জার্মানি, আমেরিকার মতো দেশে খেলেছেন ভারতের হয়ে! পেটের দায়ে আজ জ্যোমাটোর ব্যাগ বইছেন পৌলমী

বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: অনেকেই অনেক সময় প্রশ্ন করেন যে ভারতের হাতে যোগানের অভাব না থাকা সত্ত্বেও কেন ভারত নিলেন পক্ষে এশিয়ান ফুটবলের মহাশক্তি হয়ে উঠতে পারে না। বর্তমানে এশিয়ার মহা শক্তিধর ফুটবল দেশগুলির মধ্যে অনেকেই ৩০-৪০ বছর আগে ভারতের থেকে ফুটবলে পিছিয়ে ছিল বা একই পর্যায়ে ছিল। ভারতে ফুটবলের প্রতি আগ্রহী দর্শকের অভাব নেই। তবে কেন ভারত ফুটবলে এত পিছিয়ে? বেহালার পৌলমী অধিকারীর গল্প শুনলে হয়তো রূঢ় বাস্তবটা সকলের সামনে আরও একবার পরিষ্কার হবে।

একসময় দেশের হয়ে বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক টুর্নামেন্টে মাঠে নামা বেহালার পৌলমী অধিকারী এখন বিখ্যাত খাদ্য বিনিময় সংস্থা জ‍্যোমাটোর এক সাধারণ ডেলিভারি গার্ল। সম্প্রতি এই ফুটবলের একটি সাধারণভাবে নেওয়া সাক্ষাৎকারের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে যেখানে এই নিয়ে ওই ফুটবলের কে অত্যন্ত আফসোস করতে শোনা গিয়েছে। ফুটবল খেলে যে সামান্য এটুকু হতো তাতে সংসার চলে না। ফলে বাধ্য হয়েই দিনের সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা আয়ের জন্য এই পেশাকে বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন পৌলমী।

মাঠ এখনো ভালবাসেন, মিস করেন, কিন্তু তিনি নিরুপায়। ভিডিওতে আফসোস করে বলতে শোনা গেল, “কেন ফুটবলের জন্য এত কষ্ট করতে গেলাম সেটা এখন মাঝেমধ্যে ভাবি! কিন্তু এখন কোনও উপায় নেই। পেট চালানোর জন্য একপ্রকার বাধ্য হয়ে এই পেশাকে বেছে নিয়েছি।” বেহালার শিবরামপুরের বাসিন্দা পৌলমী ভারতের অনূর্ধ্ব ১৬, অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, শ্রীলঙ্কা সমস্ত জায়গায় ফুটবল খেলেছেন। বেহালার বাড়িতে সাজানো রয়েছে সেই সমস্ত প্রতিযোগিতা গুলি থেকে প্রাপ্ত শংসাপত্র ও মেডেলগুলি। কিন্তু আজ যেন সেগুলো অর্থহীন।

এক সময় ফুটবল খেলতে গিয়ে চোট পাওয়া পৌলমী, চোটকে হারিয়ে মাঠে ফিরেছিলেন। কিন্তু সেই সময় তার পাড়ার ক্লাব বা সরকার কেউই তার পাশে দাঁড়ায়নি। এখন সকাল নটায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাত্রি দশটায় বাড়ি ফেরার সময় ২৮ বছর বয়সী পৌলমি মনে মনে একটাই জিনিস প্রার্থনা করেন, যা তিনি এই ভিডিওতেও বলেছেন। সরকারের কাছে তার আর্তি যেন তার মতো আর কোনও মহিলা ফুটবলারের এমন অবস্থা না হয়।

পৌলমীর এমন অবস্থা দেখে ভারতের মহিলা দলের প্রাক্তন অধিনায়ক কুন্তলা ঘোষ দস্তিদার আফসোস প্রকাশ করেছেন। আমি জানিয়েছেন যে পৌলোমী একা নন আরো অনেক মহিলা ফুটবলার এমনভাবে অভাবের কারণে বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। পেটের দায়ে কেউ আজ সিভিল পুলিশ, আবার কেউ ডেলিভারি গার্ল। পৌলমী যে হতাশ না হয়ে সংসার চালাচ্ছেন নিজের পরিশ্রমে, তার জন্য তাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন কুন্তলা।


Reetabrata Deb

সম্পর্কিত খবর