বাংলাহান্ট ডেস্ক : এতদিন বহু বাংলাদেশি নাগরিকের কাছে চিকিৎসার জন্য অন্যতম পছন্দের জায়গা ছিল কলকাতা। প্রতিবছর চিকিৎসা সংক্রান্ত পরিষেবা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ (Bangladesh) থেকে অসংখ্য মানুষ আসতেন কলকাতায়। তবে এবার সেই চিত্রই কি উল্টে যেতে চলেছে? কলকাতার বদলে বাংলাদেশিদের ‘মেডিকেল ডেস্টিনেশন’ হতে চলেছে চিন (China)?
চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশের (Bangladesh) নতুন পরিকল্পনা
সূত্রের খবর, সম্প্রতি বাংলাদেশের ইউনূস সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা চিনের বিদেশ মন্ত্রীর সাথে একটি বৈঠকে বাংলাদেশিদের উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার জন্য কলকাতার (Kolkata) বিকল্প ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ জানান। জানা গেছে, বাংলাদেশের (Bangladesh) এই অনুরোধের পর চিন প্রশাসন বাংলাদেশের রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করে দিয়েছে কুনমিং শহরের ৩-৪টি হাসপাতাল।
তাহলে কি অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশিদের কাছে কলকাতার বিকল্প হয়ে উঠতে চলেছে চিনের কুনমিং? এই ভাবনায় এখন মগ্ন কলকাতার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশি রোগীদের কারণেই ফুলেফেঁপে উঠেছে কলকাতার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের ব্যবসা-বাণিজ্য। হাসপাতালের পাশাপাশি কলকাতার বিভিন্ন হোটেল, লজ, গেস্ট হাউজের ব্যবসাও প্রসারিত হয়েছে বাংলাদেশি রোগীদের ‘আশীর্বাদে।’
আরোও পড়ুন : কেন্দ্র-রাজ্য উদ্যোগী একসাথে! অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উপর নির্ভর করেই বাড়বে চিংড়ির রপ্তানি
চিনের কারণে তাহলে এবার কি কলকাতার ‘স্বাস্থ্য পর্যটন’ ক্ষতির সম্মুখীন হতে চলেছে? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী অবশ্য এমনটা মনে করতে নারাজ। তাঁর মতে, ‘‘বাংলাদেশিদের চিকিৎসার জন্য কোনও শহরই কলকাতার বিকল্প হয়ে উঠতে পারবে না। কলকাতা তাঁদের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক শহর বলেই বাংলাদেশিরা এখানে আসেন।’’
আরোও পড়ুন : দ্রুত শুনানি শেষ করতে হবে! বেআইনি নির্মাণ রুখতে বিরাট পদক্ষেপ! কড়া নির্দেশ দিলেন মেয়র
চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী প্রেক্ষাপট বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘‘ভাষা, খাদ্যাভাস, সংস্কৃতি— সব দিক দিয়ে কলকাতা বাংলাদেশিদের কাছে সুবিধাজনক। খাদ্যাভ্যাস, ভাষা ইত্যাদি প্রায় হুবহু মেলে বলেই চিকিৎসার জন্য অনেক দিন থাকতে হলেও বাংলাদেশিদের কোনও অসুবিধা হয় না। বাংলাভাষী চিকিৎসকদের নিজের সমস্যা বোঝাতেও অসুবিধা হয় না। কুনমিংয়ে চিকিৎসা করাতে গেলে সে সব হবে কি?’’
আরেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গৌতম খাস্তগির অবশ্য স্বীকার করে নিচ্ছেন বাংলাদেশের (Bangladesh) বর্তমান পরিস্থিতির আঁচ এসে লেগেছে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ক্ষেত্রেও। ‘ট্যুরিস্ট ভিসা’ না মেলায় কলকাতায় বাংলাদেশি রোগীর পরিমাণ কমে গিয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ। চিকিৎসক গৌতম খাস্তগির বলছেন, ‘‘বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা আবার আগের জায়গায় ফিরতে কিছুটা সময় লাগবে।”
তবে কলকাতার বিকল্প হিসাবে কুনমিং শহর যে বাংলাদেশিদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এমনটা মনে করছেন না চিকিৎসক গৌতম খাস্তগিরও। তাঁর মতে, ‘‘বাংলাদেশি রোগীরা চিনের কুনমিং সিটিতে গিয়ে চিকিৎসা করাবেন, এটা বাস্তবসম্মত নয়। কলকাতায় যতটা সহজে সব হয়, কুনমিংয়ে সেই সুবিধা মিলবে না। ফলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলো তাদের বাংলাদেশি বাজার যে আবার ফিরে পাবে, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।’’