বাংলাহান্ট ডেস্কঃ ভারতের (india) বিভিন্ন প্রসিদ্ধ ধনী মন্দিরের মধ্যে অন্যতম শ্রী ভেক্টেশ্বর স্বামী মন্দির অর্থাৎ তিরুপতি বালাজির মন্দির (Sri Venkateswara Swamy Vaari Temple)। অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তুর জেলার অন্তর্গত তিরুপতির তিরুমালা শৈলশহরে অবস্থিত এই মন্দির ভগবান বিষ্ণুর বিচরণ স্থান। এই মন্দির তিরুমালা মন্দির ও তিরুপতি বালাজি মন্দির নামেও প্রসিদ্ধ।
পুরাণ মতে জানা যায়, কলিযুগের দুঃখ ও যন্ত্রণা থেকে মানব সমাজকে মুক্ত করতে ভগবান বিষ্ণু তিরুমালায় ‘ভেক্টেশ্বর’ রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৫৩ মিটার উঁচুতে অবস্থিত এই মন্দির যে পাহাড়ের কোলে অবস্থিত তাঁর সাতটি চূড়া রয়েছে। শেষাদ্রি, নীলাদ্রি, গরুড়াদ্রি, অঞ্জনাদ্রি, বৃষভাদ্রি, নারায়ণাদ্রি ও বেঙ্কটাদ্রি এই সাত চূড়াকে হিন্দুরা আদিশেষের সাতটি মাথা বলেও মনে করেন।
খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দ নাগাদ নির্মিত এই মন্দিরের গর্ভগৃহকে ‘আনন্দ-নিলয়ম’ বলা হয়। এই মন্দিরে কিন্তু প্রধান দেবতাকে পূর্বমুখ করে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। এই মন্দিরে প্রতিদিন হাজার হাজার পুণ্যার্থী এসে ভগবান দর্শন করে যান। তবে এই মন্দিরের ভগবান দর্শনের ক্ষেত্রে ভক্তদের বেশি সময়ও দেওয়া হয় না। বলা হয় মাত্র কয়েক সেকেন্ড ভগবানকে দর্শন করলেই জীবন ধন্য হয়ে যায়।
অন্ধ্রপ্রদেশের এই তিরুপতি বালাজির মন্দির নিয়ে একটি বিষয় সেই সুদূর প্রাচীন কাল থেকেই প্রচলিত আছে। এই মন্দিরে ভক্তগণ অর্থ, ধন সম্পদ দানের পাশাপাশি নিজেদের মাথার চুলও দান করে আসেন। তবে এটি কিন্তু কোন সাধারণ বিষয় নয়, এর পেছনে রয়েছে এক পৌরাণিক ঘটনা।
কথিত আছে, ভগবান ভেক্টেশ্বরের মাথায় এক নাবালক রাখাল নিজের অজান্তেই আঘাত করেছিলেন। তখন তাঁর মাথার কিছু অংশের চুল ছিঁড়ে পড়ে যায়। নীলাদেবী নামে এক গন্ধর্ব রাজকুমারী এই ঘটনাটি দেখতে পান। ভগবান ভেক্টেশ্বর প্রভূত সৌন্দর্যের অধিকারী ছিলেন। তাই তখন রাজকুমারী নীলাদেবী মনে করেন, ভগবান ভেক্টেশ্বরের সৌন্দর্যে কোন ক্ষুত থাকা উচিত নয়। যেমন ভাবা তেমন কাজ। তখন রাজকুমারী নীলাদেবী নিজের মাথার চুল কেটে জাদুশক্তির সাহায্যে ভগবান ভেক্টেশ্বরের মাথায় প্রতিস্থাপন করেন।
কেশ নারীর অন্যতম ভূষণ। প্রতিটি নারীই চায় সুন্দর কেশের অধিকারী হতে। রাজকুমারী নীলাদেবী যেহেতু নিজের সৌন্দর্যের কথা না ভেবে ভগবান ভেক্টেশ্বরের সৌন্দর্যের বিষয়ে ভেবে নিজের মাথার চুল তাঁকে দান করেছিলেন, তাই ভগবান ভেক্টেশ্বরও রাজকুমারী নীলাদেবীকে এক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। রাজকুমারী নীলাদেবীর এই আত্মত্যাগ বিফলে যেতে দিলেন না ভগবান ভেক্টেশ্বর।
তিনি প্রতিশ্রুতি দিলেন, এই ভেক্টেশ্বর মন্দিরে আগত প্রত্যেক ভক্ত তাঁদের নিজের মাথার চুল অর্পণ করবেন ভগবান ভেক্টেশ্বরকে। এবং সেই চুল প্রকৃত অর্থে পাবেন রাজকুমারী নীলাদেবী। এইভাবে আজও এই মন্দিরে আগত প্রত্যেক ভক্তগণ নিজেদের চুল ভগবানের নামে উতসর্গ করেন।
ধনী মন্দিরের তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের এই তিরুপতি বালাজির মন্দির। প্রতিদিন হাজার হাজার ভতক এই মন্দিরে ভগবান দর্শনে আসেন। শ্রী ভেক্টেশ্বর স্বামীর এই তিরুপতি বালাজির মন্দির অর্থাৎ ভগবান বিষ্ণুর বিচরণ স্থানে প্রতিদিন অগণিত ভক্তের সমাগমের ফলে বছরে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা কোষাগারে জমা পড়ে।