কাকতালীয় ঘটনা! ১৫০ বছর ধরে এই সম্প্রদায় জানে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার দিন! হয় বিশেষ উৎসবও

বাংলা হান্ট ডেস্ক: আর মাত্র কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা! তারপরেই মহাসমারোহে সম্পন্ন হতে চলেছে অযোধ্যার রাম মন্দিরে (Ayodhya Ram Mandir) রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠান। আগামীকাল অর্থাৎ, ২২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) সহ দেশ ও বিশ্বের একাধিক বিশেষ ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিতে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে। যদিও, ২২ জানুয়ারি প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানের আয়োজন ঘিরে বিতর্কও হয়েছিল। কিছুজন জানিয়েছিলেন যে, প্রাণপ্রতিষ্ঠার তারিখ কোনো শুভ সময় ছাড়াই স্থির করা হয়েছে। যাঁদের মধ্যে ছিলেন শঙ্করাচার্যও। কিন্তু আপনি কি জানেন যে, ভারতে এমন একটি সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন যাঁরা গত দেড় শতাব্দী ধরে এই তিথিতে ভগবান রামের প্রাণপ্রতিষ্ঠা উদযাপন করে আসছেন?

হ্যাঁ, অনেকেই এই বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না। মূলত, ছত্তিশগড়ের “রামনামী” সম্প্রদায়ের মানুষেরা বিগত দেড়শ বছর ধরে মহানদীর তীরে “বড়ে ভজন মেলা”-র আয়োজন করে আসছেন। প্রতি বছর শুক্লপক্ষের একাদশী ও ত্রয়োদশীর মধ্যে এই মেলার আয়োজন করা হয়। এমতাবস্থায়, এবারের আয়োজন হচ্ছে ২১ থেকে ২৩ জানুয়ারির মধ্যে। তিন দিনব্যাপী এই মেলার দ্বিতীয় দিনে অর্থাৎ শুক্লপক্ষের দ্বাদশীতে রামনামী সম্প্রদায়ের মানুষেরা ভগবান রামকে স্মরণ করে একটি মহোৎসব পালন করেন। ওই সময়ে রামায়ণ পাঠ করার পাশাপাশি সমগ্র পরিবেশ রামময় ওঠে। আর এটিই হল তাঁদের জন্য ভগবান রামের “প্রাণপ্রতিষ্ঠা”-র একটি সুযোগ।

এদিকে, এই বিষয়টি অত্যন্ত কাকতালীয় যে, অযোধ্যাতেও, রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা শুক্লপক্ষের দ্বাদশী (২২ জানুয়ারি ২০২৪) তিথিতে সংঘটিত হচ্ছে। যেখানে, রামনামী সম্প্রদায় কয়েক দশক ধরে এই উৎসব উদযাপন করে আসছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ১৯৮০ সালের দিকে ছত্তিশগড়ের একটি ছোট গ্রাম জঞ্জগির-চাম্পায় দলিত সম্প্রদায়ের অন্তর্গত পরশুরাম দ্বারা রামনামী সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কথিত আছে, পরশুরাম চর্মরোগে ভুগছিলেন। তিনি রামনামী সাধু রামদেবের সাথে দেখা করেন এবং তারপর তাঁর রোগ নিরাময় হয়। এদিকে, অসুস্থতা নিরাময়ের পরে, পরশুরামের বুকে রাম নামের উল্কি বা ট্যাটু পরিলক্ষিত হয়।

For 150 years this community knows the day of Ramlala's Pran Patishtha

এতে প্রভাবিত হয়ে গ্রামের সব মানুষ তাঁদের শরীরে রামের নামের ট্যাটু করিয়ে সকাল-সন্ধ্যা রামের নাম জপতে থাকেন। এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা বিছানার চাদর, তোয়ালে, জামাকাপড়, কভার এবং বিছানার মতো দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসগুলিতেও রাম নামের ট্যাটু করে তা ব্যবহার করেন। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, রামনামী সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।

আরও পড়ুন: লঞ্চ হওয়ার সাথে সাথেই সস্তা হল প্রিমিয়াম ফোন! Samsung Galaxy S24-এ মিলছে বাম্পার ডিসকাউন্ট

বর্তমানে, ছত্তিশগড়ের জাঞ্জগির, শক্তি, সারানগড়, বালোদাবাজার, বিলাসপুরের মতো জায়গায় রামনামী সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন। তাঁদের সংখ্যা ১,০০০ জনের বেশি বলে জানা গেলেও প্রকৃত সংখ্যা জানা যায়নি। রামনামী সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা সাধু-সন্তদের মতো বসবাস করেন। তাঁরা নিরামিষ খাবার খান এবং মদ্যপান থেকে দূরে থাকেন। রামনামী সমাজের প্রধান পাঁচটি প্রতীক রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-ভজন খাম্ব বা জৈতখাম্ব, শরীরে রামের নামের উল্কি বা ট্যাটু আঁকা, কালো রঙে রাম-রাম লেখা সাদা পোশাক পরা, ঘুংরু বাজানোর সময় ভজন গাওয়া এবং ময়ূরের পালকের তৈরি মুকুট পরা।

আরও পড়ুন: এবার সস্তায় মিলবে আটা-ডাল-পেঁয়াজ! এই ব্র্যান্ডের ফ্র্যাঞ্চাইজি বন্টনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার

উল্লেখ্য যে, ১৯৬৭ সালে ছত্তিশগড়ের সারানগড় থেকে কংগ্রেসের টিকিটে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন রামনামী সম্প্রদায় থেকে আসা কুঞ্জরাম। পাশাপাশি, তিনি নির্বাচনে জয়লাভও করেন। তিনি জনসংঘ প্রার্থী কাঁঠারামকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেছিলেন।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর