কোভিড পা থেকে কেড়ে নিয়েছে ফুটবল, ইটভাটায় কাজ করে পেট ভরছে জাতীয় দলে ডাক পাওয়া সংগীতা

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ করোনার আর লকডাউনের প্রভাব রীতিমতো ধ্বংস করে দিয়েছে অনেকের জীবনই। এক মহামারীর ধাক্কায় চলে কাজ হারিয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। শেষ হয়ে গেছে হাজার হাজার স্বপ্ন। একদিকে যেমন মৃত্যু মিছিল তেমনি অন্যদিকে রোজই ঘটছে কোন না কোন স্বপ্নের মৃত্যু। এবার এমনই এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী থাকলো ঝাড়খন্ড। লকডাউন সম্পূর্ণ বদলে দিলো ভারতীয় মহিলা অনূর্ধ্ব ১৭ দলে খেলা সঙ্গীতা সরেনের জীবন। অনূর্ধ্ব ১৭ দলের হয়ে থাইল্যান্ড এবং ভুটানেও খেলার সুযোগ হয়েছিল সঙ্গীতার। গত বছর এমনকি জাতীয় দলেও ডাক পান তিনি। ডাক আসে ঝাড়খণ্ডের সিনিয়র মহিলা দলেও।

কিন্তু করোনা এবং তারপর লকডাউন বদলে দিল সবকিছু। অভাব-অনটনের সংসার এক ভাই অন্ধ বাবা এবং মাকে নিয়ে সংসারই চলে না তো ফুটবল। তাই শেষ পর্যন্ত স্বপ্ন বুকে চেপে রেখে আপাতত ঝাড়খণ্ডের বাসমুদি গ্রামের একটি ইট ভাটায় ইট তোলার কাজে যোগ দিয়েছেন সঙ্গীতা সরেন। সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেনও। কিন্তু সেই সাহায্য আর শেষ পর্যন্ত এসে পৌঁছায়নি অজ গ্রামের এই স্বপ্ন দেখা মেয়েটার কাছে। স্বাভাবিকভাবেই সরকারের প্রতি একরাশ ক্ষোভ চাপা রয়েছে বুকেই। সঙ্গীতা বলেন, “প্রতিটা খেলোয়াড়ের ভাল খাবার এবং অনুশীলন প্রয়োজন। এখানকার সরকার সেই দিকে নজর দেয় না। সেই জন্যই আমার মতো ফুটবলার দিনমজুর হয়।”

ছোটবেলা থেকেই কেটেছে অভাব-অনটনে। তাই অভাবের সংসার নতুন কিছু নয় সঙ্গীতার জন্য। কিন্তু ফুটবল তো তার স্বপ্ন। আর স্বপ্নকে কিভাবে মরতে দেবেন তিনি? সঙ্গীতা বলেন, “আমার বাবা দেবু সরেন জন্মান্ধ। ভাই অবশ্য ঠিকাদারের হয়ে মজুরের কাজ করে। তবে সব দিন টাকা পায় না। তবে আমি আশা হারাচ্ছি না। আমাদের কাছেই ধানবাদের একটি স্টেডিয়াম রয়েছে, ওখানেই প্র্যাকটিস চালিয়ে যাচ্ছি। ফুটবল আমার নিশ্বাস প্রশ্বাসের মত, তাই শেষ শ্বাস নেওয়া অব্দি চালিয়ে যাবো এভাবেই।”

সঙ্গীতার মতোই কত প্রতিভাশালী খেলোয়াড় হয়তোবা শেষ হয়ে যাচ্ছে এভাবেই। স্বপ্ন বুকে চেপে মাথায় তুলে নিচ্ছে ইট। যা কাজে লাগবে অন্য কারোর স্বপ্নের ইমারত তৈরি করতে। কিন্তু তার নিজের স্বপ্নটা হয়তোবা মরে শেষ হয়ে যাচ্ছে অভাবে।।


Abhirup Das

সম্পর্কিত খবর