর্যন্ত করা হয়। আর এবার এই মামলায় শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউতকে গ্রেফতারির ঘটনা যে গোটা দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করবে, তা বলাবাহুল্য।