কখনও এরকম কিছু শুনেছেন যে মাটি ছাড়া কৃষিকাজ করা যেতে পারে। আর এটি অদ্ভুত মনে হলেও, এটাই সত্যি এবং এটির প্রয়োজনও রয়েছে। গত কয়েক দশকে যেভাবে দেশে উর্বর জমির ক্ষেত্রফল হ্রাস পেয়েছে, আর এই পরিস্থিতিতে আমাদের কিছু বিকল্প দরকার। হাইড্রোপোনিক্স একটি অনুরূপ কৌশল যা মাটি ছাড়াই চাষ করা যেতে পারে। এই প্রযুক্তিটি কলম্বিয়াতে উদ্ভাবিত হয়েছিল আর আজ এটি প্রতিটি দেশে জায়গা করে নিচ্ছে। এটা সীমিত জমি এবং সংস্থানগুলিতে কৃষির আরও ভালো উপায়।
ভারতেও অনেক লোক এই কৌশল গ্রহণ করছেন । সামরিক পরিবারের সদস্য প্রকাশ, ১৪ বছর ভারতীয় নৌবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করার পর ৩৫ বছর বয়সে অবসর নেন। প্রকাশ যখন সেই সংস্থার পরিচালকের সাথে দেখা করতে তাঁর অফিসে পৌঁছেছিলেন, সেখানে দুটি সুন্দর গ্রিনহাউস বাগান দেখেন।এই বাগানে ফল, ফুল এবং শাকসব্জী জন্মেছিল এবং তাও মাটি ছাড়াই। আর এরপর থেকেই প্রকাশ এই ধারণাটি আরও গভীরভাবে বুঝতে চেষ্টা করলেন। এই কৌশল সম্পর্কে তিনি আরও বেশি জানতে থাকেন, তত বেশি তিনি নিজে চেষ্টা করতে চেয়েছিলেন।বহু বছর বিদেশে হাইড্রোপোনিক্স কৌশলগুলি শেখার পরে এবং অনুশীলন করার পরে, তিনি ভারতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন , “আমার লক্ষ্য ছিল হাইড্রোপোনিকস সম্পর্কে ভারতের জনগণকে সচেতন করা এবং তাদের নিজস্ব জৈব ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য উৎপাদণের জন্য উদ্বুদ্ধ করা। ধনী হোক বা দরিদ্র ভাল এবং স্বাস্থ্যকর খাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার”।২০০৮ সালে, তিনি কর্ণাটকের ধরওয়াদ জেলায় ‘পোষা ভারো প্রকল্প’ শুরু করেছিলেন। তাঁর প্রথম প্রকল্পটি ছিল বেঙ্গালুরুর হেনুর-এতিমখানার জন্য। তিনি এতিমখানায় আড়াইশো বর্গফুটের বাগান স্থাপন করেছিলেন এবং সেখানকার বাচ্চাদেরও এই কৌশলটি শিখিয়েছিলেন।এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার জন্য, একটি পলি হাউস প্রথমে তৈরি করা হয়, যাতে উদ্ভিদগুলি নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা এবং জলবায়ুতে বৃদ্ধি পায়। উদ্ভিদটি বাড়ানোর জন্য, কেবল কোকো-পিট, ভার্মিকুলাইট এবং পার্লাইটের মিশ্রণে পূর্ণ একটি গ্রো ট্রে প্রয়োজন। বীজগুলি এতে বপন করা হয় এবং তারপরে সেগুলি অঙ্কুরিত হওয়া ব্দি জল সরবরাহ করা হয়। পলি হাউস একটি নির্দিষ্ট ফুল, ফল বা উদ্ভিজ্জের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে তৈরি করা হয়, তাই উত্থাপিত তাপমাত্রার কারণে কোনও পোকামাকড় গাছের ক্ষতি করে না।
সাধারণত মাটিতে পাওয়া পোকামাকড়গুলিও এখানে উপস্থিত নেই। আর ফল, ফুল এবং শাকসব্জী জন্মানোর এটি সবচেয়ে পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর উপায়।প্রকাশ এখনো পর্যন্তপ্রায় ১০,০০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, “আমি আমার প্রশিক্ষণ অধিবেশন থেকে বুঝতে পেরেছিলাম যে এই প্রযুক্তিটি ইতিমধ্যে দেশে বিদ্যমান, কিন্তু দক্ষতার অভাব রয়েছে। আমি আগে এক দিনের ওয়ার্কশপ করতাম, কিন্তু গত বছর থেকে আমি লোকদের জন্য তিন মাসের আবাসিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও শুরু করেছি। “