বাংলাহান্ট ডেস্ক : মেয়ের জিন্স শার্ট পরার অপরাধে সমাজচ্যুত করা হল পরিবারকে। একবিংশ শতকে দাঁড়িয়েও এহেন মধ্যযুগীয় বর্বরতার সাক্ষী থাকল আধুনিক সমাজ। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে বাংলাদেশের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে।
এই গ্রামেরই মেয়ে নুরুন্নাহার চৌধুরী ঝর্ণা। পড়াশোনায় বরাবরই মেধাবি তিনি। গতবছর ডিসেম্বর মাসে আমেরিকাকে উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়েছেন ঝর্ণা। সেখানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতেই শার্ট এবং জিন্স পরে। এই ছিল তাঁর অপরাধ। তাঁর এই জিন্স শার্ট পরা ছবি স্যোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দেন বেশ কিছু যুবক। আর তা জানাজানি হতেই রীতিমতো সমাজচ্যুত হতে হল তাঁর পরিবারকে। পুরো ঘটনায় অভিযোগের তীর স্থানীয় মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে।
তরুণীর পরিবার সূত্রে জানা যাচ্ছে এই প্রথম নয়, এর আগেও ঝর্ণাকে সমাজের রোষানলে পড়তে হয়েছে। মেধাবি হওয়ার পাশাপাশি সমাজসেবার সঙ্গেও যুক্ত তিনি। সেই কারণেই একের পর এক বাধা সমাজ থেকে এসেছে তাঁর সামনে। পুরো ঘটনাটিতে কার্যতই ভেঙে পড়েছেন ওই তরুণী সহ গোটা পরিবার।
ওই তরুণীর পাশ্চাত্য পোষাক পরা ছবি সামনে আসার পর একাধিক বার তাঁর পরিবারকে বিচারসভায় ডাকে মসজিদ কমিটি। কিন্তু কোনো বারই সেখানে উপস্থিত হননি ঝর্ণার বাবা। এরপরই রীতিমতো ফতোয়া জারি করে সমাজচ্যুত করা হয় ওই পরিবারকে। তা জানতে পেরে দিশাহারা অবস্থায় পুলিশের দ্বারস্ত হন তরুণীর বাবা। পুরো ঘটনার ভিত্তিতে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএও ফারহাদ চৌধুরি এই প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কাউকেই এভাবে সমাজচ্যুত করা সম্ভব নয়। উভয়পক্ষকে নিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে একটি বৈঠক করার কথাও জানিয়েছেন তিনি। সেখানেই ব্যাপারটির মীমাংসা করা হবে।
অন্যদিকে চাপের মুখে পড়ে একপ্রকার ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছে মসজিদ কমিটি। কমিটির সভাপতি মাখন মিয়া জানান, তাঁদের ভুল বোঝানো হয়েছিল। তাই এই কাজের জন্য অনুতপ্ত তাঁরা। একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে এহেন মধ্যযুগীয় বর্বরতায় কার্যতই তোলপাড় সর্বত্রই।