বাংলাহান্ট ডেস্কঃ রাখীবন্ধন (Raksha Bandhan) বা রাখীপূর্ণিমা (Rakhipurnima) ভারতের একটি পবিত্র উৎসব। ভাই ও বোনের মধ্যে প্রীতিবন্ধনের উৎসব হল এই রাখি বন্ধন উৎসব। বিভিন্ন ধর্ম নির্বিশেষে হিন্দু, জৈন ও শিখরা এই উৎসব পালন করে থাকে। দিদি বা বোনেরা মঙ্গল কামনা করে তাদের ভাই বা দাদার হাতে রাখী নামে একটি পবিত্র সুতো বেঁধে দেয়। এই রাখীটি হল তাঁদের মধ্যেকার স্নেহের, ভালোবাসার প্রতীক।
এই নিয়ম পালনের মাধ্যমেই ভাই বা দাদারা তাঁদের দিদি বা বোনদের আজীবন রক্ষা করা শপথ নেয়। তবে এই রাখি বন্ধনের সূচনার পেছনেও রয়েছে নানান ইতিহাস, যা অনেকেরই অজানা। আজকে আমরা জেনে নেব রাখি বন্ধন অর্থাৎ রক্ষা বন্ধন সম্পর্কিত নানান অজানা তথ্য।
শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে রাখীবন্ধন উৎসব পালিত হয়। এই রাখীবন্ধন উৎসবের সূচনা সম্পর্কে রয়েছে নানান মতামত। কেউ কেউ বলেন চিতোরের বিধবা রানি কর্ণবতী মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের সাহায্য প্রার্থনা করে একটি রাখী পাঠিয়েছিলেন। এর পর থেকে এই উৎসবের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।
আবার অনেকের মতে, মহাভারতে একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কৃষ্ণের কবজিতে আঘাত লেগে রক্তপাত শুরু হলে পাণ্ডবদের স্ত্রী দ্রৌপদী তাঁর শাড়ির আঁচল খানিকটা ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাতে বেঁধে দেন। এই ঘটনার পরে দ্রৌপদী কৃষ্ণের অনাত্মীয়া হলেও, তিনি দ্রৌপদীকে নিজের বোন বলে ঘোষণা করেন এবং তাঁর বস্ত্রহরণের সময় তাঁকে রক্ষা করেন।
শোনা যায়, রাখীবন্ধনের দিন গণেশের বোন গণেশের হাতে একটি রাখী বেঁধে দেন। এতে গণেশের দুই ছেলে শুভ ও লাভের হিংসে হয়। তাদের কোনো বোন না থাকায় তারা বাবার কাছে একটা বোনের বায়না ধরে। গণেশ তখন তাঁর দুই ছেলের সন্তোষ বিধানের জন্য দিব্য আগুন থেকে দেবী সন্তোষীর জন্ম দেন।
রাখি বন্ধনের পেছনে এরকম নানান যুক্তি থাকলেও, বাঙালির কাছে রয়েছে আরও একটি অকাঠ্য যুক্তি। ১৯০৫ সালে দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল। সেইসময় বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ করার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখী বন্ধন উৎসব পালন করেছিলেন। তিনি কলকাতা, ঢাকা ও সিলেট থেকে হাজার হাজার হিন্দু ও মুসলিম ভাই ও বোন কে আহ্বান করেছিলেন। সেইসঙ্গে একতার প্রতীক হিসাবে সকলের হাতে রাখি পরিয়ে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করেছিলেন।
নানা মুনির নানা মত থাকলেও, ভাই বোনের মধ্যে মধুর সম্পর্কের প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে আজ রাখি বন্ধন উৎসব পালিত হচ্ছে। আর এই সম্পর্কের দ্বারা ভাই তাঁর বোনকে সারাজীবন রক্ষা করার অঙ্গীকার করে।