দৃষ্টিশক্তি হারালেও থামেনি স্বপ্ন, এশিয়ার প্রথম দৃষ্টিহীন পর্বতারোহী হিসেবে এভারেস্ট জয় করলেন ইনি

Published On:

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ প্রত্যেক পর্বতারোহীর কাছেই এক বড় স্বপ্ন বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টকে ছুঁয়ে দেখা। তেনজিং নরগে, এডমন্ড হিলারিরা প্রথমবার সেই স্বপ্নকে সফল করার পর সারা বিশ্বজুড়ে এই স্বপ্নকে তারা করে বেড়িয়েছেন বহু মানুষ। আর সেই স্বপ্নকে তারা করতে গিয়েই কত মানুষ যে চির নিদ্রায় শায়িত পর্বতের ঠান্ডা বরফের তলায় কেউ হয়তো হিসেবে রাখেনি। একজন সুস্থ সবল পর্বতারোহীর পক্ষেই মাউন্ট এভারেস্ট জয় রীতিমতো কঠিন কাজ। ওই আবহাওয়ায় নিজেকে মানিয়ে নিয়ে অ্যাক্লেমেটাইজ করাও সহজ কথা নয়। কিন্তু সেই পর্বত আরোহী যদি হয়ে পড়েন দৃষ্টিহীন তাহলে চ্যালেঞ্জটা যে কতটা কঠিন হয়ে ওঠে তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু সমস্যাটা যত কঠিন হয় কখনো কখনো ঠিক ততখানি বেড়ে যায় মানুষের ইচ্ছাশক্তি। সেটাই আরেকবার প্রমান করলেন চীনের ৪৬ বছর বয়সী দৃষ্টিহীন পর্বত আরোহী ঝাং হং। গত ২৪ মে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করার পর আপাতত তিনি হলেন এশিয়ার প্রথম দৃষ্টিহীন ব্যক্তি যিনি এভারেস্ট জয় করেছেন।

সারা পৃথিবীতে সফলভাবে এভারেস্ট জয় করেছেন মাত্র তিনজন দৃষ্টিহীন পর্বতারোহী। এবার সেই তালিকায় সংযুক্ত হলো ঝাং হংয়ের নাম। চিনের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের শহর চংকুয়াংয়ে জন্ম হংয়ের। ছোটবেলা থেকেই ছিল পর্বত জয়ের প্রতি ভালোবাসা। কিন্তু মাত্র ২১ বছর বয়সে গ্লুকোমার কারণে নিজের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই মারাত্মক ভাবে ভেঙে পড়েন হং। কিন্তু এই ২০০১ সালেই এভারেস্ট জয় করেন মার্কিন দৃষ্টিহীন পর্বতারোহী এরিক ওয়েহেনমায়ের। সেই খবর পড়তে পড়তেই ফের একবার অনুপ্রাণিত হন হং। নিজের বন্ধু পর্বতারোহী কিয়াং জির কাছে ফের একবার প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন তিনি। সেই থেকেই শুরু সফর, যা স্বপ্নের শিখরে পৌঁছায় ২৪ মে। ২৪ মে এভারেস্টের ৮৮৪৯ মিটার উচ্চতায় সফলভাবে পৌঁছানোর পর বৃহস্পতিবার বেস ক্যাম্পে ফিরে আসেন তিনি।

তার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ঝাং জানিয়েছেন, “আমি সবসময়ই ভীষণ ভয়ে ছিলাম, কারণ আমি দেখতে পাচ্ছিলাম না আমি কোন জায়গা দিয়ে হাঁটছি। সেন্টার অফ গ্রাভিটি খুঁজে পাচ্ছিলাম না, তাই মাঝে মাঝেই আমাকে পড়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু আমি সব সময় নিজেকে বলছিলাম, এটা হয়তো অনেক কঠিন হতে পারে। কিন্তু আমাকে এই প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতেই হবে। পর্বত আরোহণের অর্থই হলো, প্রতিবন্ধকতা এবং বিপদ। এটাই পর্বতারোহণের অন্যতম উপাদান।”

সফলভাবে এভারেস্ট জয়ের পর নিজের পরিবার ও চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়ে টুইট করেন হং। তিনি আরো বলেন, “আপনি পঙ্গু না স্বাভাবিক সেটা কোন বিষয় নয়। আপনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন কিম্বা আপনার হাত পা নেই। এটা কোন বিষয় নয়। আসল কথাগুলো আপনার মনোবল দৃঢ় কিনা।”

প্রতিবন্ধকতা যে আসলে কোন সমস্যা হয়ে উঠতে পারে না তা আরেকবার বুঝিয়ে দিলেন হং। আগামী দিনে হয়তো তিনি স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করলেন অনেক আরো পর্বতারোহীকে।

X