বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সব রহস্য সেই চিঠিতেই! রেশন দুর্নীতি (Ration Scam) মামলায় সম্প্রতি গ্রেফতার হয়েছেন আনিসুর রহমান ও আলিফ নুর। দুজনাই রেশন দুর্নীতিতে ধৃত বাকিবুর রহমান ঘনিষ্ঠ। আবার ইতিমধ্যেই এদের সাথে নাম জড়িয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্ৰিয় মল্লিকের (Jyotipriya Mallick)। একাধিক নতুন তথ্যও উঠে এসেছে তদন্তকারী সংস্থার হাতে।
জ্যোতিপ্ৰিয়র ২০ কোটি টাকা রয়েছে মুকুলের কাছে (Jyotipriya Mallick)
ইডি সূত্রে খবর রেশন দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়া আলিফ নুর ওরফে মুকুলের কাছে টাকা গচ্ছিত রেখেছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তবে কত টাকা রেখেছিলেন বালু? জ্যোতিপ্রিয়র মেয়ের কাছ থেকে উদ্ধার বাবার চিঠিই এখন গোয়েন্দাদের হাতিয়ার। সেই চিঠি থেকেই টাকার অঙ্ক বোঝার চেষ্টা করছেন ইডির তদন্তকারীরা।
তদন্তকারী সংস্থা জানাচ্ছে, জ্যোতিপ্ৰিয়র সঙ্গে মুকুলের লেনদেনের প্রমাণ হাতে থাকলেও এই নিয়ে মুখ বন্ধ সকলের। তাই আপাতত অনুমানের ভিত্তিতেই সেই হিসেব কষার চেষ্টা করছে ইডি। প্রসঙ্গত, গত অক্টোবর মাসে রেশন দুর্নীতির জেরে ইডির হাতে গ্রেফতার হন জ্যোতিপ্ৰিয় মল্লিক। তবে গ্রেফতারির পর পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন মন্ত্রী মহাশয়।
শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে SSKM হাসপাতালে ভর্তি হন জ্যোতিপ্রিয়। ভর্তি ছিলেন উডবার্ন ওয়ার্ডের বিলাসবহুল কেবিনে। সেই সময় সমস্ত বিষয়ের উপর নজরদারি চালাতে, মূলত জ্যোতিপ্রিয়র কেবিনে কারা ঢুকছে, কতক্ষণ থাকছে তা জানতে কেবিনের সামনে ও ভিতরে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় ইডি।
এদিকে ইডির সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যান জ্যোতিপ্ৰিয়। হাইকোর্ট জ্যোতিপ্রিয়র কেবিনের সামনে ও ভিতরে সিসিটিভি খুলে ফেলার নির্দেশ দেয়। আদালতের নির্দেশ ছিল ক্যামেরার বদলে বালুর কেবিনের বাইরে পাহারায় থাকবেন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষীরা। তাদের পরিচালনা করবে ইডি।
এরপরই ইডি আদালতে জানায়, হাসপাতালে থাকাকালীন ক্যামেরা সরিয়ে নেওয়ার পর চিঠির মাধ্যমেই নাকি মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন জ্যোতিপ্ৰিয়। কেন্দ্রীয় সংস্থার দাবি, যেদিন আদালতের নির্দেশে হাসপাতালে জ্যোতিপ্রিয়ের কেবিন থেকে সিসিটিভি ফুটেজ তুলে নেওয়া হয়, তার পরই তার সঙ্গে মন্ত্রী কন্যা প্ৰিয়দর্শনী দেখা করতে যায়। তার কাছে থেকেই জ্যোতিপ্রিয়র লেখা এক চিঠি উদ্ধার হয়। ইডি তরফে সেই চিঠি তুলে দাবি করা হয় চিঠিতে কার কাছে পাওনা কত, কাকে কত টাকা দিতে হবে, সেই সব কিছুর উল্লেখ ছিল। সেই চিঠিই এখন ইডির কাছে প্রধান হাতিয়ার।
ইডি সূত্রে খবর, ধৃত মন্ত্রীর নিজের হাতে লেখা সেই চিঠিতে সন্দেশখালির শেখ শাহজাহান, শংকর আঢ্য ওরফে ডাকু ও মুকুল ওরফে আলিফ নুরের নাম রয়েছে। ইডির দাবি, সেই চিঠিতেই মেয়ে প্ৰিয়দর্শনীকে মুকুলের কাছ থেকে মাসে মাসে ১০ লক্ষ টাকা করে সুদ সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয়।
শুধু তাই নয়, চিঠিতে আসল টাকাও মুকুলের কাছেই রয়েছে বলেও লেখেন জ্যোতিপ্ৰিয়। বালু লেখেন, আসল টাকায় হাত দিও না। এমনটাই দাবি ইডির। যদিও প্রাক্তন মন্ত্রীর সঙ্গে লেনদেনের যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মুকুল। এদিকে গোয়েন্দাদের অনুমান, জ্যোতিপ্ৰিয় মল্লিকের অন্তত ২০ কোটি টাকা গচ্ছিত রয়েছে এই মুকুলের কাছে।
আরও পড়ুন: ‘কী প্রমাণ আছে?’, ‘কী করে সম্ভব!’, চরম ক্ষুব্ধ হাইকোর্টের দুই বিচারপতি, এল বিরাট নির্দেশ
উল্লেখ্য, রেশন দুর্নীতির তদন্তে বৃহস্পতিবার দিনভর জেরা ও তল্লাশির পর মধ্যরাতে ইডির হাতে গ্রেফতার হন দেগঙ্গার তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি আনিসুর রহমান ওরফে বিদেশ ও তার ভাই আলিফ নুর ওরফে মুকুল। আদালতে ইডির দাবি, এসএসকেএম হাসপাতালে শুয়ে থেকেই এই দুই ভাইকে প্রতি মাসে ১০ লক্ষ টাকা সুদ বাবদ জমা দিতে বলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালু।
ইডির আরও দাবি, জ্যোতিপ্রিয়র (Jyotipriya Mallick) হিসেব রক্ষক শান্তনু ভট্টাচার্যের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ডিজিটাল প্রুফ পাওয়া গিয়েছে। যেখানে একটি ফোল্ডারে এই বিদেশ ও মুকুলের নামের উল্লেখ ছিল। সুদের বিষয়টি বালুর সিএ-র থেকে পাওয়া নথিতেই মিলেছে। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, জ্যোতিপ্রিয়কে টাকার জোগান দিতেন এই দুই ভাইই। এককথায় তারা ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রীর ‘মানি মেশিন’।