বাংলা হান্ট ডেস্ক: আমাদের চারপাশে এমন কিছু মানুষ থাকেন যাঁরা তাঁদের একাধিক মহতী কাজের মাধ্যমে সকলের মন জয় করে নেন। পাশাপাশি, বর্তমানের স্বার্থান্বেষী দুনিয়ায় তাঁরা তৈরি করে ফেলেন একের পর এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্তও। যা অনুপ্রাণিত করে সবাইকেই। এমতাবস্থায়, বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা এমন এক ব্যক্তির প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব যাঁর কর্মকান্ডকে কুর্ণিশ জানাতে বাধ্য হবেন আপনিও।
মূলত, আজ আমরা নাগেশু পাত্র (Nageshu Patro)-র সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো। যাঁকে রাতের দিকে ওড়িশার (Odisha) গঞ্জামের বেরহামপুর স্টেশনে ভারী ভারী মালপত্র বইতে দেখা যায়। যদিও, দিনের বেলায় ৩১ বছর বয়সী নাগেশু যে কাজটি করেন সেটি জানলে নিঃসন্দেহে চমকে উঠবেন। জানা গিয়েছে, একটি বেসরকারি কলেজে গেস্ট লেকচারার হিসেবে পাঠদান করেন নাগেশু।
যদিও, রাতের বেলায় তিনি করেন কুলির কাজ। এমতাবস্থায়, নাগেশুর এই দুই ভিন্নধর্মী কাজ নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে। তবে, এর পেছনে রয়েছে এক চমকপ্রদ কারণ। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দরিদ্র পড়ুয়াদের জন্য একটি কোচিং সেন্টার খুলেছেন নাগেশু। একটা সময়ে ওই কোচিং সেন্টারে তিনি নিজে পড়ালেও ক্রমশ বৃদ্ধি পায় পড়ুয়াদের সংখ্যা। যার জেরে বাড়াতে হয় শিক্ষকদেরও।
বর্তমানে ওই কোচিং সেন্টারে রয়েছেন ৪ জন শিক্ষক। আর তাঁদেরকে বেতন দিতেই নাগেশু রেল স্টেশনে কুলির কাজ বেছে নিয়েছেন। এমতাবস্থায়, তাঁর দৈনিক রুটিন অনুযায়ী তাঁকে সবসময়ই ব্যস্ত থাকতে হয়। সকালে কলেজে পড়ুয়াদের পড়ানোর পর তিনি চলে আসেন তাঁর কোচিং সেন্টারে। সেখানে কিছুটা সময় পড়িয়ে সন্ধ্যে নাগাদ সোজা নাগেশু পৌঁছে যান বেরহামপুর স্টেশনে।
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, ছোটবেলা থেকেই দারিদ্রের সাথে লড়াই করে আসছেন নাগেশু। এমনকি, অর্থের অভাবে ২০০৬ সালে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। নিজে এই পরিস্থিতির শিকার হয়ে নাগেশু তখনই মনে মনে ঠিক করে ফেলেন যে সুযোগ পেলেই গরিব ছেলেমেয়েদের পড়াবেন তিনি। এদিকে, ২০১২ সালে তিনি করেশপনডেন্সে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ধীরে ধীরে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের গন্ডিও পেরিয়ে যান নাগেশু।
এদিকে, করোনার সময়ে ওই কোচিং সেন্টারটি শুরু করেন তিনি। সেখানে তিনি পড়াতে শুরু করেন অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের। একটা সময়ে পড়ুয়াদের চাপ বাড়লে নাগেশু ৪ জন শিক্ষককে ওই কোচিং সেন্টারে পড়ানোর জন্য নিয়োগ করেন। এদিকে, জানা গিয়েছে, কুলির কাজ করে প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা উপার্জন করেন নাগেশু। যা দিয়ে তিনি শিক্ষকদের বেতন দেন। এদিকে, গেস্ট লেকচারার হিসেবে প্রতি মাসে নাগেশু পান ৮ হাজার টাকা। ওই টাকা তিনি পুরোটাই পাঠিয়ে দেন তাঁর বাবা-মাকে।