বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভারত মূলত একটি কৃষিপ্রধান দেশ। দেশের প্রতিটি প্রান্তেই ব্যাপকহারে চাষ পরিলক্ষিত হয়। তবে, অঞ্চলভেদে এবং চাহিদা অনুযায়ী চাষের ধরণ কিছুটা পাল্টে যায়। যদিও, সাম্প্রতিককালে প্রথাগতভাবে ফসল চাষের পথে না হেঁটে অনেকেই নিত্য-নতুন লাভজনক চাষের পদ্ধতি অবলম্বন করেন। শুধু তাই নয়, করোনার মত ভয়াবহ মহামারীর ফলে এই পরিবর্তন আরও বেশি ভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে।
যার ফলে দেশের কৃষকরা সচেতন হয়ে ভালো এবং লাভজনক চাষের দিকে ঝুঁকছেন। বর্তমানে, কেন্দ্রীয় সরকার সারা দেশে বিভিন্ন ঔষধি গাছের চাষের প্রচারের উপর জোর দিচ্ছে। পাশাপাশি, আয়ুষ মন্ত্রক আগামী বছরের মধ্যে ৭৫ লক্ষ বাড়িতে ঔষধি গাছ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যও নির্ধারণ করেছে। আর আমাদের দেশে ঔষধি গাছ বলতেই যে গাছটির প্রসঙ্গ প্রথম মনে আসে তা হল তুলসী। যে কারণে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই চাষ বিপুল হারে শুরু হয়েছে।
এমনকি, উত্তরপ্রদেশের হামিরপুর জেলায় একটি গ্রাম রয়েছে, যেখানে ৯০ শতাংশ কৃষক তুলসী চাষ করে ইতিমধ্যেই প্রচুর লাভ পেতে শুরু করছেন।
এই গ্রামে ব্যাপক হারে শুরু হয়েছে তুলসী চাষ:
হামিরপুরের জালালপুর সড়কের ধারে অবস্থিত উমরিয়া গ্রামের মোট জনসংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। এখানকার অধিকাংশ গ্রামবাসীর জীবিকা কৃষির উপর নির্ভরশীল। তিন বছর আগে গ্রামের কয়েকজন কৃষক পরীক্ষামূলকভাবে তুলসী চাষ শুরু করেন এখানে। আর প্রথমবারেই বিপুল লাভ করেন তাঁরা। তারপর থেকেই বাকিরা ওই কৃষকদের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গ্রামে ব্যাপক হারে এই গাছের চাষ শুরু করেন।
একশো দিনেই পাওয়া যায় এক লক্ষ টাকা:
উমারিয়ার পুরান রাজপুত তাঁর ১০ বিঘা জমিতে তুলসী চাষ করেন। এক দশক আগে পর্যন্ত তিনি চরম আর্থিক সমস্যায় ভুগলেও তুলসী চাষের ফলে উনার অর্থনৈতিক অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। এই প্রসঙ্গে তিনি জানান যে, “১০ বিঘা জমিতে তুলসী চাষে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘায় দেড় থেকে দুই কুইন্টাল ফলন পাওয়া যায়। এরপর “অর্গানিক ইন্ডিয়া” নামের একটি কোম্পানি আমাদের কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কুইন্টাল ১০ হাজার টাকা দরে তুলসী কিনে নেয়। যার কারণে আমরা খুব সহজেই এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাভ পাই।”
জেনে নিন কিভাবে তুলসী গাছের চাষ করা হয়:
মূলত, বেলে ও দোআঁশ মাটি তুলসী চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী বলে মনে করা হয়। এই চাষের জন্য, প্রথমত, জুন-জুলাই মাসে বীজের মাধ্যমে নার্সারি তৈরি করা হয়। নার্সারি প্রস্তুত হওয়ার পর এটি প্রতিস্থাপন করে রোপণের সময়ে প্রতিটি লাইনের দূরত্ব রাখা হয় ৬০ সেন্টিমিটার এবং প্রতিটি গাছের দূরত্ব থাকে ৩০ সেন্টিমিটার। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল ১০০ দিন পরেই এই গাছ থেকে ফসল পেয়ে যান কৃষকরা।
এই চাষের সুবিধা:
এই চাষের ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুবিধা রয়েছে। সেগুলি হল: প্রথমত, এই চাষের ক্ষেত্রে গাছের খুব বেশি যত্নের প্রয়োজন হয় না। দ্বিতীয়ত, কৃষকেরা ১০০ দিনের মধ্যেই ফসল পেয়ে যান গাছ থেকে। তৃতীয়ত, কম খরচে বেশি লাভ করা যায়। চতুর্থত, তুলসী বহুল পরিমানে ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
এছাড়াও, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে তুলসী গাছকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। তুলসী এমনই একটি ঔষধি গাছ, যা বহু রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এর শাখা-প্রশাখা, পাতা ও বীজের নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে। যদিও তুলসী গাছের পাতা পুজোর কাজেও ব্যবহৃত হয় এবং এর পৌরাণিক তাৎপর্যও রয়েছে। যে কারণে দেশের বেশিরভাগ বাড়ির আঙিনায় এই গাছ অবশ্যই দেখা যায়।