বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সম্প্রতি ফ্ল্যাটে মিলেছে একুশ কোটি টাকার নগদ অর্থ, সঙ্গে বিশাল পরিমাণ সোনা গয়না, একাধিক বিদেশি মুদ্রা এবং ২০ টি মোবাইল ফোন। সেই অপরাধেই বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে (Arpita Mukherjee) গ্রেফতার করেছে ইডি (ED) আর এবার অর্পিতার বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনল তারা। গতকাল আদালতে দাঁড়িয়ে ইডি আইনজীবী জানান, “স্কুলে বেআইনি নিয়োগের আখড়াস্থল হল অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি।” এমনকি, তাঁকে বেআইনি নিয়োগের অন্যতম চক্রী বলেও গতকাল আদালতে দাবি পেশ করেন ইডি আইনজীবী।
সাম্প্রতিককালে, স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং প্রাথমিক টেট দুর্নীতি মামলায় তোলপাড় গোটা বাংলা। অতীতে এ সকল দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং বর্তমান শিক্ষার প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়। পরবর্তীতে তদন্তে নামে ইডি এবং সম্প্রতি বাংলার একাধিক স্থানে তল্লাশি চালিয়ে শেষ পর্যন্ত পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে ২১ কোটি টাকার নগদ অর্থ সহ বিদেশি মুদ্রা এবং একাধিক সোনা গয়না উদ্ধার করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এই অপরাধে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে তারা।
এই মামলার শুনানি চলাকালীন গতকাল ইডি আইনজীবী জানান, “অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালানোর পর প্রচুর পরিমাণে অর্থ, বিদেশি মুদ্রা সহ বেআইনি নিয়োগের একাধিক নথি পাওয়া গিয়েছে।” ফলে এ সকল নথি কোথা থেকে এলো, সেই প্রসঙ্গে তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে বলে গতকাল অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের আবেদন করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এক্ষেত্রে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পাশাপাশি নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত একাধিক নথিও তাঁর বাড়ি থেকে পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি ইডির।
উল্লেখ্য, গতকাল ইডির বিশেষ আদালত বন্ধ থাকার কারণে সিএমএম আদালতে তোলা হয় অর্পিতাকে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত তাঁকে একদিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। আজ সেই মামলার ফের একবার শুনানির কথা রয়েছে। গতকাল সকল অভিযোগ প্রসঙ্গে অর্পিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, “আইনের উপর আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে। আমি কোন দলের সঙ্গে যুক্ত নই।” এরপরেই তিনি তাঁর মায়ের খেয়াল রাখার প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন।
যদিও বর্তমানে স্কুল সার্ভিস কমিশন সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতার বিরুদ্ধে মামলা মজবুত করার দিকেই এগোচ্ছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। এমনকি আদালতে ইডি আইনজীবীর পক্ষ থেকে অর্পিতাকে ‘প্রভাবশালী’ তকমাও দেওয়া হয়। এরপরে তিনি জানান, “তল্লাশি চালানোর পর কোটি কোটি টাকা মেলার পাশাপাশি একাধিক বেআইনি নথি মেলেছে। ফলে এটা বলতেই হবে যে, অর্পিতার বাড়ি বর্তমানে বেআইনি নিয়োগের আখড়াস্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
ফলে একদিকে যখন শারীরিক অসুস্থতার কারণে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে উড়িষ্যায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তো অপরদিকে আবার অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একের পর এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলে চলেছে ইডি। তবে শেষ পর্যন্ত আদালতের রায় কি হয় এবং ইডির হাতে আরো নতুন কোনো তথ্য উঠে আসে কিনা, সেদিকে তাকিয়ে সকলে।