পরীক্ষার ঠিক আগেই বলেছিলেন একটি কথা, তাতেই বদলে গেল জীবন; অনুপ্রেরণার গল্প ভাগ করে নিলেন দুঁদে পুলিশ অফিসার

বাংলাহান্ট ডেস্কঃ প্রতিটি সফল মানুষের পেছনেই থাকে এক একটি কঠিন লড়াইয়ের গল্প। যে সংগ্রাম অন্যকে অনুপ্রেরণা জোগায়। সম্প্রতি সংবাদ শিরোনামে আসা, পুত্রকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে বাবার ১০৫ কিলোমিটার সাইকেল পাড়ি খবর পড়ে নিজের জীবনের এমনই এক লড়াইয়ের গল্প শোনালেন দুঁদে পুলিশ অভিসার।

FB IMG 1598356105085

উত্তর প্রদেশ ক্যাডারের দাপুটে আইপিএস নবীন সিকেরা যিনি বর্তমানে ইউপির মেরুটের আইজি পদে নিযুক্ত তার সাফল্যের পিছনের গল্পটি ভাগ করে নিয়েছিলেন নেটাগরিকদের সাথে৷ ফেসবুকে পিতা ও পুত্রের খবরটির একটি পেপার কাটিং ও নিজের পিতা মাতার একটি ছবি পোস্ট করে এই আধিকারিক লেখেন

‘আমি যখন এই সংবাদটি দেখলাম তখন আমি কয়েক দশক পিছিয়ে গিয়েছিলাম, বাবা আমাকে আইআইটি দেওয়ার জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছিলেন (পরীক্ষাটি অন্য শহরে ছিল)। সেখানে অনেক শিক্ষার্থীও গাড়ি করে এসেছিল, তাদের বাবা-মা বেশ উৎসাহের সাথে তাদের শেষ মুহুর্তের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, আমি তাদের নতুন বইগুলি (যা আমি কখনও দেখিনি) অবাক চোখে দেখছিলাম। এবং আমি ভাবছিলাম যে এই ছেলেদের সামনে আমি কোথায় দাঁড়াতে পারব, এবং মনে মনে হতাশা আসতে শুরু করল। আমার বাবা বিষয়টি লক্ষ্য করেছিলেন এবং সেখান থেকে আমাকে আরও খানিক দূরে নিয়ে গেলেন এবং একটি চমত্কার পেপ টক দিলেন। তিনি বলেছিলেন যে বিল্ডিংয়ের শক্তি তার ভিত্তির উপর নির্ভর করে, তার উপর ঝুলন্ত ঝাড়বাতিতে নয়,

উৎসাহের সাথেই আমি পরীক্ষা দি। যখন ফলাফল এলো, আগ্রার সেই কেন্দ্র থেকে মাত্র ২ জন পাস করেছিল, যার মধ্যে একজন আমি
ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যে এই পিতা এবং পুত্রও তাদের কঠোর পরিশ্রমের সঠিক ফল দান করুন

আজ আমার বাবা আমাদের সাথে নেই, তবে তাঁর কঠোর পরিশ্রমের ফল তাঁর শিক্ষাই, প্রতিটি পাঠ প্রতি মুহূর্তে আমার সাথে থাকে এবং প্রতি মুহূর্তে মনে হয় যে আমি তাকে আরও একবার পেয়ে গেলে আমার বুকে জড়িয়ে ধরব’

প্রসঙ্গত, বিহারের ধর জেলার মানওয়ার তহসিলের এক গ্রামের এক পিতা প্রায় ৮৫ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে ছেলেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছে৷ ছেলেটির দশম শ্রেণীর সাপ্লিমেন্টারী পরীক্ষা ছিল। ছেলে আশিসের কথাউ, “বাস চলাচল করছে না তাই আমরা সাইকেল চালিয়ে এসেছি। আমি অফিসার হতে চাই”

জানা যাচ্ছে, শুভরাম সোমবার রাতে ১২ টায় তার যাত্রা শুরু করে। ধরে থাকার ব্যবস্থা না থাকার কারণে, তিনি তাঁর সাথে তিন দিনের খাবার নিয়েছিলেন। টানা সাইকেল চালিয়ে মঙ্গলবার সকালে পরীক্ষা শুরু হওয়ার ঠিক ১৫ মিনিট আগে সকাল ৭ টা ৪৫ মিনিটে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে যায়। জানা যাচ্ছে, তারা ভোর 4 টায় মান্ডু পৌঁছেছিল।

তাদের ১০৫ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানোর ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই। জেলা কালেক্টর জেলা শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেন যে ঐ পড়ুয়া এবং তার পিতাকে যত শীঘ্র সম্ভব ইতিবাচক সহায়তা প্রদান করে থাকার ব্যবস্থা এবং খাবারের উপযুক্ত ব্যবস্থা করার।

সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ঐ পিতা জানিয়েছেন, তিনি একজন শ্রমিক। তিনি চান না তার পুত্রও শ্রমিক হোক। তিনি তার ছেলেকে বড় অফিসার করতে চান৷ সেই লক্ষ্যেই ১০৫ কিমি সাইকেল চালিয়ে নিয়ে এসেছেন পরীক্ষাকেন্দ্রে। তিনি আরো বলেছেন, তার ছেলে পড়াশোনায় খুবই ভালো যদিও লকডাউন এবার পড়াশোনায় ক্ষতি করেছে।

সম্প্রতি এই ঘটনার একটি পেপার কাটিং টুইট করে আনন্দ মহিন্দ্রা জানিয়েছেন, এই রকম পিতামাতাই দেশের অগ্রগতির বাহক। আমাদের সংস্থা এই ছেলেটির পড়াশোনার দ্বায়িত্ব নিতে চায়।

 


সম্পর্কিত খবর