বাংলা হান্ট ডেস্ক: টাকার বিনিময়েই চাকরি পেয়ে যেতেন অযোগ্যরা। কিন্তু কী ভাবে অযোগ্য প্রার্থীদের নাম স্কুল সার্ভিস কমিশনের (School Service Commission) প্যানেলের জন্য সুপারিশ করা হত? নিয়োগপত্রই বা কী ভাবে মিলত? এই নিয়েই এবার আদালতে বড় তথ্য ফাঁস করল ইডি (Enforcement Directorates)। এবার তথ্য সমেত দুর্নীতিতে (Recruitment Scam) যুক্ত ব্যক্তিদের নামও সামনে আনল কেন্দ্রীয় এজেন্সি।
আদালতে ইডির দাবি, ভুয়ো সুপারিশপত্র তৈরী করে এসএসসিতে প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ ১৮৩ জন অযোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ করা হয়েছিল। ভুয়ো সুপারিশপত্র তৈরী করে তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল মধ্য শিক্ষা পর্ষদ এর কাছে। আর পর্ষদের কিছু অসাধু কর্মীদের কাজে লাগিয়েই এই ভুয়ো নিয়োগপত্র বানানোর কাজ চলত। তাদের মাধ্যমেই প্রকাশিত হত জাল নিয়োগপত্র।
বিস্ফোরক দাবি করে ইডি জানিয়েছে, কমিশনের উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন প্রধান শান্তিপ্রসাদ সিন্হার নির্দেশে ভুয়ো সুপারিশপত্র তৈরির কাজ করেছিলেন এসএসসির অস্থায়ী কর্মী সমরজিৎ আচার্য। বেআইনি নিয়োগের ক্ষেত্রে এক দফতর থেকে অন্য দফতরে কী ভাবে ইমেলের মাধ্যমে সঙ্গতি রাখা হত সেই বিষয়েও আদালতে জানায় ইডি।
ইডি আরও জানায় ‘মিডলম্যান’ প্রসন্নকুমার রায়ের থেকে ইউ নিয়োগের সুপারিশ গুলো এসেছিল। আর তার হয়ে এই দুর্নীতির কাজ করতেন প্রদীপ সিংহ ওরফে ছোটু। ইডির চার্জশিটে নাম রয়েছে এসএসসির অস্থায়ী কর্মী সমরজিতের। আদালতে নিজেদের নথি পেশ করে ইডি জানিয়েছে , প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ন হওয়ার পর ১৮৩ জন অযোগ্য প্রার্থীর ভুয়ো সুপারিশপত্র ‘প্রিন্ট’ করিয়েছিলেন এই সমরজিৎ আচার্য। নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত শান্তিপ্রসাদের নির্দেশেই সমস্ত কিছু চালনা করতেন সমরজিৎ।
ওই অযোগ্য প্রার্থীর ভুয়ো সুপারিশপত্র ‘প্রিন্ট’ করিয়ে তার ‘সফ্ট কপি’ পর্ষদের দফতরে পাঠিয়েছিলেন সমরজিৎ। এর পর সংশ্লিষ্ট দফতরই অযোগ্য ১৮৩ জনকে ভুয়ো নিয়োগপত্র দেয়। দাবি ইডির। আগেই প্রসন্নকুমার রায়ের সাথে কমিশনের অধিকারিকদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা আদালতে জানিয়েছে ইডি। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, প্রসন্নর আন্ডারে থাকা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের এজেন্টদের মাধ্যমে অযোগ্য প্রার্থীদের তথ্য সহ তাদের থেকে টাকা তুলতেন তার কর্মী ছোটু।
আরও পড়ুন: DA-র পর ফের ধামাকা! সরকারি কর্মীদের ভাতা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ মেমো জারি করল অর্থ দফতর
ইতিমধ্যেই কমিশনের অস্থায়ী কর্মী সমরজিৎকে অযোগ্য প্রার্থীদের নাম সুপারিশ করে যে ইমেল ছোটু পাঠিয়েছিলেন তা পেয়েছে ইডি। ২০২০ সালের ১৬ জুন সমরজিৎকে প্রদীপ ওরফে ছোটু ওই মেল করেছিলেন বলে দাবি ইডির। ২১ জন অযোগ্য প্রার্থীর নামের সুপারিশ করে মেল পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
পরবর্তী ধাপে সমরজিৎ সুপারিশপত্রের প্রিন্ট করিয়ে পর্ষদের দফতরে পাঠালে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে টেকনিক্যাল অফিসার রাজেশ লায়েক নিয়োগপত্র প্রিন্ট করাতেন। ইডির আরও দাবি, কোনো কোনো সময় সমরজিৎ মে কোন ‘ফরম্যাটে’ অযোগ্য প্রার্থীদের বিস্তারিত তথ্য পাঠাতে হবে তা ছোটুকে পাঠিয়ে দিতেন। সেই মতো কাজ করতেন ছোটু। নিয়োগপত্র সংশ্লিষ্ট স্কুলে পাঠানো পর্যন্ত এইভাবেই ইমেল চালাচালির মাধ্যমে গোটা কাজ চলত। আদালতে ইডি আরও জানিয়েছে সমরজিৎ অযোগ্য প্রার্থীদের সুপারিশপত্র প্রিন্ট করিয়ে শান্তিপ্রসাদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। এরপর শান্তিপ্রসাদের নির্দেশ মতো পর্ষদের দফতরে চলে যেত সেগুলো। সেখানে কল্যাণময়ের নির্দেশে দফতরের কর্মী রাজেশ সেসব প্রিন্ট করাতেন।